‘জুম্মার নামাজ পইড়া স্বামী আমার বাপধনরে (ছেলেকে) ডাক্তার দেহাইতে নিয়া গেছিলো। কিন্তু ফিরা তো আইলো লাশ হইয়া। আমি অহন কি নিয়া বাঁচমু? স্বামীর রোজগারেই সংসার চলতো। অহন আমার সংসার চলবো কি কইরা? অবুঝ মেয়েটারেই মানুষ করমু কেমনে?’- ১৩ জানুয়ারি শুক্রবার সন্ধ্যায় শেরপুর শহরের তাতালপুর এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত স্বামী সন্তানকে হারিয়ে শনিবার সকালে নালিতাবাড়ী উপজেলার দোহালিয়া গ্রামের নিজ বাড়িতে এভাবেই বিলাপ করছিলেন রূপসী বেগম। সড়ক দুর্ঘটনায় স্বামী ও ছেলেকে হারিয়ে এখন পাগলপ্রায় তিনি।

শুক্রবার সন্ধ্যায় ছেলেকে নিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে বাড়িতে ফেরার পথে ট্রাক ও সিএনজির মুখোমুখি সংঘর্ষে বাবা-ছেলের মৃত্যুর ঘটনায় পরিবারে চলছে শোকের মাতম। বাবা-ছেলের এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না স্বজন ও এলাকাবাসী। পরে শনিবার দুপুরে পশ্চিম দোহালিয়া ঈদগাহ মাঠে জানাজা নামাজের পর সামাজিক কবরস্থানে বাবা-ছেলের দাফন সম্পন্ন হয়।
এর আগে শুক্রবার রাতে শেরপুর-নালিতাবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কের তাতালপুর ও মির্জাপুর রোডে ট্রাক-সিএনজির মুখোমুখি সংঘর্ষে নালিতাবাড়ী উপজেলার রাজনগর ইউনিয়নের দোহালিয়া গ্রামের মৃত জালাল উদ্দীনের ছেলে রফিকুল ইসলাম (৪৫), তার ছেলে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী রাব্বি (১০) ও ঝিনাইগাতী উপজেলার তিনআনি এলাকার আবুল কালামের ছেলে জুবাইল (২০) নিহত হন। এছাড়াও একই ঘটনায় দোহালিয়া গ্রামের আবেদ আলীর ছেলে মোহাম্মদ আলী (৪৫) ও ফুল মোহাম্মদের ছেলে মো. হাবিব (৩৫) এবং ঝিনাইগাতী উপজেলার মালিঝিকান্দা এলাকার সুভাষ পালের ছেলে শুভ পাল (১৫) আহত হন।

শনিবার সকালে নালিতাবাড়ী উপজেলার দোহালিয়া গ্রামে নিহতের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, রফিক ও তাঁর ছেলে রাব্বীর লাশ বাড়ির আঙিনায় খাটিয়াতে রাখা আছে। তাঁর পাশে স্বজন ও এলাকাবাসী ভিড় করে আছেন। কেউ কেউ জানাজা ও দাফনের জন্য প্রয়োজনীয় সকল কিছু প্রস্তুত করছেন।
এদিকে স্বামী সন্তান হারিয়ে ঘরের দরজার সামনে চার বছরের মেয়ে রাইসাকে জড়িয়ে ধরে বিলাপ করে কাঁদছেন রূপসী বেগম। এলাকার মহিলা ও স্বজনেরা তাঁকে স্বান্তনা দিচ্ছেন। অন্যদিকে ছেলে ও নাতির শোকে স্ট্রোক করেছেন রফিকের মা।
রূপসী বেগম বিলাপ করে বলেন, ‘এই দুনিয়ায় আমার আর কিচ্ছু রইলো না। ছোট্ট মেয়েটারে নিয়া আমি এহন অন্ধকারে পইড়া রইলাম। পুলাডারে ডাক্তার দেহাবার গিয়া যে স্বামী-পুলার লাশ আইবো তা আমি কল্পনাও করি নাই। আমি ঘাতক ড্রাইভারের বিচার চাই।’
এদিকে ঝিনাইগাতী উপজেলার নিহত জুবাইলের চাচা সারোয়ার জাহান সিদ্দিকী সোহাগ বলেন, সে আমার কাছে দর্জির কাজ শিখতো। কাল রাতেও কাজ শিখে বাড়ি ফেরার পথে ছেলেটা মারা যায়।
শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক শাহ নেওয়াজ নোমান বলেন, হাসপাতালে তিনজনকে মৃত অবস্থায় নিয়ে আসা হয়। আরও তিনজন আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এ ব্যাপারে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বছির আহম্মেদ বাদল শনিবার দুপুরে বলেন, ওই ঘটনায় সদর থানায় একটি নিয়মিত মামলা রুজু হয়েছে। দুর্ঘটনাকবলিত ট্রাক ও সিএনজিটিকে জব্দ করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। দুর্ঘটনায় নিহত ৩ জনের লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই হস্তান্তরের জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছে।