ফুলেল শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে চিরবিদায় নিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সিরাজুল আলম খান। শনিবার ঢাকার বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ ও নোয়াখালীতে তাঁর দুই দফা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আলীপুর গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে মা সৈয়দা জাকিয়া খাতুনের কবরের পাশে দাফন করা হয় রাজনীতির ‘রহস্যপুরুষ’ খ্যাত সিরাজুল আলম খানকে। শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তাঁকে মায়ের শাড়িতে মুড়িয়ে দাফন করা হয়। এর আগে বেগমগঞ্জ থানা পুলিশের একটি চৌকস দল তাঁকে গার্ড অব অনার প্রদান করে।
এ দিন সকাল পৌনে ৯টায় প্রথম জানাজা ও শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য সিরাজুল আলম খানের মরদেহ বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে নিয়ে আসা হয়। সে সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতাকর্মীরা তাঁর কফিনে শেষ শ্রদ্ধা জানান। সকাল ১০টায় বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম জানাজা। সেখানে সিরাজুল আলম খানের দীর্ঘদিনের সহকর্মী-সহমর্মী ও ভক্তরা যোগ দেন। ছিলেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, ব্যবসায়ী, কবি-সাহিত্যিক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও। জানাজা শেষে বিভিন্ন দল ও সংগঠনের পক্ষ থেকে আরেক দফা ফুলেল শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর সকাল সাড়ে ১০টায় অ্যাম্বুলেন্সে করে মরদেহ নিয়ে স্বজনরা মরহুমের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর উদ্দেশে রওনা হন।
জানাজার আগে কথা বলেন সিরাজুল আলম খানের রাজনৈতিক ‘শিষ্য’ ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব। তিনি বলেন, ‘সিরাজুল আলম কোনো ব্যক্তি, পরিবার বা দলের সম্পত্তি নন। তিনি দেশের ১৮ কোটি মানুষের সম্পত্তি। ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি কোনো সম্পত্তির লোভ-লালসা করেননি। বাংলাদেশ নামে একটা দেশ হবে, এটা যখন কেউ চিন্তা করেননি, তখন সিরাজুল আলম খান বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য নিউক্লিয়াস গঠন করেন। তিনি নীরবে-নিভৃতে আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়েছেন। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে তাঁর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করব।’
বায়তুল মোকাররমে জানাজা ও শ্রদ্ধা নিবেদনকালে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, বরকত উল্লাহ বুলু, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, কার্যকরী সভাপতি রবিউল আলম, বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাসদের (মাহবুব) মইন উদ্দিন চৌধুরী লিটন, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ, সাংবাদিক শওকত মাহমুদ, শামসুদ্দিন পেয়ারা, কবি ফরহাদ মজহার, কবি মোহন রায়হান প্রমুখ।
সিরাজুল আলম খানের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ছিলেন তাঁর ছোট ভাই ফেরদৌস আলম খান, ভাইয়ের মেয়ে ব্যারিস্টার ফারাহ খান প্রমুখ। এ সময় তাঁর প্রতি আরও শ্রদ্ধা জানায় বাসদ, জাতীয় পার্টি (জাফর), গণঅধিকার পরিষদ, জাতীয় শ্রমিক জোট, ছাত্রলীগ (জাসদ) ও ছাত্রলীগ (বিএসএল) সহ বিভিন্ন দল ও সংগঠনের নেতারা।
দীর্ঘদিন উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট ও ফুসফুসের সংক্রমণসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগতে থাকা সিরাজুল আলম খান ৮২ বছর বয়সে শুক্রবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। তাঁর মৃত্যুতে আরও শোক জানিয়েছেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান, সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম–মুক্তিযুদ্ধ ৭১ এর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ নুরুল আলম, মহাসচিব হারুন হাবীব, আইন ও সালিশ কেন্দ্র।