ইরানের ড্রোন ও যুদ্ধবিমান তৈরির তৎপরতাকে কেন্দ্র করে ইরান, রাশিয়া, চীন ও তুরস্কের ১১ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। গত মঙ্গলবার জো বাইডেনের প্রশাসন এ ঘোষণা দিয়েছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের এক বিবৃতিতে বলা হয়, চার দেশের সাত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। ইরান এয়ারক্রাফট ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রিয়াল কোম্পানিকে (হেসা) ড্রোন ও যুদ্ধবিমান তৈরিতে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া এবং এর সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগে যুক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে এসব নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের সন্ত্রাসবাদ এবং আর্থিক গোয়েন্দাসংক্রান্ত আন্ডার সেক্রেটারি ব্রায়ান নেলসন এক বিবৃতিতে বলেন, ইরান যেভাবে চালকবিহীন উড়োজাহাজ (ড্রোন) তৈরির তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে, তাতে রাশিয়া, তাদের মধ্যপ্রাচ্যের মিত্রদেশগুলো এবং অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারীরা বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা ক্ষুণ্ন করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ইরানের ড্রোন তৈরির তৎপরতার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ অব্যাহত রাখবে যুক্তরাষ্ট্র। সে সঙ্গে ইরানের ড্রোন তৈরিতে প্রয়োজনীয় উপকরণগুলোর রপ্তানি বন্ধের জন্য আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রেও যুক্তরাষ্ট্র উৎসাহিত করে যাবে।
ইউক্রেনে আক্রমণ চালিয়ে সেখানকার বেসামরিক নাগরিকদের ওপর বোমা ফেলার জন্য ব্যবহৃত ড্রোনগুলো রাশিয়াকে ইরান সরবরাহ করছে বলে অভিযোগ এনেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রইসি। গত সোমবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বৈঠকের ফাঁকে গণমাধ্যমের কাছে তিনি বলেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান।’
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞায় রয়েছে শাহিন কোং নামে ইরানের এক ড্রোন কোম্পানি, যা ২০০৮ সালে হেসা নাম নিয়ে একবার নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছিল। ড্রোন কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা নির্বাহী পদে থাকা কর্মকর্তা মেহেদি গোগারদচিয়ান, হামিদরেজা নুরি এবং হুসেন আইনির বিরুদ্ধে দেওয়া হয়েছে এই নিষেধাজ্ঞা। এই তালিকায় আছে চীন ভিত্তিক শেনজেন জিয়াসিবো টেকনোলজি কোম্পানি এবং এর মালিক সু চুনপেং, গুইলিন আলফা রাবার অ্যান্ড প্লাস্টিক টেকনোলজি।
ডেল্টা-অ্যারো টেকনিক্যাল সার্ভিস সেন্টার (এলএলসি) সহ রুশ সরঞ্জাম নির্মাতা গ্রুপ রয়েছে এই নিষেধাজ্ঞার তালিকায়। দুই তুর্কি মানি এক্সচেঞ্জার মেহমেত তোকদেমির এবং আলাদ্দিন আয়কুতের বিরুদ্ধেও দেওয়া হয়েছে এই নিষেধাজ্ঞা।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন, ‘ইরানের ড্রোন তৈরির তৎপরতাকে ব্যাহত করা এবং ইরানকে তার কাজের ব্যাপারে জবাবদিহি করতে মিত্র ও অংশীদারদের সঙ্গে সকল প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে যুক্তরাষ্ট্র।’
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে বন্দী বিনিময় হয়েছে। ইরান থেকে মুক্তি পাওয়া পাঁচ মার্কিন নাগরিক মঙ্গলবার দেশে ফিরলেও মার্কিন কর্মকর্তাদের ধারণা ছিল, ইরানের ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হতে পারে। দুই দেশের মধ্যকার উত্তেজনার মাঝেই নতুন নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিল যুক্তরাষ্ট্র।