সেচ সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে শেরপুরের ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী সীমান্তে জাপান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (জাইকা) ক্ষুদ্র পানিসম্পদ-২ প্রকল্পের আওতায় মাটির নিচ দিয়ে পাইপ লাইন নির্মাণ কাজ চলছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতায় ঝিনাইগাতী উপজেলার নলকুড়া ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত মহারশি নদীর হলদীগ্রাম থেকে ৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ পাইপ লাইনটি নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। এ পাইপ লাইন দিয়ে পানি সরবরাহ করা হবে নালিতাবাড়ী উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের সমশ্চুড়া, কোচপাড়া, জাঙ্গালপাড়া, ধূপারপাড় এবং ঝিনাইগাতী উপজেলার দেওয়ানগঞ্জপাড়া, মানিককুড়াসহ আরও কয়েকটি এলাকায়। অন্যদিকে এ পাইপ লাইনটি নির্মাণ করা হলে ওইসব এলাকার ৫শ একর অনাবাদি পাহাড়ি জমিতে পাবে সেচ সুবিধা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্র জানায়, সেচ সুবিধার অভাবে যুগযুগ ধরে নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতী উপজেলার বিস্তৃত পাহাড়ি জমি অনাবাদি থাকছে। এজন্য দুই উপজেলার অনাবাদি ৫শ একর জমিতে সেচ সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষি বিভাগের তত্বাবধানে এলজিইডির আওতায় জাইকার অর্থায়নে ওই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। কারণ শুষ্ক মৌসুমে ওইসব পাহাড়ি এলাকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যায় কয়েকশ ফুট নিচে। এছাড়া ওইসব এলাকার মাটির নিচে পাথর থাকার কারণে গভীর-অগভীর কোন নলকূপ স্থাপন করা সম্ভব হয় না। ফলে সেচের বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে ২০১০ সালে পোড়াগাঁও ইউনিয়নের সমশ্চুড়া গ্রামের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত ছোট্ট একটি খাল অঞ্জনাঝোড়ায় একটি স্লুইস গেইট নির্মাণ করা হয়। এ স্লুইস গেইটের পানি সেচ কাজে ব্যবহার করে প্রায় ১শ একর অনাবাদি পাহাড়ি জমি চাষাবাদের আওতায় আনা হয়। এটি পরিচালনার জন্য গঠন করা হয় অঞ্জনাঝোড়া পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি। এ সমিতির আওতায় ৭শ কৃষক রয়েছে।
এ সমিতির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম বলেন, ওই স্লুইস গেইটের পানি সেচ কাজে ব্যবহার করে ১শ একর অনাবাদি জমি আবাদের আওতায় আনা হলেও উল্লেখিত এলাকাগুলোতে আরও প্রায় ৫শ একর জমি সেচ সুবিধার অভাবে চাষাবাদের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। এজন্য বছরের পর বছর অনাবাদি থাকছে জমিগুলো। অপরদিকে ২০১৬ সালে ঝিনাইগাতী উপজেলার নলকুড়া ইউনিয়নের শালচুড়ায় মহারশি নদীতে জাইকা’র অর্থায়নে প্রায় ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি রাবারড্যাম নির্মাণ করা হয়। এ রাবারড্যামের পানি সেচ কাজে ব্যবহার করে উপজেলার নলকুড়া ও গৌরীপুর ইউনিয়নের ২০টি এলাকায় প্রায় ২ হাজার একর অনাবাদি জমি আবাদের আওতায় আনা হয়েছে। কৃষকরা পাচ্ছে স্বল্প মূল্যে সেচসুবিধা।

এতে কৃষি ক্ষেত্রে এসেছে ব্যাপক উন্নয়ন ও পরিবর্তন। কিন্তু প্রতিবছর এ রাবারড্যামের অনেক পানি অপচয় হয়। আর পানির অপচয় রোধে জাইকা’র পক্ষ থেকে কৃষিক্ষেত্রে উন্নয়ন সাধনের লক্ষে ২০১৬ সাল থেকে অপচয়কৃত পানি কাজে লাগিয়ে চাষাবাদ পদ্ধতি বাড়াতে বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে চালানো হয় জরিপ কাজ। পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণও করা হয়। সাবেক কৃষিমন্ত্রী, কৃষি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেগম মতিয়া চৌধুরীর দিক-নির্দেশনায় পোড়াগাঁও ইউনিয়নের যুগযুগ ধরে অনাবাদি ওই ৫শ একর পাহাড়ি জমি চাষাবাদের আওতায় আনতে জাইকার ক্ষুদ্র পানিসম্পদ প্রকল্প-২ এর আওতায় ২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ব্যয়ে মাটির নিচ দিয়ে পাইপ লাইন নির্মাণ কাজ হাতে নেয় এলজিইডি। টেন্ডারে ঠিকাদার নিয়োগের মাধ্যমে ২০২১ সালে শুরু করা হয় নির্মাণ কাজ। এলজিইডির তত্ত্বাবধানে শেরপুরের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আকরাম এন্টারপ্রাইজ নির্মাণ কাজটি করছে।
অঞ্জনাঝোড়া পানি ব্যবস্থাপনা সমিতির সভাপতি উমর ফারুক সাগর বলেন, জাইকার এ প্রকল্পের কাজ হাতে নেওয়ায় স্থানীয় বিএডিসিসহ অন্যান্য সেচ প্রকল্পের উচ্চমূল্যে পানি ব্যবসায়ীদের মধ্যে শুরু হয়েছে গাত্রদাহ। কারণ তাদের কাছ থেকে পানি নিতে একর প্রতি কৃষকদের গুনতে হয় ৭ হাজার টাকা। আর জাইকার অর্থায়নে এ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত পাইপ লাইনের পানিতে কৃষকদের দিতে হবে প্রতি একর জমিতে ৩ হাজার টাকা।
নালিতাবাড়ী উপজেলা প্রকৌশলী রকিবুল আলম রাকিব বলেন, পাইপ লাইনের নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, চলতি মৌসুমেই পাইপ লাইনের পানি সেচ কাজে ব্যবহার করা সম্ভব হবে। আধুনিক পদ্ধতিতে নির্মিত পাইপ লাইনের মাধ্যমে সুইচ টিপে কৃষকদের ক্ষেতে পানি দেয়া হবে। এতে কৃষকরা পাবেন স্বল্পমূল্যে পরিবেশবান্ধব সেচ সুবিধা।
এ ব্যাপারে শেরপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ পাইপ লাইনের পানিতে ওই এলাকার অনাবাদি ৫শ একর পাহাড়ি জমি আবাদের আওতায় আসবে। কৃষকরা পাবেন স্বল্পমূল্যে সেচ সুবিধা। কৃষিক্ষেত্রে আসবে ব্যাপক উন্নয়ন ও পরিবর্তন।