প্রায় ১০ দিন যাবত সকল ধরনের নাগরিক সেবা বন্ধ থাকায় শেরপুরের নালিতাবাড়ী পৌরসভায় চরম স্থবিরতা বিরাজ করছে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর পৌরসভা কার্যালয়ে ভাঙচুর, লুট ও অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। এতে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে পৌরসভা কার্যালয়। লুট হয়ে গেছে পৌরসভার প্রায় সকল মালামাল।

এদিকে ঘটনার পর থেকেই কার্যালয়ে আসছেন না মেয়রসহ কাউন্সিলর ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর কেউ কেউ। এতে বন্ধ রয়েছে নাগরিক সেবা। দিনভিত্তিক কাজ করা তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির প্রায় ৩৬ জন কর্মচারীর মজুরি আটকে রয়েছে।
এ ছাড়াও অগ্নিসংযোগ ভাঙচুর ও লুটের ঘটনায় জন্মসনদ, মৃত্যুনিবন্ধন, নাগরিক সনদ, ট্রেড লাইসেন্স,টিকা কার্যক্রমসহ ১২ টি শাখার মধ্যে ১০ টি শাখার নাগরিক সেবা বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে শহরের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ। তবে আংশিকভাবে সচল রয়েছে শুধুমাত্র পানি ও বিদ্যুৎ শাখার কার্যক্রম। বন্ধ রয়েছে পৌরশহরের ময়লা-আবর্জনা সরিয়ে নেওয়ার কাজ। এতে ভোগান্তিতে পৌরবাসী।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর পৌরসভা কার্যালয়ে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে দুর্বৃত্তরা। এতে তিনতলা বিশিষ্ট পৌরসভা কার্যালয়ের ১২ টি শাখার প্রায় সকল মালামাল লুট করে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ চালায় দুর্বৃত্তরা। এতে প্রয়োজনীয় প্রায় সকল কাগজপত্র, কম্পিউটার, যন্ত্রাংশসহ প্রায় সকল কিছু লুট হয় এবং পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এসময় পৌরসভার ময়লা আবর্জনা পরিবহনে ব্যবহৃত তিনটি ড্রাম ট্রাক পুড়ে যায়। এতে পৌরসভা কার্যালয়ে প্রায় ৫ কোটি ২৩ লাখ ৯২ হাজার ৯০০ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানান কর্মকর্তারা।
এদিকে ঘটনার পর থেকেই আত্মগোপনে আছেন পৌরমেয়র আবু বক্কর সিদ্দিক। তিনি নিজের বাড়িতেও নেই বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। এছাড়াও ৫ আগস্ট বিকেলে মেয়রসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতার অফিস ও বাসাবাড়িতে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে দুর্বৃত্তরা।
বুধবার দুপুরে নালিতাবাড়ী পৌরসভা কার্যালয়ে গিয়ে সুনসান দেখা যায়। কার্যালয় চত্বরে পুড়ে যাওয়া তিনটি ড্রাম ট্রাক পড়ে আছে। পৌরভবনের নিচ তলায় কয়েকজন কর্মকর্তা বসে গল্প করছেন। পাশেই একজন পাহারাদার বসে আছেন। এরই মাঝে লুট হওয়া একটি কম্পিউটার টেবিল নিয়ে আসেন এক ভ্যানচালক। কার্যালয়ের প্রতিটি শাখার কক্ষে ভাঙা কাচের টুকরো ও ও ছাইয়ের স্তূপ দেখা যায়। কোন কোন কক্ষে কাগজ পত্র ছড়িয়ে আছে এবং ভাঙা চেয়ার টেবিল পড়ে থাকতে দেখা যায়। একটি কক্ষে বসে কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী পুণরায় কার্যক্রম চালু করতে মালামালের তালিকা করছেন এবং পাশেই আরেকটি টেবিলে কয়েকজন কাউন্সিলর গল্প করে অলস সময় পার করছেন।
পৌরসভার সহকারী কর আদায়কারী জমির উদ্দীন বলেন, পৌরসভার ১২ টি শাখার কোন কক্ষেই আসবাবপত্র ও যন্ত্রাংশ অক্ষত নেই। অধিকাংশ মালামাল লুট হয়ে গেছে। অবশিষ্ট সকল কিছুই আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে। তাই আমরা নাগরিক সেবা দিতে পারছি না।
জানতে চাইলে পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হজ বলেন, আমরা ডিসি স্যারের কাছে গিয়েছিলাম। স্যার বলেছেন পুলিশ এসে কার্যালয় পরিদর্শনের পর যেনো আমরা ভবন পরিষ্কার করে কার্যক্রম শুরু করি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ রানা বলেন, আমি পৌরসভা পরিদর্শন করেছি। পৌরসভা থেকে লুট হওয়া মালামাল ফিরিয়ে দিতে মাইকিং করা হয়েছে। অনেকেই ফিরিয়েও দিচ্ছেন। তবে নাগরিক সেবা সচল রাখতে যা যা প্রয়োজন তা ক্রয় করে কার্যক্রম শুরু করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে বিভিন্ন খাত থেকে তা সমন্বয় করা হবে।
