ads

বৃহস্পতিবার , ২৫ মে ২০২৩ | ১১ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধনপ্রাপ্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
  1. ENGLISH
  2. অনিয়ম-দুর্নীতি
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. আমাদের ব্লগ
  6. ইতিহাস ও ঐতিহ্য
  7. ইসলাম
  8. উন্নয়ন-অগ্রগতি
  9. এক্সক্লুসিভ
  10. কৃষি ও কৃষক
  11. ক্রাইম
  12. খেলাধুলা
  13. খেলার খবর
  14. চাকরির খবর
  15. জাতীয় সংবাদ

জাতীয় কবি নজরুলের জন্মদিন : প্রাসঙ্গিক ভাবনা : মো. কামরুজ্জামান বিপিএম

শ্যামলবাংলা ডেস্ক
মে ২৫, ২০২৩ ৯:২১ অপরাহ্ণ

মহান কবি বা শিল্পস্রষ্টারা অনেক সময় মানসচক্ষে ভবিষ্যৎ দেখতে পান। নিজের সৃষ্টিকর্ম ভবিষ্যতে দীর্ঘ মেয়াদে টিকে থাকবে কিনা তা নিয়ে ইতিপূর্বে বহু কবি ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন।
উইলিয়াম শেক্সপিয়ার তাঁর ‘সনেট-৫৫’ কবিতার শুরুতে বলেছেন, মার্বেল পাথর কিংবা রাজকুমারীর স্বর্ণমূর্তিও তত দিন টিকবে না, যত দিন তাঁর কাব্যসৃষ্টি টিকে থাকবে; পাথরে শেওলা পড়বে কিন্তু তাঁর সৃষ্টি যত দিন যাবে, তত উজ্জ্বল হতে থাকবে।
সেটাই হয়েছে, চার শ বছর কেটে গেছে। কিন্তু শেক্সপিয়ারের সৃষ্টি দীপ্তি এতটুকু ম্লান হয়নি। বরং তা উজ্জ্বল হয়েছে।

Shamol Bangla Ads

একইভাবে নজরুল উচ্চারণ করেছিলেন, ‘আমি চির তরে দূরে চলে যাব, তবু আমারে দেব না ভুলিতে।’
তাঁর সেই আত্মবিশ্বাসী ও স্পর্ধিত প্রত্যয় যে ফাঁপা ছিল না, তা এক শ বছর পরে আমাদের কাছে চরম সত্য হয়ে ধরা দিচ্ছে।
আজ সেই বিদ্রোহী কবির ১২৪ তম জন্মবার্ষিকীতে আমরা যখন তাঁকে নিয়ে আলোচনা করছি, তখন বুঝতে পারছি, সময় তাঁকে আমাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে পারেনি। তিনি আমাদের চেতনায় আরও বেশি উজ্জ্বল হয়েছেন।
বাঙালি জাতির কাছে, বিশেষ করে বাংলাদেশিদের কাছে তিনি এখনও শুধু প্রাসঙ্গিক নন, তিনি এক অত্যাবশ্যকীয় চরিত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছেন।

আমাদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক এমনকি রাজনৈতিক জীবনে নজরুল এক অবিচ্ছেদ্য সত্তা হয়ে আছেন। তিনি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে তাঁর গান ও কবিতায় যে বিপ্লবী মন্ত্র রেখে গেছেন তা আজও আমাদের প্রথমে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে শক্তি জুগিয়েছে।
এরপর পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর অত্যাচারের শাসনের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই করতে প্রেরণা জুগিয়েছে।
কাজী নজরুল ইসলামের ‘বিদ্রোহী’ কবিতা কিংবা ‘এই শিকল ভাঙার গান, মোদের এই শিকল ভাঙার গান’ ও ‘চল চল চল’সহ বহু কবিতা ও গান আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মহা অনুপ্রেরণা ছিল।

Shamol Bangla Ads

*সাহিত্যের কবি আর রাজনীতির কবির মেলবন্ধন*

আমাদের সাহিত্যের এই যুগশ্রেষ্ঠ কবির কবিতা, গান ও সংগ্রামী জীবন যাঁকে তুমুলভাবে প্রাণিত করেছিল, তিনিও আরেকজন কবি। তবে তিনি সাহিত্যের কবি নন, তিনি বাঙালি জাতির সংগ্রামের কবি, রাজনীতির কবি। তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
আজকে আমরা স্বাধীন দেশে বসে কাজী নজরুল ইসলামকে স্বাধীনভাবে শ্রদ্ধা জানাতে পারছি। সেই স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনার যে মহানায়ক বঙ্গবন্ধু, তিনি কাজী নজরুল ইসলামের দ্বারা গভীরভাবে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন।
এ কারণে আজ বিদ্রোহী কবি সম্পর্কে বলতে গিয়ে, বিশেষ করে তাঁর বাঙালি ও বাংলাদেশ ভাবনা সম্পর্কে বলতে গিয়ে অনিবার্যভাবে বঙ্গবন্ধুর নজরুল-মানস সম্পর্ক দু’কথা বলতে চাচ্ছি।

*নজরুলের সঙ্গে প্রথম দেখা*
অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে বঙ্গবন্ধু নজরুলের সঙ্গে তাঁর প্রথম দেখার বর্ণনা দিয়েছেন।
ঘটনাটি ছিল ১৯৪১ সালের ১২ আগস্টের। তখন বঙ্গবন্ধুর বয়স ২১ বছর। ফরিদপুর জেলা মুসলিম ছাত্র সম্মিলনের অধিবেশনের প্রধান অতিথি হিসেবে এসেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম।
আয়োজনের উদ্যোক্তা ছিলেন সাহিত্যিক ও রাজনীতিবিদ হুমায়ুন কবীর। প্রশাসন থেকে ১৪৪ ধারা জারি করায় সে অধিবেশন হয়নি। আত্মজীবনীর ১৫ ও ১৬ নম্বর পৃষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু লিখেছেন,
‘…কনফারেন্স করলাম হুমায়ুন কবির সাহেবের বাড়িতে। কাজী নজরুল ইসলাম সাহেব গান শোনালেন। আমরা বললাম, এই কনফারেন্সে রাজনীতি আলোচনা হবে না। শিক্ষা ও ছাত্রদের কর্তব্য সম্বন্ধে বক্তৃতা হবে। ”
এই ঘটনার পরের বছর, অর্থাৎ ১৯৪২ সালে অসুস্থ হয়ে পড়েন নজরুল এবং বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন। স্বাভাবিক জ্ঞানবুদ্ধিও তিনি হারিয়ে ফেলেন। ফলে কবির সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর আর স্বাভাবিক কথোপকথন হয়নি। কিন্তু নজরুলের বিদ্রোহী চেতনা সব সময় তাঁকে যে উদ্দীপ্ত করেছে, তা স্পষ্টভাবে বোঝা যায়।

*নজরুলের দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু*
রাজনৈতিক জীবনে বঙ্গবন্ধু বার বার কারারুদ্ধ হচ্ছিলেন। জেলে থাকার সময় কাজী নজরুলের কবিতা ‘বিদ্রোহী’, ও গান ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’সহ নানা সৃষ্টিকর্ম তাকে অনুপ্রাণিত করেছে। এটি বোঝা যায় বঙ্গবন্ধুর একটি প্রবন্ধ থেকে।
১৯৫৩ সালের ২৩ মে ঢাকায় মুসলিম ছাত্রলীগের উদ্যোগে রবীন্দ্র-নজরুলজয়ন্তী অনুষ্ঠান হয়েছিল। এ উপলক্ষে কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে বঙ্গবন্ধু একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন। কিন্তু তিনি ওই সময় করাচিতে ছিলেন। তাঁর অনুপস্থিতিতে প্রবন্ধটি পাঠ করেছিলেন মোশারফ হোসেন চৌধুরী। দেশের সে সময়কার পরিস্থিতিতে বিদ্রোহী কবির জীবনাদর্শ ছাত্র-যুবক ও সাধারণ মানুষের কতখানি প্রয়োজন, সেই প্রবন্ধে বঙ্গবন্ধু তা তুলে ধরেছিলেন।

*আবার দুজনের দেখা*
১৯৫৪ সালে বঙ্গবন্ধু পূর্ব বাংলার মন্ত্রী থাকা অবস্থায় অসুস্থ কবি কাজী নজরুলকে কলকাতায় দেখতে গিয়েছিলেন। কবি তখন থাকতেন টালাপার্কের মন্মথ দত্ত রোডের একটি বাড়িতে। সে সময় এই দুই ভুবনের দুই বিপ্লবীর কথোপকথন সম্ভব হয়নি। শুধু অভিব্যক্তি বিনিময় হয়েছিল।
বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কাজী নজরুল ইসলামের সবচেয়ে বড় মিল হলো দুজনেই বাঙালির স্বাধীনতা চেয়েছিলেন। নজরুলের গান ও কবিতা যুগে যুগে বাঙালির জীবন সংগ্রাম ও স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করেছে।

*নজরুলের বিচিত্র জীবন*
পশ্চিমবঙ্গের চুরুলিয়া গ্রামের দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া এই কবির জীবন কেটেছে বিচিত্র অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে। দরিদ্রতার কারণে তাঁকে ছোটবেলায় মসজিদে খাদেমের কাজ করতে হয়েছে। সেখান থেকে রুটির দোকানে কাজ করেছেন। এরপর লেটোর দলে ভিড়ে গানের আসরে মন্দিরা বাদকের কাজ করেছেন।
বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯১৭ সালের শেষদিকে সেনাবাহিনীতে নাম লেখান নজরুল। প্রায় আড়াই বছরের সৈনিক জীবনে সাধারণ সৈনিক কর্পোরাল থেকে কোয়ার্টার মাস্টার হাবিলদার পর্যন্ত হয়েছিলেন ৪৯ বেঙ্গল রেজিমেন্টে। এখানে থাকতেই ফারসি ভাষা শেখেন। এই সময় তিনি করাচিতে ছিলেন। যুদ্ধের মধ্যেই তিনি কবিতা লিখছিলেন।
১৯২০ সালে যুদ্ধ শেষ হলে ৪৯ বেঙ্গল রেজিমেন্ট ভেঙে দেওয়া হয়। এরপর নজরুল কলকাতায় ফিরে আসেন। ১৯২২ সালে তাঁর বিদ্রোহী কবিতা প্রকাশিত হলে তুমুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। এরপর একের পর এক ব্রিটিশবিরোধী কবিতা ও গান রচনা করেন। ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ কবিতার কারণে তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হয় এবং তাঁকে জেলে পাঠানো হয়।
বঙ্গবন্ধু আর জাতীয় কবির মধ্যে মিল হলো, বাঙালির মুক্তির দাবি তুলে পাকিস্তানি শাসকদের রোষানলে পড়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। আর কাজী নজরুল পড়েছিলেন ব্রিটিশ শাসকদের রোষানলে।
দেশ ভাগের পর পূর্ব বাংলার নাম বদলে রাখা হয় পূর্ব পাকিস্তান। বাঙালির ভাষা, স্বাধিকার, মৌলিক চাহিদা-সব কিছুর ওপর শোষণ চালাচ্ছিল পশ্চিম পাকিস্তান। সেই পাকিস্তানের কবল থেকে বঙ্গবন্ধু বাঙালিকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে নির্দেশ দিলেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জন করল বাঙালি।

*দেশ স্বাধীন হলো, নজরুল আমাদের জাতীয় কবি হলেন*
১৯৭২ সালে দেশে ফিরে স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হয়ে বঙ্গবন্ধু কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবি ঘোষণা করলেন। কবির লেখা ‘চল চল চল’ গানটিকে বাংলাদেশের রণসংগীত হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হলো। বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগে ভারত থেকে কবিকে ১৯৭২ সালের ২৪ মে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়।
ধানমন্ডির ২৮ নম্বর সড়কের ৩৩০ নম্বর বাড়িটি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে কবিকে বরাদ্দ দেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধু নিজেই কবির বাসভবনের নাম দিলেন ‘কবিভবন’।

*দুটি ট্র্যাজেডি, বাঙালির দুটি শোক*
দীর্ঘ ৩০ বছরেরও বেশি সময় বাকরুদ্ধ থাকা কবি ১৯৭৫ সালের ২২ জুলাই ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে পিজি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে তাঁকে হাসপাতালের ১১৭ নম্বর কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। কাজী নজরুল ইসলাম সেখানে ভর্তি থাকা অবস্থায় পরের মাসের ১৫ তারিখে, অর্থাৎ ১৫ আগস্টে ঘাতকের বুলেটে পরিবারের অধিকাংশ সদস্য ও আত্মীয়-পরিজনসহ শাহাদত বরণ করেন রাজনীতির কবি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
এরপর কাজী নজরুল ইসলাম পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন এক বছর এক মাস আট দিন। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

যে কথাটি বলতে চাই, তা হলো বঙ্গবন্ধু উজ্জীবিত হতেন কাজী নজরুল পাঠ করে। বঙ্গবন্ধুর প্রিয় কবিতার একটি ছিল নজরুলের লেখা, ‘নমঃ নমঃ নমঃ, বাংলাদেশ মম’। কাজী নজরুল লিখেছিলেন-“বাংলা বাঙালির হোক। বাংলার জয় হোক, বাঙালির জয় হোক।”
এটি প্রায় নিশ্চিত যে, বঙ্গবন্ধু এখান থেকেই বাঙালির মুক্তির স্লোগান হিসেবে ‘জয় বাংলা’ কথাটি নিয়েছিলেন।
আজ আমাদের জাতির পিতা কিংবা জাতীয় কবি কেউই বেঁচে নেই। কিন্তু তাঁর মৃত নন। তাঁরা আমাদের মনের মধ্যে বেঁচে আছেন। আমাদের জাতীয় কবির এই জন্মবার্ষিকীর পূণ্যক্ষণে তাঁর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা রইল। তাঁর বিদ্রোহী চেতনায় উদ্দীপ্ত জাতির পিতার প্রতিও আমাদের অগাধ শ্রদ্ধা।

লেখক : পুলিশ সুপার, শেরপুর।

সর্বশেষ - ব্রেকিং নিউজ

Shamol Bangla Ads
error: কপি হবে না!