কাঁঠাল:
গ্রীষ্মের অন্যতম আকর্ষণীয় ফল হলো কাঁঠাল। এটি স্বাদ এবং গন্ধের জন্য অনেকের কাছেই প্রিয়। শুধু কাঁঠালই নয়, কাঁঠালের বিচিও খাওয়া যায়। এটিও আমাদের জন্য উপকারী। সুস্বাদু ও সুমিষ্ট এই ফল নানাভাবে আমাদের উপকার করে থাকে। তবে কাঁঠালের উপকারিতা সম্পর্কে আমরা খুব একটা জানি না। রসালো এই ফলে কী উপকারিতা লুকিয়ে আছে, চলুন জেনে নেওয়া যাক-

ডায়াবেটিস বেড়ে যাওয়ার ভয় নেই: কাঁঠাল বেশ মিষ্টি স্বাদের হয়। অনেকের ধারণা মিষ্টি স্বাদের এই ফল খেলে ডায়াবেটিস বেড়ে যেতে পারে। তবে চিকিৎসকরা বলছেন ভিন্ন কথা। কাঁঠাল খেলে ডায়াবেটিস বেড়ে যাওয়ার তেমন সম্ভাবনা নেই। তবে অবশ্যই পরিমিত খেতে হবে। কাঁঠাল শরীরে শক্তি জোগাতে সাহায্য করবে। তাই ডায়াবেটিস ভয় এড়িয়ে কাঁঠাল খেতে পারেন নিশ্চিন্তে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে: বর্তমানে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো আমাদের অন্যতম চ্যালেঞ্জ। এই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে কাজ করতে পারে কাঁঠাল। এটি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। কাঁঠালে আছে প্রচুর ভিটামিন সি। তাই কাঁঠাল খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে দ্রুত। এটি ক্যান্সার ও টিউমারের বিরুদ্ধেও প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
বাংলাদেশ থেকে আম, কাঁঠাল, আলু নিতে আগ্রহী চীন

পাইলস ও ক্যান্সার দূরে রাখে: পাইলসের কষ্ট ভুক্তভোগী মাত্রই জানেন। আপনাকে এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে পারে কাঁঠাল। নিয়মিত কাঁঠাল খেলে দূর হয় কোষ্ঠকাঠিন্য। ফলে পাইলস বাড়তে পারে না। সেই সঙ্গে কাঁঠাল খেলে কমে কোলন ক্যান্সারের মতো মরণঘাতি রোগের ভয়।
লোহিত রক্তকণিকা বাড়ায়: লোহিত রক্তকণিকার অভাবে দেখা দিতে পারে রক্তস্বল্পতা। এই রোগের হাত ধরে দেখা দিতে পারে আরও অনেক রোগ। সুমিষ্ট ফল কাঁঠালে থাকে আয়রন। এই উপাদান রক্তে লোহিত রক্তকণিকার পরিমাণ বাড়ায়। তাই যাদের রক্তস্বল্পতা রয়েছে, তাদের জন্য নিয়মিত কাঁঠাল খাওয়া উপকারী।
কাঁচা কাঁঠাল খাওয়ার উপকারিতা
কোলেস্টরলমুক্ত: কাঁঠালে আছে ভিটামিন বি৬। উপকারী এই উপাদান ছাড়াও এতে পাওয়া যায় প্রচুর ক্যালোরি। তবে এতে কোনো রকম কোলেস্টেরল নেই। তাই কাঁঠাল খেলে উপকার মিলবে সহজেই।
ত্বক উজ্জ্বল করে: ত্বক উজ্জ্বল রাখতে চাইলে কেবল বাইরে থেকে যত্ন নেওয়াই যথেষ্ট নয়। বরং খেয়াল রাখতে হয় খাবারের দিকেও। নিয়মিত কাঁঠাল খেলে ত্বক দ্রুত উজ্জ্বল হবে। কারণ এই ফলে আছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। সেই সঙ্গে কমায় বলিরেখাও।
চোখ ভালো রাখে: চোখের যত্ন নেওয়া জরুরি। কারণ আমাদের অবহেলা বা অযত্নের কারণে কমতে থাকে দৃষ্টিশক্তি। আপনার দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে কাজ করবে কাঁঠাল। এই ফলে আছে প্রচুর ভিটামিন এ এবং বিটা ক্যারোটিন। চোখ ভালো রাখার জন্য এই দুই উপাদান অপরিহার্য।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে: রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য খাবারের ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে। কিছু খাবার যোগ-বিয়োগ করতে হবে খাবারের তালিকা থেকে। এক্ষেত্রে কাঁঠাল রাখতে পারেন খাবারের তালিকায়। এই ফলে থাকে সোডিয়াম ও পটাসিয়াম যা শরীরের শরীরের ইলেকট্রোলাইট ব্যালেন্সকে ঠিক রাখে। ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং সেইসঙ্গে ভালো থাকে হার্টও।
হজমশক্তি বাড়ায়: আমাদের শরীর সুস্থ রাখার জন্য হজমশক্তি ভালো থাকা জরুরি। কারণ হজম কোনো কারণে বিঘ্নিত হলে তার প্রভাব পড়ে আমাদের শরীরে। কাঁঠালে আছে পর্যাপ্ত ফাইবার। তাই এই ফল খেলে হজমশক্তি ভালো থাকে এবং সহজেই পেট পরিষ্কার হয়।
হাড় ভালো রাখ: হাড়ের ক্ষয় রোগ বা ভঙুরতা একটি ভয়ানক অসুখ। এক্ষেত্রে আপনাকে বাইরে থেকে দেখতে স্বাভাবিক মনে হলেও ভেতরে আপনি একেবারে জীর্ণ হয়ে যাবেন। হাড় ভালো রাখতে চাইলে খাবারের তালিকায় রাখতে হবে কাঁঠাল। কারণ ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ এই ফল আপনার হাড় শক্ত রাখতে কাজ করবে।
আম:
আম সব বয়সীর কাছেই এটি পছন্দের ফল। সুমিষ্ট ফল আমের আছে অসংখ্য উপকারিতা। এটি খাওয়া যায় নানাভাবে। আম কাঁচা অবস্থায় আচার, চাটনি, জুস ইত্যাদি তৈরি করে খাওয়া যায়। পাকা আম এমনি খেতেই সুস্বাদু। তবে এটি দিয়েও তৈরি করা যায় আমসত্ত, জুস, পুডিং, কেক, কাস্টার্ড, সালাদ ইত্যাদি মজার খাবার। জেনে নিন আম খাওয়ার পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা-
আমের যত পুষ্টিগুণ: পুষ্টি উপাদানে ভরপুর উপকারী ফল আম। এতে আছে প্রচুর খনিজ লবণ এবং বিভিন্ন ভিটামিন। ভিটামিন এ, ভিটামিন সি ও ভিটামিন বি৬ রয়েছে আমে। এছাড়া আছে অ্যামাইনো এ্যাসিড, পটাসিয়াম ও কপার। আমে থাকা বিটা ক্যারোটিন, লুশিয়েন জিলাইক এ্যাসিড, আলফা ক্যারোটিন, পলি পিথানল কিউরেচিন কাম্ফারল, ক্যফিক এ্যাসিড ইত্যাদিও স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
স্মৃতিশক্তি বাড়ায়: শিশুকে আম খেতে দেওয়া উচিত কারণ এটি স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। আমে আছে গ্লুটামিক অ্যাসিড যা মস্তিষ্কের কোষ উজ্জীবিত করে থাকে। ফলে বাড়ে মনোযোগ। তাই মস্তিষ্কের চাপ কমাতে আম খাওয়া যেতে পারে।
হৃদরোগ দূরে রাখে: বর্তমানে অন্যতম ভয়ের কারণ হচ্ছে হৃদরোগ। এই রোগ থেকে বাঁচতে আম খান। কারণ এতে আছে প্রচুর বিটা ক্যারোটিন। এটি ভিটামিন এ এর উৎস। আম খেলে হৃদরোগ, ভুলে যাওয়ার সমস্যা, আথ্রাইটিসের মতো রোগ দূরে থাকে।
মিনারেলের ঘাটতি দূর করে: শরীরে মিনারেলের ঘাটতি দেখা দিলে নানা অসুখ বাসা বাঁধতে পারে। আম খেলে এই ঘাটতি অনেকটাই পূরণ হয়। কারণ আমে আছে প্রচুর পটাশিয়াম। যেকোনো পরিশ্রমের পর আম খেলে পটাশিয়াম ঘাটতি অনেকটাই পূরণ হয়। শরীর থেকে বের হয়ে যাওয়া প্রয়োজনীয় লবণের ঘাটতিও পূরণ করে আম।
আম নিয়ে সক্রিয় সিন্ডিকেট, দ্বিগুণ দামের আশঙ্কা
হজমে সহায়ক: হজমের নানা সমস্যায় ভুগে থাকেন অনেকেই। সেসব সমস্যা থেকেও মুক্তি পেতে সাহায্য করতে পারে আম। এই ফলে আছে প্রচুর আঁশ। তাই আম খেলে হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত হয়। কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা তাড়াতেও আম সমান উপকারী।
ঠান্ডার সমস্যা দূর করে: ঠান্ডাজনিত সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে আম। আমে আছে প্রচুর ভিটামিন এ এবং ডি। এই দুই ভিটামিন ঠান্ডাজনিত সমস্যা দ্রুত উপশম করে। তাই ঠান্ডা কিংবা ফ্লু দেখা দিলে আম খেতে পারেন। এটি আপনাকে সুস্থ হতে সাহায্য করবে।
