শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার ভারত সীমান্তঘেঁষা বারোমারী সাধু লিওর খ্রিস্টধর্ম পল্লীতে দুদিনব্যাপী বার্ষিক তীর্থোৎসব ২৭ অক্টোবর শুক্রবার বেলা ১২টায় সমাপ্ত হয়েছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় ‘সিনোডীয় মন্ডলীতে মিলন অংশগ্রহণ ও প্রেরণ কর্মে ফাতেমা রাণী মা মারিয়া’ এই মূল সুরের উপর ভিত্তি করে ক্যাথলিক খ্রিস্টধর্মাবলম্বীদের দুদিনব্যাপী বার্ষিক তীর্থ উৎসব শুরু হয়।
এই তীর্থ উৎসবে উদ্বোধনী খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করেন প্রধান অতিথি ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তুরা ডাইসিসের একটি খ্রিস্টধর্ম পল্লীর পাল পুরোহিত রেভারেন্ড ফাদার টমাস মানকিন। বৃহস্পতিবার রাত ৮ টায় অনুষ্ঠিত হয় আলোক শোভাযাত্রা। এতে প্রায় অর্ধ লক্ষ খ্রিস্টভক্তগণ মোমবাতি জ্বালিয়ে দুই কিলোমিটার পাহাড়ি ক্রুশের পথ অতিক্রম করেন।

রাত ১০ টায় অনুষ্ঠিত হয় সাক্রামেন্তের আরাধনা ও সবশেষে অনুষ্ঠিত নিশী জাগরণ। পরে শুক্রবার সকাল ৮ টায় অনুষ্ঠিত জীবন্ত ক্রুশের পথ ও সকাল ১০ টায় মহা খ্রিস্টযাগের মাধ্যমে দুই দিনব্যাপী তীর্থ উৎসবের সমাপ্তী ঘোষণা করেন তীর্থ অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ময়মনসিংহ খ্রিস্টধর্ম প্রদেশের বিশপ পনেন পৌল কুবি সিএসসি।
প্রায় অর্ধ লাখ রোমান ক্যাথলিক খ্রিস্টানভক্তরা উৎসবে অংশগ্রহণ করে নানা ধরনের ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করেন। তীর্থ উৎসবকে ঘিরে নেওয়া হয় চার স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনি। পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিস, আনসার ও গ্রাম পুলিশরা এতে নিরাপত্তা প্রদান করেন। এছাড়া দুইজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এখানে দায়িত্ব পালন করেন। তীর্থ উৎসব উপলক্ষে পাশের স্কুলমাঠে বসে এক বিরাট মেলা। এতে খ্রিস্টভক্ত ছাড়াও অন্যান্য সকল ধর্মের মানুষ কেনাকাটা করেন।
তীর্থোৎসবে আসা তীর্থযাত্রীরা জানান, ফাতেমা রানী মা মারিয়ার কাছে যে যা চান, তিনি তাদের তাই দেন। তার কাছে আসা ভক্তদের মনের আশা পূরণ করেন। এজন্য অনেকেই তাদের পরিবারের সাথে এসেছেন। অনেকে এসেছেন তাদের পরীক্ষা এবং শিক্ষাজীবনে ভালো ফলাফল করার জন্য। আবার অনেকেই এসেছেন পরিবারের সুখ-শান্তি কামনা করার জন্য।
তীর্থ উৎসবের সমন্বয়কারী রেভারেন্ট ফাদার তরুণ বনোয়ারী জানান, ফাতেমা রাণী মা মারিয়ার তীর্থ স্থানে এ বছর প্রায় দিগুণ খ্রিস্টভক্তরা অংশগ্রহণ করেন। শান্তিপূর্ণভাবে তীর্থ উৎসব পালিত হওয়ায় তিনি সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
প্রধান অতিথি ভারতের মেঘালয় তুরা ডাইসিসের রেভারেন্ট ফাদার টমাস মানকিন বলেন, আমি ফাতেমা রাণীর তীর্থ উৎসবে অংশগ্রহণ করতে পেরে খুবই আনন্দিত হয়েছি। মিলন আর অংশগ্রহনে এবারের তীর্থ উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে। এছাড়া বিশ্ব শান্তি কামনায় তীর্থ উৎসবে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়েছে।
বিশেষ অতিথি বিশপ পনেন প্যল কুবি সিএসসি বলেন, ঈশ্বরের আর্শিবাদ পাওয়ার জন্য খ্রিস্টভক্তরা এখানে প্রতিবছর দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসেন। এখানে এসে ঈশ্বরের অশেষ কৃপা প্রার্থনা করে মানসিক মুক্তি ও পারিবারিক শান্তি লাভ করেন। মা মারিয়া হলেন আমাদের শেষ আশ্রয়স্থল। তাই সবাই এখানে ছুটে আসেন সৃষ্টিকর্তার আর্শিবাদ কামনা করেন।
শেরপুরের পুলিশ সুপার মোনালিসা বেগম পিপিএম বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ বারোমারী ফাতেমা রাণীর তীর্থস্থানে চার স্তরের নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। যাতে খ্রিস্টভক্তরা নির্বিঘ্নে তীর্থ উৎসব পালন করতে পারে।
উল্লেখ্য, শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী বারোমারী এলাকায় ফাতেমা রাণীর তীর্থস্থানটি পর্তুগালের ফাতেমা নগরের আদলে ও অনুকরণে ১৯৪২ সালে স্থাপিত হয়। এরপর ১৯৯৮ সাল থেকে ফাতেমা রাণী মা মারিয়ার করুণা ও দয়া লাভের আশায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে তীর্থযাত্রীরা এখানে সমবেত হয় নিজেদের মনোবাসনা ও পাপ মোচনের জন্য।