প্রবেশপত্র না পাওয়ায় চলমান এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার ঘাগড়া দক্ষিণপাড়া ফজলুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. শামীম। ফরম ফিলাপের সময় বকেয়া এক হাজার টাকা না দেয়ায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল হক তার প্রবেশপত্র আটকে দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। শামীম উপজেলার জুলগাঁও গ্রামের কৃষক মৃত আব্বাস আলীর ছেলে।
শিক্ষার্থী শামীম জানায়, তার বিদ্যালয়ের সব এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ফরম ফিলাপের জন্য তিন হাজার টাকা করে নেন প্রধান শিক্ষক নুরুল হক। সবাই ফরম ফিলাপের টাকা দিলেও সে দুই হাজার টাকা দেয়। এক হাজার টাকা না দেয়ায় সব পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র দিয়ে দিলেও শামীমের প্রবেশপত্র দেননি প্রধান শিক্ষক। কয়েকবার প্রধান শিক্ষকের কাছে স্কুলে গিয়ে প্রবেশপত্র চাইলে তাকে বলা হয় বকেয়া টাকা নিয়ে পরীক্ষার কেন্দ্রে থাকতে। কিন্তু কেন্দ্রে উপস্থিত থেকে শেষ পর্যন্ত প্রবেশপত্র হাতে না পাওয়ায় পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি সে।
এ ব্যাপারে শামীম জানায়, পরীক্ষা দিতে যাইয়া দেখি কোনো স্যার আসে নাই। পরে সওদাগর ভাইরে নিয়ে কয়েকটা কেন্দ্র ঘুরে স্যারকে পেলাম। তখন স্যার বললেন রাতে নিস। আমি বললাম রাতে নিয়া কী করমু। পরে স্যার কিছু না বলে চলে গেল।
মা শিরিনা বেগম অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার স্বামী মারা গেছে। আমি অনেক কষ্ট করে ভাইয়ের বাড়িতে থেকে পোলাডারে পড়াইতাছিলাম। কিন্তু স্যার আমার পোলাডার সর্বনাশ করে দিছে। ১ হাজার টাকার জন্য আমার পোলারে এডমিট দেয় নাই। এর জন্য পোলা আমার পরীক্ষায় দিতে পারল না। ওর জীবনডা এক বছরের জন্য পিছায় গেল। এই ক্ষতি কে পোষাবে আমাদের। আমি সরকারের ওই শিক্ষকের বিচার চাই।
শামীমের মামা আজাদ মিয়া বলেন, ‘আমার ভাগিনা শামীমের বাবা নেই। তারা আমার ওখানে থাকে। তার কী অপরাধ ছিল যে পরীক্ষা দিতে পারল না। ১ হাজার টাকার জন্য আমার ভাগিনার এডমিট কার্ড দেয়া হয় নাই। এতিম ছেলেদের তো মানুষ এমনিতেই সাহায্য করে। সে পরীক্ষা না দিতে পারায় তার ভবিষ্যৎটা অন্ধকার হয়ে গেল। আমি সরকারের কাছে প্রধান শিক্ষক নুরুল হকের সুষ্ঠু বিচার চাই।’
এ অভিযোগ পাওয়ার পর মোবাইল ফোনে বারবার ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক নুরুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। একপর্যায়ে তার ভাইকে দিয়ে তার ব্যাবহৃত মোবাইল ধরায়। তার বাড়িতে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
মালিঝিকান্দা ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোজাম্মেল হক বলেন, শামীম নামের ছেলেটার ফরম ফিলাপ বা এডমিট না পাওয়ার বিষয়টা আমাকে কেউ জানায় নাই। আমি বিষয়টা জানলে আমার পরিষদ বা ব্যক্তিগতভাবে সহযোগিতা করতাম। আমি ঘটনাটি শোনার সঙ্গে সঙ্গে ছেলের বাসায় এসে কথা বলে গেলাম। এই ঘটনাটি যদি প্রধান শিক্ষক করে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে প্রসাশনিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জোর দাবি জানাই।
এ ব্যাপারে ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফারুক আল মাসুদ বলেন, আমাকে এ বিষয়টি মৌখিকভাবে জানানোর পরে তাদের উপজেলায় আসতে বলা হয়েছে। আর একটি অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু এখনো তারা কোনো অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।