ads

শনিবার , ২৮ অক্টোবর ২০২৩ | ১৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধনপ্রাপ্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
  1. ENGLISH
  2. অনিয়ম-দুর্নীতি
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. আমাদের ব্লগ
  6. ইতিহাস ও ঐতিহ্য
  7. ইসলাম
  8. উন্নয়ন-অগ্রগতি
  9. এক্সক্লুসিভ
  10. কৃষি ও কৃষক
  11. ক্রাইম
  12. খেলাধুলা
  13. খেলার খবর
  14. চাকরির খবর
  15. জাতীয় সংবাদ

ফুল ফোটে কাণ্ডে ও ডালে, খেতে মিষ্টি ॥ বীজ থেকে তৈরি হয় চকলেট, কফি

রফিকুল ইসলাম আধার , সম্পাদক
অক্টোবর ২৮, ২০২৩ ৯:৫৯ অপরাহ্ণ

গারো পাহাড়ে ‘কোকোয়া’র চাষ

কৃষি, খাদ্য ও শস্যসমৃদ্ধ অঞ্চল শেরপুরের গারো পাহাড়ে এবার চাষ হচ্ছে বিদেশি ফল ‘কোকোয়া’। দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন উপত্যকার উদ্ভিদ থেকে কোকোয়ার জন্ম। এর ফুল ফোটে কাণ্ডে ও ডালে। ফলের ভেতরে পেপের মতো ফাঁকা। বীজ থেকে তৈরি হয় চকোলেট ও কফির কাঁচামাল। গারো পাহাড়ের মাটি কোকোয়া চাষে উপযোগী হওয়ায় প্রথমবারের মতো এ অঞ্চলে কোকোয়া চাষে দেখা দিয়েছে সফলতা। চাষে আগ্রহ বাড়ছে অনেকের। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ছড়িয়ে পড়তে পারে কোকোয়া চাষ। আর তাতে চাষাবাদ বৃদ্ধি ও বাজারজাত করতে পারলে আমদানি নির্ভরতা কমার পাশাপাশি বাড়বে কর্মসংস্থান- এমনটাই বলছেন স্থানীয়রা।

Shamol Bangla Ads

জানা যায়, কোকো বা কোকোয়া মধ্য আমেরিকার ফল হিসেবেই পরিচিত। মধ্য আমেরিকার কয়েকটি দেশে দীর্ঘদিন ধরেই কোকোয়ার চাষ হয়। এছাড়া আফ্রিকার আইভরি কোস্ট, ঘানা, নাইজেরিয়া ও ক্যামেরুনেও এর চাষ হচ্ছে। এদিকে গত ১০ বছর ধরে বাংলাদেশেও শুরু হয়েছে কোকোয়া চাষ। কোকোয়ার গুচ্ছ গুচ্ছ ফুল ফোটে গাছের কাণ্ডে ও ডালে। ফুলগুলো আকারে ছোট, হালকা গোলাপি ও সাদা রঙের। পাকা ফলের ভেতরে পেঁপের মতো ফাঁকা আর কয়েকটি সারির ছোট ছোট বীজ থাকে। একটি গাছে শতাধিক ফল ধরে। প্রতিটি ফলে প্রায় ৩০টির মতো বীজ থাকে। যা খেতে অত্যন্ত মিষ্টি।

সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলার বন্দভাটপাড় এলাকার জালাল উদ্দিন দীর্ঘ ১০ বছর মালয়েশিয়ায় চাকরি করেছেন। মালয়েশিয়া থাকাকালীন কোকোয়া বীজ দিয়ে চকলেট, কফি, কেক, বিষ্কুট, আইসক্রিম বানানো হয়-এমন একটি কারখানায় তিনি চাকরি করেছেন। দীর্ঘ প্রবাসজীবন শেষে ১৯৯৮ সালে দেশে ফেরেন তিনি। আসার সময় তিনি মালয়েশিয়া হতে নিয়ে আসেন কোকোয়ার বীজ। সেই বীজ থেকেই তৈরি করেন চারা। গড়ে তোলেন কোকোয়ার বাগান। সম্প্রতি সরেজমিনে বাগানে গেলে কথা হয় জালাল উদ্দিনের সাথে। তিনি জানান, বর্তমানে তার বাগানে রয়েছে প্রায় হাজারখানেক চারা রয়েছে। কয়েকটি গাছ এখন ফল দিচ্ছে। একেকটি গাছে শতাধিক করে ফল এসেছে। কোকোয়া বীজের প্রসেসিং সম্পর্কে জালাল উদ্দিন জানান, পাকলে ফলের রং হয় মেটো লাল, আবার কোনোটার গাঢ় হলুদ। পাকা ফলের ভেতরের বীজ বের করে শুকিয়ে তাকে ফারমেনটেশন বা গাঁজাতে হয়। তারপর এটিকে গুঁড়া করতে হয়। এর গুঁড়া থেকেই চকোলেট তৈরি হয়। বছরে দু থেকে তিনবার ফল সংগ্রহ করতে হয়। কোকোয়া গাছ শীতল ও গরম হাওয়া কোনোটাই সহ্য করতে পারে না। তাই হালকা রোদ পড়ে এমন ছায়াযুক্ত জায়গায় ভালো হয়। তিনি আরও বলেন, কৃষি বিভাগ ও সরকারিভাবে এ বীজ বাজারজাত করতে পারলে কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক একটি সম্ভাবনাময় খাত হবে এটি।

Shamol Bangla Ads

উদ্যোক্তা জালাল উদ্দিনের মেয়ে আঁখি আক্তার বলেন, প্রচুর ফল আসছে গাছে। এগুলো খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু। দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই আসছে দেখতে ও বাগান তৈরীর জন্য চারার খোঁজে। কফি ও চকলেটের কাঁচামাল যেহেতু বিদেশ হতে আমদানি করতে হয়, আর যদি এ ফল সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতায় কৃষি বিভাগের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে চাষাবাদ করা যায় তাহলে আমদানি নির্ভরতা কমানো যাবে। সমৃদ্ধ হবে দেশের কৃষিখাত। আমরাও সরকারের সহযোগিতা চাই।

এদিকে জালাল উদ্দিনের ওই বাগান থেকে স্থানীয় অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠছেন এ ফলের বাগান করতে। স্থানীয় কৃষি উদ্যোক্তা মো. আতিকুর রহমান বলেন, আমি প্রাথমিকভাবে ৫০টি চারা রোপন করবো। এটি যেহেতু ছায়াযুক্ত জায়গাতেও হয়, তাই বাড়ির পিছনে পতিত জমিতে বাগানটি করতে চাচ্ছি। বাগানে আসা আরেক কৃষক শামসউদ্দিন বলেন, আমি আরেকদিন এসে ফলটি খেয়ে গেছি। এটি অত্যন্ত মিষ্টি এবং কাঠাঁলের চেয়েও বেশি মিষ্টি। আমার বাচ্চাদের জন্য আজ কিছু ফল কিনতে এসেছি। আমি এ ফলের বাগান করবো।
পুষ্টিবিদ তাসলিমা আক্তার উর্মি বলেন, এর বীজে আছে থিওব্রোমাইন, ক্যাফেন ও রঙিন বস্তু। সাবির্কভাবে বীজ উত্তেজক ও মূত্র রোগে বেশ উপকারী। থিওব্রোমাইন স্নায়বিক রোগের টনিক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। হৃদজনিত রোগে ‘এনজাইমা পেক্টোরিস’র ব্যথা উপশম করতে পারে চকোলেটের ক্বাথ। এছাড়াও চকোলেটের ফ্ল্যাভানল সমৃদ্ধ কোকোয়া মিল্ক ক্লান্তি দূর করতে, ইনসোমনিয়া প্রতিরোধে এমনকি শরীরের চামড়া টানটান রাখে। যা বাধর্ক্য দূর করতেও কাজ করে।

ভয়েস অব ঝিনাইগাতীর আহবায়ক জাহিদুল হক মনির বলেন, জালাল উদ্দীনের এ বাগানে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আমাদের পাহাড়ি এ অঞ্চলে অনেকেই কোকোয়া ফল চাষে আগ্রহী হবে। আমি আশা করি এতে এ জনপদের মানুষের আর্থিকভাবে ব্যপক উন্নয়ন হবে।

এ ব্যাপারে ঝিনাইগাতী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন দিলদার বলেন, কোকোয়া পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ একটি বিদেশি ফল। গত এক দেড় দশক ধরে এ ফলটি আমাদের দেশে চাষ হচ্ছে। এটি ছায়াযুক্ত জায়গাতেও হয়। কোকোয়ার বাগানে মিশ্র ফসল হিসেবে আদা, হলুদ ভালো ফলন হয়। গারো পাহাড়ে বিদেশ ফেরত জামাল উদ্দিন প্রথমবারের মতো কোকোয়ার চাষ করায় তার সফলতায় স্বপ্ন দেখাচ্ছে অনেককে। এ ফল চাষে ও চারা উৎপাদনে জামাল উদ্দিনকে নিয়মিত পরামর্শ সেবা দেওয়া হচ্ছে। এর চাষাবাদে এগিয়ে এলেও অন্যদেরও সার্বিক সহায়তা করা হবে। তার মতে, এর চাষাবাদ বাড়লে কমবে আমদানি নির্ভরতা। সেইসাথে বাড়বে কর্মসংস্থান।

সর্বশেষ - ব্রেকিং নিউজ

error: কপি হবে না!