শেরপুর সদর উপজেলার প্রতাবিয়া এলাকায় আব্দুর রফিক (৫৫) নামে এক কৃষককে হত্যা রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ৫ ভাতিজা মিলে আপন চাচা আব্দুর রফিককে খুন করে বাড়ির পাশে একটি মেহগনি গাছের বাগানে ফেলে রাখে। ওই হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত আলামত উদ্ধার এবং ঘটনায় জড়িত ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ৫ মে শুক্রবার বিকেলে নিজ কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে লোমহর্ষক ওই তথ্য জানান পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান বিপিএম। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছেন প্রতাবিয়া গ্রামের মৃত আব্দুল মোতালেবের ছেলে মো. ওয়াসিম মিয়া (৩৪), মো. জসিম মিয়া (৩৬), মো. জিয়ার আলী (৩৮), মো. আলম মিয়া (২৮) ও মো. ফয়সাল মিয়া (২৫)।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ২০ জানুয়ারি জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে খবর পেয়ে শেরপুর সদর উপজেলার বাজিতখিলা ইউনিয়নের প্রতাবিয়া পূর্বপাড়া এলাকায় একটি মেহগনি কাঠ বাগানের ভেতরে রফিক মিয়া নামে এক কৃষকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ঘটনায় নিহতের ছেলে নবী হোসেন বাদী হয়ে সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে রফিকদের প্রতিপক্ষ প্রতিবেশী কুদরত আলী আঙ্গুর, মস্তু মিয়া, সুলতান, কেনা, রস্তমসহ ৯ জনের নাম দেওয়া হয়। ওই মামলার সাক্ষী ছিলেন নিহত রফিকের ৫ ভাতিজা। তদন্তের এক পর্যায়ে পুলিশ ভিন্ন ঘটনার তথ্য প্রমাণ পায়।
পরে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রফিকের ভাতিজাদের আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় ওই এলাকার জনৈক রাজু মিয়া স্বপ্রণোদিত হয়ে পুলিশের কাছে ঘটনার বিষয়বস্তু খুলে বলে এবং ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। জবানবন্দিতে রাজু জানায়, ঘটনার দিন রাতে তাকে (রাজু) দিয়েই ভাতিজারা চাচা রফিককে বাড়ি থেকে ডেকে আনে। পরে চাচা আর বাড়িতে ফিরে নাই। এরপর ভাতিজাদের আদালতের আদেশে একদিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। পুলিশ রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদকালে তারা রফিককে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।
তারা জানায়, পূর্বের মামলার বিষয়ে আলোচনা করার কথা বলে রফিক মিয়াকে বাড়ি থেকে ডেকে এনে প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর জন্য তারাসহ আরও কয়েকজন মিলে রফিক মিয়াকে কাঠ বাগানের ভেতরে নিয়ে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। পরে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাপাতি ঘটনাস্থলের ১৫০ গজ পূর্ব দিকে রফিক মিয়ার পুকুরেই ফেলে দেয়। ওই তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার ভোর ৪টা থেকে ৪টি সেচ পাম্প দিয়ে পুকুরের পানি সেচে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত চাপাতি ধৃত আসামী মো. ওয়াসিম মিয়ার শনাক্তমতে উদ্ধার করা হয়। আসামিদের রিমান্ড শেষে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এ্যান্ড অপস্) মো. সোহেল মাহমুদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. সাইদুর রহমান, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বছির আহমেদ বাদল, ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মোহাম্মদ মুশফিকুর রহমান, ডিআইও-১ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সদর থানার এসআই খন্দকার সালেহ্ আবু নাঈমসহ জেলায় কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।