অনলাইন নিউজ পোর্টাল শ্যামলবাংলা২৪ডটকম’র অবিরাম প্রকাশনার দশম বর্ষপূর্তি হয়ে গেল ৩১ জুলাই ২০২৩। ২০১৩ সালের আজকের এই দিনে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে ‘মা-মাটি ও মানুষের কথা বলে’ শ্লোগানকে ধারণ করে যাত্রা শুরু হয়েছিল ‘শ্যামলবাংলা২৪ডটকম’র। সেই থেকে হাঁটি হাঁটি পা পা করে সময়ের ঘূর্ণাবর্তে কেমন করে কেটে গেল দিন-মাস শেষে পুরো ১০টি বছর পেরিয়ে একাদশ বর্ষে যাত্রা শুরু করছে ময়মনসিংহ বিভাগের প্রথম তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধন পাওয়া জনপ্রিয় ও পাঠক নন্দিত শ্যামলবাংলা২৪ডটকম।

শুরু থেকে প্রতি বছর জমকালো ও মাঝারি অনুষ্ঠানমালার আয়োজন থাকলেও প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই মাহেন্দ্রক্ষণে আমরা আজ কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করছি শেরপুরের তৎকালীন জেলা প্রশাসক, বিশিষ্ট নজরুল গবেষক, কবি-লেখক মোহাম্মদ জাকীর হোসেনকে (বর্তমানে সরকারের অতিরিক্ত সচিব), যিনি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে শ্যামলবাংলা২৪ডটকম’র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন। এছাড়া অনুষ্ঠানে তৎকালীন জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের কর্মকর্তা, সুশীল সমাজ ও সাংবাদিক সমাজসহ সচেতন মহলের আরও যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের প্রতিও জানাচ্ছি কৃতজ্ঞতা। তারাই সেদিন আমাদের সেই আয়োজনকে করেছিলেন সমৃদ্ধ।
সেইসাথে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি আমাদের সংবাদকর্মী, লেখক, পাঠক, বিজ্ঞাপনদাতা, শুভানুধ্যায়ী আর প্রশাসন ও দায়িত্বশীল মহলসহ সকলকে। অন্যদিকে সফলতার সূচনালগ্নে ২০১৫ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি নিউজপোর্টালটির প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী সম্পাদক শাহ আলম বাবুলের অকাল প্রয়াণের শূন্যতা আজও আমাদের মাঝে বিরাজমান। আজকের এই দশম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মাহেন্দ্রক্ষণে শুধু শ্যামলবাংলা পরিবারই নয়, শ্যামলবাংলার মনোমুগ্ধ লাখো পাঠক তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনাসহ তাকে কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছে।

প্রান্তিক জেলা শহর থেকে একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল’র প্রকাশনা চালিয়ে যাওয়াটাই ছিল এক কঠিন চ্যালেঞ্জ। কারণ ঘরে বসেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে একটি নিউজ পোর্টাল বা ডিজিটাল গণমাধ্যম পরিচালনা করা সম্ভব হলেও তার নির্দিষ্ট অফিস তথা যোগাযোগ ঠিকানা বা অবস্থানের পাশাপাশি একটি পূর্ণাঙ্গ অফিস প্রতিষ্ঠাই যেখানে কঠিন, সেখানে তার পূর্ণাঙ্গ অফিস প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মূল চালিকাশক্তি কোন প্রকার বিজ্ঞাপন ব্যতীত ‘নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো’র কঠিন দায়িত্ব কাধে নিতে হয়। প্রকাশনা অব্যাহত রাখতে হয় আর্থিক অনটনসহ অনেক সমস্যাসঙ্কুল পরিবেশেও।
তারপরও যাত্রার অব্যবহিত পরই আমরা দেশের বিভাগীয় শহরসহ প্রায় প্রতিটি জেলা ও উপজেলা থেকে পেয়ে যাই একঝাঁক চৌকস সংবাদকর্মী-প্রতিনিধি। জাতীয়, রাজনীতি, আন্তর্জাতিক, বিনোদন, ক্রীড়া, কৃষি ও মফস্বল বিষয়ক সংবাদের পাশাপাশি ফিচার ও সমস্যাধর্মী লেখাসহ সমকালীন নিবন্ধ, মতামত প্রকাশে অনেকটাই ঘাটতি ছিল না আমাদের। যে কারণে দিন দিন বেড়ে যায় আমাদের পাঠকের সংখ্যা। কিন্তু পরিতাপের বিষয় বা অতুক্তিকর মনে হলেও সত্য যে, বিজ্ঞাপন প্রাপ্তির বিষয়টি অনেকটাই শূন্যের কোটায় থাকায় বিশেষ করে অনলাইন নিউজপোর্টালে বিজ্ঞাপন প্রদানে জনপ্রতিনিধি আর বিত্তবান-ব্যবসায়ীদের মানসিকতার ঘাটতি থাকায় শ্যামলবাংলার প্রকাশনার বিস্তৃত পরিধি অটুট রাখা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। ফলে জাতীয় সমকালীন লেখা ও খবরাদি সীমিত করে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলকেই শ্যামলবাংলার মূল পরিধি হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। অবশ্য চলার পথে আরও কিছু সমস্যা-সঙ্কট মোকাবেলা করতে হয়েছে।
কিন্তু এরপরও নির্দ্বিধায় বলা যায়, শত সংকটের মাঝেও শ্যামলবাংলা আজ পাঠকের হৃদয়কোণে একটি শক্ত অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। এটাই প্রতিষ্ঠার সবচেয়ে বড় সফলতা। ওইসব সমস্যা-সঙ্কট কাটিয়ে চিরায়ত বাংলার রূপ-বৈচিত্র, মমত্ববোধ ও দেশাত্ববোধে জাগ্রত শ্যামলবাংলা যাত্রার শুরু থেকেই কথা বলার চেষ্টা করেছে ‘মা, মাটি ও মানুষ’ এর পক্ষে। ওই স্বার্থ ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে আমাদের চিন্তা-চেতনা তথা দায়িত্ববোধে কাজ করেছে দায়িত্বশীলতাও। কেবল ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গিতে নয়, একটি চেতনাধর্মী, রুচিসম্মত ও আধুনিক নিউজপোর্টাল হিসেবে শ্যামলবাংলাকে প্রতিষ্ঠাই ছিল আমাদের মূল লক্ষ্য। কিন্তু সমস্যা-সঙ্কটের কারণে আমরা সেই লক্ষ্য অর্জনে হয়তোবা পুরোপুরি সফল হতে পারিনি। তবে থেমে নেই আমাদের নিরন্তর প্রচেষ্টা। যে কারণে বিশ্বব্যাপী প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) ধারাবাহিকতায় আক্রান্ত বাংলাদেশের কঠিন পরিস্থিতিতেও শ্যামলবাংলা সকল শ্রেণির পাঠক ও মানুষের পাশে থেকেছে। সেইসাথে সহযোগিতা করেছে জনসচেতনতা বাড়াতে প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ ও স্বাস্থ্য বিভাগসহ জনপ্রতিনিধি আর সামাজিক প্রতিষ্ঠান-সংগঠনের নানা কর্মকান্ডে।
আর বলতে দ্বিধা নেই, আমাদের নিরন্তর প্রচেষ্টায় পরিচ্ছন্নতার প্রতীক শেরপুরের সাবেক জেলা প্রশাসক ডাঃ এএম পারভেজ রহিম, ড. মল্লিক আনোয়ার হোসেন, আনার কলি মাহবুব, মো. মোমিনুর রশীদ ও সাহেলা আক্তারের ধারাবাহিকতায় নবাগত জেলা প্রশাসক আব্দুল্লাহ আল খায়রুমসহ তার প্রশাসনের কর্মকর্তাদের আন্তরিকতা ও উদ্দীপনা যেমন আমাদেরকে করছে অনুপ্রাণিত, ঠিক তেমনি অকপটে সহযোগিতায় আজও দেখা যায়নি তাদের কার্পণ্য। আর শেরপুরের সাবেক পুলিশ সুপার মেহেদুল করিম, রফিকুল হাসান গণি, কাজী আশরাফুল আজীম পিপিএম ও হাসান নাহিদ চৌধুরীর ধারাবাহিকতায় নবাগত পুলিশ সুপার মোনালিসা বেগম পিপিএমের মানবিক স্বভাবের উদারতায় আমরা যেমন উদ্দীপ্ত, ঠিক একই ধাঁচের উদ্দীপনায় উদ্দীপ্ত করছেন তাদের নেতৃত্বাধীন পুলিশ প্রশাসনও। এছাড়া শীর্ষ জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সহযোগিতাও আমাদের চলার পথকে করেছে অনেকটাই মসৃণ।
সুতরাং হাঁটি হাঁটি পা পা করে শ্যামলবাংলা২৪ডটকমের অবিরাম প্রকাশনার দশম বর্ষপূর্তি হওয়ায় বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন গণমাধ্যমবান্ধব সরকারের ‘অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায়’ এগিয়ে যাওয়া দেশে আমাদের সুন্দর আগামীর প্রত্যাশায় নিবন্ধিত নিউজ পোর্টালগুলো সরকারের বিজ্ঞাপন নীতিমালায় নেওয়াসহ যেমন বেড়েছে অন্যান্য ব্যাপ্তি, ঠিক তেমনি তার একাদশ বর্ষে পদার্পণে আমরা আগের সমস্যাগুলো কাটিয়ে অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে এগিয়ে যাব- এতেও চাঙা হয়েছে মনোবল। আর তাই ওই এগিয়ে যাওয়ার পথে আমরা যাদের সহযোগিতা পেয়েছি, তাদের সহযোগিতা আরও বাড়বে এবং যাদের সহযোগিতা আদায়ে ব্যর্থ হয়েছি, তাদেরটা আদায়ে সফল হবো- এই প্রত্যাশা আমাদের। পাঠক-লেখক আর শুভানুধ্যায়ীসহ সচেতন ও দায়িত্বশীল মহলের সর্বাঙ্গীন সহযোগিতা ও পরামর্শও আমাদের চলার পথে পাথেয় হবে। জয়তু শ্যামলবাংলা; জয়তু শ্যামলবাংলার দশম বর্ষপূর্তি ও একাদশ বর্ষের যাত্রা।
লেখক : সম্পাদক-প্রকাশক, শ্যামলবাংলা২৪ডটকম।