সাপ লম্বাটে, পাবিহীন, মাংসাশী সরীসৃপ প্রাণী। কচ্ছপ বা গিরগিটি যে সরীসৃপ শ্রেণির সাপও তাই। সাপের আদি পুরুষের আবির্ভাব ঘটে ডাইনোসর যুগে। এখন এই শ্রেণিটি এন্টার্কটিকা বাদে পৃথিবীর সব অঞ্চলে পাওয়া যায়। পৃথিবীতে বিভিন্ন প্রজাতির সাপ রয়েছে। আমরা যে সাপ দেখলেই মারতে উদ্যত হই, সত্যিকার অর্থে এই বন্যপ্রাণীটি কোন ক্ষতি করে না।
সাধারণত অধিকাংশ বিষাক্ত সাপ উজ্জ্বল বর্ণের হয়। এদের স্বতন্ত্র মাথা থাকে। দেখতে ত্রিকোণাকার। পার্শ্বীয় অংশ প্রশস্ত। বিষহীন সাপ তেমন উজ্জ্বল হয় না। সাধারণত এদের মাথা লম্বাটে ও সংকীর্ণ হয়। বিষহীন সাপের বিষদাঁত থাকে না সাধারণত। তবে কিছু বিষহীন সাপের থাকে। বিষধর সাপের চোখের মণি দেখতে ডিম্বাকার আর বিষহীন সাপের চোখের মণি গোলাকার হয়। বিষধর সাপের মাথা তিন কোণা অর্থাৎ ত্রিভুজাকার।
একটি তথ্য মতে, বাংলাদেশে ১০০ প্রজাতির মত সাপ রয়েছে। এইসব সাপের মধ্যে ৩৭ প্রজাতির সাপ বিষাক্ত। এসবের মধ্যে ১৬ প্রজাতির সাপ সমুদ্রে বাস করে, তিন প্রজাতির কোবরা , ৫ প্রজাতির কেউটে, ২ প্রজাতির কোরালসাপ, ৬ প্রজাতির সবুজ বোড়া, এক প্রজাতির চন্দ্রবোড়া । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী প্রতি বছর বিশ্বে ৫৪ লাখ মানুষ সর্প দংশনের শিকার হয়। এর মধ্যে ১ লাখ মানুষ মারা যায়। প্রায় ৪ লাখ মানুষ এর কামড়ে পঙ্গুত্ব বরণ করে। সংস্থাটির মতে প্রতি বছর বাংলাদেশে ৫ লাখ ৮০ হাজার মানুষ সর্পদংশনের শিকার হন এবং প্রায় ৬ হাজার মানুষ মারা যান। ভারতে ৩০০ প্রজাতির সাপ রয়েছে যার মধ্যে ৬০ প্রজাতির সাপ বিষাক্ত। সেখানে প্রতিবছর ৬৪ হাজার মারা যায় সর্পদংশনে। এই সংখ্যা বিশ্বের সর্প দংশনে মৃত্যুর ৮০ ভাগেরও বেশি। তবে অনেক দেশে বিষধর সাপ থাকলেও মৃত্যহার খুবই কম। যেমন অস্ট্রেলিয়াতে ১৭২ প্রজাতির সাপ রয়েছে তার মধ্যে ১০০ প্রজাতি বিষাক্ত। এ সত্ত্বেও প্রতি বছর এখানে মাত্র ৩ হাজার সর্পদংশনের ঘটনা ঘটে। এখানে বছরে সর্পদংশনে মৃত্যুর হার মাত্র ২ %।
প্রাকৃতিক পরিবেশ ও খাদ্য জালে সাপের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। শিকার প্রজাতি না থাকলে অন্যান্য প্রজাতি অনিয়ন্ত্রিত হারে বেড়ে যেত। আবার যারা সাপ খায় তাদের খাদ্য খুঁজতে হত।
সম্প্রতি চন্দ্রবোড়া বা রাসেলস ভাইপার নামের একটি সাপের বিস্তারকে ঘিরে জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেক জায়গায় নির্বিচারে যে কোন সাপ হত্যা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ বন বিভাগ এ নিয়ে একটি বিবৃতিও দিয়েছে। তাতে বলা আছে – শঙ্খচূড়, খইয়া গোখুরা, কালাচ প্রভৃতি সাপ চন্দ্রবোড়াসহ অন্যান্য সাপ খেয়ে থাকে। এইভাবে যে কোন সাপ মারা হলে চন্দ্রবোড়ার বিস্তার আরও ঘটবে।
সত্যিকার অর্থে সাপ মূলত মানুষকে এড়িয়ে চলে। মানুষকে সাপ তখনই কামড়ায় যখন সে ভীত, আতঙ্কগ্রস্ত ও আক্রমণের শিকার হয়। অধিকাংশ সাপ মানুষের কোন ক্ষতি করে না। কিছু সাপ আক্রমণের শিকার হলে তাদের লেজ নাড়িয়ে ভয় দেখায়। এটা দেখে অনেক মানুষ ভীত হয়ে সাপ মেরে ফেলে। বাংলাদেশে চন্দ্রবোড়া সাপ নিয়ে যা ঘটছে তা সত্যিদঃখজনক। এই মুহূর্তে নির্বিচারে সাপ হত্যা বন্ধ করতে হবে। কোনটি বিষধর কোনটি বিষধর নয়, সে সম্পর্কে জানতে হবে। এজন্যে সারাদেশে সচেতনতা মূলক কাজ বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন সরকারি – বেসরকারি সংস্থার এগিয়ে আসা জরুরি।
লেখক: শিক্ষক ও গবেষক, শেরপুর।