‘তিনদিন থাইক্যা পানি আইছে। ঘরের মধ্যে একহাটু পানি। বাঁশের খুঁটি নরম অইছে। কহন যে পইড়া যায়। এর লাইগা আইত অইলে রাস্তা গিয়া থাহি। আন্না করার কোনো জোগাড় নাই। তাই পোলাপান লয়ে না খাইয়ে দিন কাটাইতাছি।’ কথাগুলো বলছেন শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার তাতীহাটি ইউনিয়নের ভটপুর গ্রামের মৃত নারায়ন রবিদাসের বিধবা স্ত্রী ফুলমতি (৬০)। তার ২ ছেলে। এক ছেলে দীর্ঘদিন যাবত অসুস্থ্য। আরেক ছেলে নরসুন্দরের কাজ করে। ওই আয়ে চলে ফুলমতি, তার দুই ছেলে আর পুত্রবধূসহ নাতী নাতনীর সংসার। টানা বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলের কারণে প্রায় এক সপ্তাহ যাবত কাজে যেতে পারে না। ফলে না খেয়ে চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন এই পরিবারটি। ফুলমতির মতো তার প্রতিবেশী মৃত জিয়াউল হকের তালাকপ্রাপ্ত মেয়ে রোকসানা খাতুন জানান, তার দুই ছেলে এক মেয়ে। মানষের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাতেন। ঢলের পানিতে এখন কোথাও যেতে পারছেন না। তিনি বলেন, ছোড ছোড পোলাপান। স্বামী তালাক দিয়ে চলে গেছে। অহন পোলাপানগড়ে লয়ে মেলা কষ্টে আছি। পানিবন্দ্বী এসব নারীর মতো শত শত নারী পানিবন্দ্বীর কারণে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। শনিবার বিকালে পাহাড়ি ঢলের চিত্র দেখতে গেলে পানিবন্দী লোকজন সহ স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে ওঠে আসে এমন তথ্য।
স্থানীয়রা জানান, ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চলের দেড় শতাধিক গ্রাম। ঢলের পানিতে ভেসে গেছে শতশত মৎস্য খামারের মাছ। পানিতে তলিয়ে গেছে হাজার হাজার হেক্টর জমির আমন ধান ক্ষেত। স্থানীয় সড়কগুলো ডুবে যাওয়ায় বন্ধ রয়েছে যানবাহন চলাচল। প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নালিতাবাড়ীর ভোগাই, চেল্লাখালী, ঝিনাইগাতীর মহারশি ও শ্রীবরদীর সোমেশ্বরী নদীর বেশ কিছু বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল। গত দু”দিন থেকে পানিবন্দি দেড় শতাধিক গ্রামের প্রায় অর্ধ লাখ মানুষ মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন।
জেলা কৃষি ও প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, অন্তত ১৫ হাজার হেক্টর জমির আমন ধান ক্ষেত সহ সবজির ক্ষেত পানিতে ডুবে আছে। ভেসে গেছে পাঁচ শতাধিক পোল্ট্রি খামারের হাঁস মুরগি।
এদিকে ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম জানিয়েছেন, বন্যা দুর্গত এলাকার ৮শ পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। বন্যা কবলিতদের সহায়তায় সেনা বাহিনী ও প্রশাসনের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবীরাও কাজ করছেন।
তবে ফুলমতি ও রোকসানার মতো অনেকের অভিযোগ, এখনো তারা কোনো ত্রাণ সহায়তা পায়নি। ফলে না খেয়েই থাকতে হচ্ছে ওদের মতো হতদরিদ্র শতশত পরিবারের।