(এ সময়ের শক্তিমান কবি-ছড়াকার, রম্যলেখক ও অনুবাদক মোস্তাফিজুল হক। লিখছেন নিয়মিত। ইতোমধ্যে তার প্রকাশিত হয়েছে বেশ কয়েকটি গ্রন্থ।)

১. বৃষ্টি নামের মেয়ে
মেঘ-মেয়েরা স্বর্গ থেকে নামল নূপুর পরে,
জুড়ল ওরা সেই ওড়িশি কিন্নর রাগ-স্বরে।
নাচতে গিয়ে কাঁদল ওরা কেন এমন করে?
কাঁদল ওরা অনেক বেশি সারাটাদিন ধরে!
মেঘমেয়েরা বৃষ্টির নামে ক্রন্দসী ছয়-হুরি,
ভাইটি ওদের বাদল নামে নাচল মণিপুরী।
পথ ডুবাল, ঘাট ডুবাল, ভরল পুকুরখানি,
কান্না থেকে জল গড়িয়ে বাড়ল নদীর পানি।
জলের তোড়ে পথ হারাল মুগ্ধ মাছের পোনা,
কান্না যেন বাঁশির মতো সেই হ্যামিলন শোনা।

থামছে না তাও রোদনভরা নৃত্য গভীর রাতে,
বান ডেকে কি বন্যা তবে আনার অপেক্ষাতে?
মেঘ-মেয়েরা প্রবল রাগে বজ্র-বিষাণ ফোঁকে,
ক্ষুব্ধ চোখে অগ্নিবাণে সব পুড়ে কোন শোকে?
সমস্ত-রাত অট্টমনাচ; ঘুম আসে কার চোখে?
স্বপ্নমদির দুচোখ তাকে যায় নিয়ে ভিন্ লোকে।
কান্না রেখে এবার তোরা যা ফিরে আজ ঘরে,
কান্না থেকে কত্তো মানুষ ভুগছে বানের জ্বরে!
থাম না এবার মেঘের মাদল বৃষ্টি নামের মেয়ে!
সত্রীয়ানাচ থামা বাদল; যা দূরে খুব ধেয়ে।
২. রাজার টিয়ে
নতুন কাগুজে ছেপে রাখা নোট হয়ে গেছে জাল,
রাজসিক বোধে কড়ির কাহন সবলের ঢাল।
পুষে রাখা টিয়ে হয়েছে রাজার কথাবলা পাখি,
সকালে-বিকালে রাজার দু’কানে সুর মাখামাখি।
কোকিলের গান আর যত সুর হয়েছে বমাল।
রাজার আসনে নতুন রাজার আগমন ঘটে,
পুষে রাখা টিয়ে আগেকার মতো থেকে যায় বটে,
সুরের পাখিকে বাধা দিয়ে টিয়ে লুটে খায় ঝাল।
স্বরতন্ত্রীহীন কোকিল কোথায় গায় প্রিয় সুরে?
রাজার টিয়েরা সুরের সারথি; কলরব জুড়ে।
সকল জ্ঞানের সামর্থ্য প্রতীক, টিয়ে ঝাড়ে জ্বাল।
