পরিকল্পিতভাবে মেধা খাঁটালে ও শ্রম দিলে যেকোনো কাজে সফলতা আসে। তেমনি এক অনন্য দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছেন শেরপুরের নকলা উপজেলার টালকী ইউনিয়নের চরকামানির পাড়ার আজিজুল ইসলাম। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ড্রাগন ফলের চাষে সফলতা দেখে বাগান করতে আগ্রহী হন। তেমনিভাবে পরিশ্রম ও আপ্রাণ চেষ্টায় অবশেষে আলোর মুখ দেখেছেন আজিজুল। ড্রাগন চাষ করে এই মাধ্যম থেকে এখন লাখপতি তিনি।
জানা যায়, আজিজুল ২০১৯ সালে ময়মনসিংহ হর্টিকালচার সেন্টার থেকে এক ফুট উচ্চ বিশিষ্ট ৬৫টি কাটিং চারা বাড়ির পাশের ৫ শতাংশ জমিতে রোপণ করেন। জমি তৈরি, চারা ক্রয়, সার ও কংক্রিটের খুঁটিসহ সবমিলিয়ে খরচ হয়েছিল ৬৫ হাজার টাকা। পরের বছর ২০২০ সাল থেকে ফলন দেওয়া শুরু হয়। এলাকায় প্রথমবারের এই ফলের চাষ হওয়ায় স্থানীয়দের আগ্রহ বেড়েছে। পর্যায়ক্রমে ফলন বাড়তে থাকায় তার আয়ও বাড়তে থাকে আজিজুলের। ২০২২ সালে তিনি এক লাখ ১২ হাজার টাকার ড্রাগন ফল বিক্রি করেন। এতে খরচ বাদে ওইবার তার ৯৪ হাজার টাকা লাভ হয়েছিলা। এ বছর প্রথম ধাপে ৩২ হাজার টাকার ড্রাগন ফল বিক্রি করেছেন। তিনি আশা করছের এবছর আরও অন্তত ৭০/৮০ হাজার টাকার ড্রাগন বিক্রি করতে পারবেন। ২৪ আগস্ট বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে আজিজুল হকের বাগান ঘুরে দেখা যায়, চারদিকে সবুজের সমারোহ। ড্রাগন ফল ছাড়াও তার বাগানে মাল্টা, পেয়ারা, বারোমাসি আম, লটকন, লেবু, বরই, কলাসহ কয়েক প্রজাতির ফল রয়েছে। প্রায় পাঁচ ফুট উচ্চতার প্রতিটি কংক্রিটের খুঁটি পেঁচিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে ড্রাগন ফলের গাছ। প্রতি গাছে ঝুলছে ৫/৭টি করে কাঁচা, পাকা ও আধা পাকা ড্রাগন ফল, ঝুলছে অগণিত ফুল। এ ছাড়া তার খামারে আছে হাঁস, মুরগি, কবুতর, ছাগল। রয়েছে বিভিন্ন শাক-সবজি। তিনি এই খামারটির নাম দিয়েছেন ‘আজিজুল অ্যাগ্রো ফার্ম’।
সফল ব্যাবসায়ী আজিজুল হক জানান, ২০২২ সালের শেষের দিকে নতুন করে আরও ৫ শতাংশ জমিতে ড্রাগন ফলের বাগান সম্প্রসারণ করেছেন। সেখানে নিজের বাগানের কাটিং করা ৩৫টি চারা রোপন করেছেন। এ বছর এরই মধ্যে ২-৩ টি গাছে ২-১ টি করে ফল এসেছে। আগামীতে প্রতিটি গাছে ৭ থেকে ১০ টি করে ফল আসতে পারে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করছেন।
আজিজুলের সফলতা দেখে এ ফল চাষে অনেক কৃষক আগ্রহী হয়েছেন। এর মধ্যে সফলতার মুখ দেখতে শুরু করেছেন পাঠাকাটার ইব্রাহিম খলিল ও কেরামত আলীসহ অনেকে। গভীর সম্ভাবনা দেখে সৌখিন চাষিদেরে পাশাপাশি স্বাবলম্বী হতে বাণিজ্যিকভাবে চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন উপজেলার বিভিন্ন এলাকার অনেক চাষি। চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের রামপুর এলাকার রফিকুল ইসলাম ও বন্ধটেকী এলাকার শাহ মো. মোফাখখারুল ইসলাম নয়নসহ আরও অনেকে। এ ছাড়া বানেশ্বরদী ইউনিয়নের পোলাদেশী, ছোট মোজার, বড় মোজার, বাউসা এলাকার অনেকে ড্রাগন চাষ করে সফলতার মুখ দেখেছেন।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোহাম্মদ শাহীন রানা জানান, ক্যাকটাস গোত্রের এ ড্রাগন ফল গাছে রাতে ফুল ফুটে এবং সুগন্ধ ছড়ায়, তাই একে নাইট কুইন বলা হয়। ড্রাগন ফলের চাষ প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকদের পরামর্শসহ সকল প্রকার সহযোগিতা দিচ্ছে বলে তিনি জানান।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহরিয়ার মুরসালিন মেহেদী জানান, উচ্চ গুণ সম্পন্ন ড্রাগন ফল চাষে সৌখিন কৃষকের পাশাপাশি সকল শ্রেনির কৃষকদের আগ্রহ ক্রমেই বাড়ছে। প্রায় সব ধরণের মাটিতে চাষ করা গেলেও, বেলে দোঁ-আশ মাটি ড্রাগনফল চাষের জন্য উত্তম। উচ্চ ফলনশীল বাউ ড্রাগন-১ ও বাউ ড্রাগন-২ বাণিজ্যিকভাবে চাষের জন্য উপযোগী। এছাড়া বাংলাদেশের মাটি ও আবহাওয়া থাইরেড, ভিয়েতনামি রেড, বারি ওয়ান ড্রাগন, ভিয়েতনামি হলুদ, ভিয়েতনামি সাদা, ভিয়েতনামি গোলাপি ও আমেরিকান হলুদ ড্রাগনে চাষের জন্য বেশ উপযোগী। তিনি আরও জানান, এ ফলের চাষ বাড়াতে কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বাড়ির আঙিনা ও পতিত জমিতে ড্রাগন ফল চাষ করে যে-কেউ স্বাবলম্বী হতে পারবেন আষা প্রকাশ করেন কৃষিবিদ শাহরিয়ার মুরসালিন মেহেদী।