১৫ আগস্ট ১৯৭৫ । বাংলাদেশ ও বাঙালির ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কিত দিন। সেটা ছিল শ্রবনের শেষ রাত। জানিনা সে রাতের চাঁদ কালো মেঘে ঢাকা ছিল কিনা।
বাঙ্গালির ভাগ্যাকাশে সূর্য সেদিন কোন শুভ দিনের সূচনা নয় , বরং স্বপ্ন ভঙ্গের বিষ্ময় বেদনা নিয়ে কলঙ্কিত ইতিহসের জন্ম দিতে উদিত হয়েছিল। রাতের জোসনাকে রাহুর অশুভ ছায়া গ্রাস করে ছিল। ফলশ্রুতিতে , বিপথগামী কতিপয় সেনা সদস্যের বুলেটে জাতির আপন মুক্তিদাতা, স্বাধীনতার মহান স্থপতিকে নৃশংসভাবে সপরিবারে হত্যা করে। জাতি হয় পিতৃহীন । যে জাতি মাত্র সাড়ে তিন বছর আগে বুকের রক্ত দিয়ে ছিনিয়ে এনেছে স্বাধীনতার সূর্য, সেই জাতিই কলঙ্কিত হলো পিতৃঘাতক হিসেবে। ইতিহাসের এই দায় কি কোনো দিন পরিশোধ করা যাবে? প্রশ্ন রইল, জাতি কাছে।
বাঙ্গালির ইতিহাসে সবচেয়ে নিষ্ঠুরভাবে নারকিয় হত্যাকান্ডে বিশ্ববাসী স্থম্ভিত হয় , সমগ্র বিশ্ব হারায় বঞ্চিত মানুষের মুক্তির পক্ষের উন্নতশির এক সুমহান নেতাকে। বঙ্গবন্ধুহীন বাংলার সাধারণ মানুষ হয়ে যায় দিশেহারা। নাবিকহীন নৌকার মত।

বিশ্বের নিষ্ঠুরতম এ হত্যাকাণ্ডে বিপথগামী ঘাতক সেনা সদস্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করেই থেমে থাকেনি; একে একে হত্যা করেছে বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিনী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে শেখ কামাল, মেজো ছেলে শেখ জামাল, শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা কামাল, শেখ জামালের স্ত্রী রোজী জামালকেও। ঘাতকের হাত থেকে রক্ষা পায়নি ছোট্ট শিশু রাসেলও। বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ আবু নাসেরকেও হত্যা করে ঘাতকরা। হত্যাকাণ্ডের শিকার হন শেখ ফজলুল হক মণি ও তার স্ত্রী বেগম আরজু মণি, বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছোট মেয়ে বেবী সেরনিয়াবাত, ছোট ছেলে আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতি সুকান্ত আবদুল্লাহ বাবু, শহীদ সেরনিয়াবাত, আব্দুল নঈম খান রিন্টু, বঙ্গবন্ধুর প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমেদ।
১৯৭৫ থেকে ২০২৩ সাল । ৪৮ বছর অতিক্রান্ত। আরো অনেক বছর কেটে যাবে। হাজার বছর যাবে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু সব সময় স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য প্রাসঙ্গিক। আসলে বঙ্গবন্ধু এমন একজন মানুষ, যাঁকে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষ আদর্শবান ও জাতির শ্রেষ্ট সন্তান বলে বিবেচনা করা হয়। এই অবিসংবাদী নেতার জীবনের প্রতিটি পরতে আমাদের জন্য রেখে গেছেন অমূল্য দিক নির্দেশনা ও আদর্শ। আমাদের তা নতুন করে আবিষ্কার করতে হবে। একটি সুন্দর, সমৃদ্ধ ও উজ্জ্বল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছেন তিনি। জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির চিন্তায় নিমগ্ন ছিলেন। তার স্বপ্ন পুরণে আমাদের নিজ নিজ অবস্থান থেক সততা, নিষ্ঠা ও প্রজ্ঞার সাথে ভুমিকা পালন করতে হবে। বঙ্গবন্ধু রাজনীতি করেছিলেন দেশের মানুষের জন্য। পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠির জুলুম-নির্যাতন-
নিপীড়ন এমন কি কারাবরনকে মেনে নিয়েছিলেন মানুষের কল্যাণের কথা চিন্তা
করে। তাঁর মতো নিঃস্বার্থ রাজনীতিবিদ ইতিহাসে বিরল। সব মতাদর্শের ঊর্ধ্বে থেকে বঙ্গবন্ধু আজ সমহিমায় অধিষ্ঠিত। আর খলনায়করা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আজ আমরা যে ভালো অবস্থানে আছি, তার কাঠামোটা বঙ্গবন্ধুই করে দিয়ে গেছেন।
বিশ্বজুড়ে বাঙালির পরিচয় সূত্র তিনিই।
আগস্ট এলেই সপরিবারে জাতির পিতাকে হত্যার ভয়াবহ স্মৃতি আমাদের মর্মাহত করে।
আজ তাঁকে স্মরণ করি পরম শ্রদ্ধায়। আর জাতি স্মরণ করছে অশ্রুসিক্ত নয়নে।

লেখক: মোঃ শফিউল আলম, সহকারী শিক্ষক, বাজিতখিলা সঃপ্রাঃ বিদ্যালয় ও ICT4E জেলা এ্যম্বাসেডর, শেরপুর।