বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস আজ (মঙ্গলবার ১১ জুলাই)। ১৯৯০ সালের এই দিনে প্রথম বারের মতো ৯০টি দেশে বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস উদযাপিত হয়। তারই ধারবাহিকতায় নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে এ বছর বাংলাদেশ বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস পালন করতে যাচ্ছে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘জেন্ডার সমতাই শক্তি: নারী ও কন্যাশিশুর মুক্ত উচ্চারণে হোক পৃথিবীর অবারিত সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন’।
বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। দিবসটি উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও প্রাইভেট চ্যানেলগুলো বিশেষ কর্মসূচি সম্প্রচার করবে।
জানা যায়, ১৯৮৯ সালে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির গভর্নিং কাউন্সিল জনসংখ্যা ইস্যুতে গুরুত্ব প্রদান ও জরুরি মনোযোগ আকর্ষণের লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী ১১ জুলাই বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়।
হু হু করে জনসংখ্যা বাড়ছিল সত্তর ও আশির দশকে। নব্বইতে এসেও তা বহাল ছিল। রাষ্ট্রীয় নীতি বদলাচ্ছিল একের পর এক। ছোট দেশ, মানুষ বেশি হয়ে গেলে মুশকিল! তাই পলিসি মেকাররা জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণকেই মোক্ষম অস্ত্র মনে করেছিলেন। সেভাবেই দিয়েছিলেন দাওয়াই। তারই ফলাফল এখন পাওয়া যাচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির গড় হার পড়তির দিকে। স্থীতিশীল থেকে বৃদ্ধিরেখার এ বাঁকবদলে ভারসাম্যহীনতাও তৈরি হচ্ছে।
বাংলাদেশে গত ১২ বছর ধরে মোট প্রজনন হার (টোটাল ফার্টিলিটি রেট-টিএফআর) স্থিতাবস্থায় রয়েছে। বর্তমানে এ হার ২ দশমিক ৩। অর্থাৎ এ সময় ধরে একজন ১৫-৪৯ বছর বয়সী বিবাহিত নারী তার জীবদ্দশায় গড়ে দুটি করে সন্তান প্রসব করছেন। অন্যদিকে প্রজনন হার স্থির থাকলে প্রতি বছর প্রায় দুই লাখ মানুষ মোট জনসংখ্যায় নতুন করে যুক্ত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সর্বশেষ আদমশুমারি-২০২২ তথ্য অনুযায়ী, দেশে জনসংখ্যার আকার বেড়ে এখন ১৭ কোটির মতো হয়ে গেছে। এরপর আরও এক বছর গেছে। এখন ২০২৩ সালে এসে বাংলাদেশের জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ কোটি ৩০ লাখের মতো। যদি চলমান প্রজনন হার ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার এভাবে চলমান থাকে, তাহলে এ জনসংখ্যা ২০৩০ সালে হয়ে যাবে ১৮ কোটি ৪০ লাখের মতো। আর ২০৫০ সালে হয়ে যাবে ২০ কোটি ৪০ লাখের মতো।
আমাদের দেশের লাখ লাখ শ্রমিক বিভিন্ন দেশে কাজ করছেন। কিন্তু তাদের তেমন কোনো প্রশিক্ষণ নেই। আবার কেউ কেউ কিছুটা কাজ পারলেও তাদের সনদ নেই। ফলে তারা খুব কম বেতনে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। এমনকি দেশেও লাখ লাখ শিক্ষিত বেকার তরুণ-তরুণী রয়েছেন। তারা একটি সাধারণ চাকরির জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। কিন্তু তাদের প্রশিক্ষণ বা কারিগরি দক্ষতাসম্পন্ন জ্ঞান না থাকায় অনেক চাকরির সুযোগ তারা নিতে পারছেন না।
বাংলাদেশের কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর বড় একটি অংশ তৈরি পোশাকশিল্পে জড়িত। তারা বর্তমানে প্রযুক্তিগত বিভিন্ন সরঞ্জামের সমন্বয়ে পোশাক উৎপাদনে অংশ নিয়ে নিজেদের কর্মসংস্থান সম্প্রসারিত করেছেন। তবে অগ্রগতির ধারাবাহিতায় প্রযুক্তি এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইযুগে। পোশাক কারখানায় যে মেশিন ব্যবহার করে উৎপাদন করা হয় শিগগিরই সেই মেশিন নিজেই কাজটি করতে সক্ষম হবে। এতে শ্রমিকের জায়গা মেশিন বা এআইয়ের দখলে চলে যাবে। ফলে তৈরি পোশাকশ্রমিকদের মতো দেশের বড় একটি জনগোষ্ঠী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এমন প্রয়োগের প্রথম প্রহরেই চ্যালেঞ্জে পড়বে।