নারজিনা আফরিন তৃষা; শেরপুরের এক কলেজশিক্ষার্থী। তিনি মাত্র ৪ দিন বয়সী কন্যা শিশুকে নিয়ে চলতি ২০২২ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় বসে ইচ্ছাশক্তি আর মনের জোরের এক অনন্য উদাহরণ হয়ে উঠেছেন। তৃষা শেরপুর সরকারি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী হয়ে এবার স্থানীয় সরকারি মহিলা কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন।

জানা যায়, কলেজে পড়াবস্থায় ২০২১ সালের শেষের দিকে শ্রীবরদী উপজেলার গড়জরিপা এলাকার মৃত শিক্ষক রফিকুল ইসলাম আকন্দের মেয়ে নারজিনা আফরিন তৃষার বিয়ে হয় শেরপুর শহরের সজবরখিলা এলাকার মো. আনোয়ার হোসেনের ছেলে মেহরাব হাসান মুনের সাথে। পরে চলতি বছরের ২ নভেম্বর শেরপুর শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাদের একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। আর ৬ নবেম্বর রবিবার থেকে তৃষার এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয়। তৃষা সিদ্ধান্ত নেন নবজাতক শিশুকে নিয়েই পরীক্ষায় অংশ নেবেন তিনি। গত রবিবার বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি।
মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে শেরপুর সরকারি মহিলা কলেজ পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, তিনি বাংলা দ্বিতীয় পত্র লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। আর তার শিশু কন্যাকে নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্র চত্বরে অপেক্ষা করছেন তার শাশুড়ি মোছা. সুলতানা মোহসিনা। পরীক্ষা শেষে কথা হয় পরীক্ষার্থী তৃষার সাথে। তিনি জানান, আমি পরীক্ষা ভালোই দিচ্ছি। এখানে স্যারদের সহযোগিতা পাচ্ছি। কিন্তু অনেকক্ষণ বসে থেকে পরীক্ষা দিতে হয় বলে শারিরীক কিছু সমস্যা হয়। আমার শাশুড়ি মা পরীক্ষার সময় আমার মেয়ের দেখভাল করছেন। আমার স্বামী ও পরিবার আমাকে বেশ উৎসাহ দিয়েছে। একইসাথে আমার নিজেরও আগ্রহ ছিলো পড়াশোনা শেষ করার। এজন্যই পরীক্ষাটা দিতে পারছি। তা না হলে চারদিনের বাচ্চা নিয়ে পরীক্ষা দিতে আসতে পারতাম না।

তৃষার শাশুড়ি মোছা. সুলতানা মোহসিনা বলেন, আমার বউমা খুবই মেধাবী একজন শিক্ষার্থী। তার ইচ্ছেশক্তিও প্রচুর। এজন্য আমরা তাকে সাহস ও উৎসাহ দিচ্ছি সবসময়। সে যে পর্যন্ত পড়াশোনা করতে চায় আমরা তার পাশে থাকবো। সে যখন পরীক্ষা দেয় তখন আমি পরীক্ষা কেন্দ্রের পাশেই নাতনীকে নিয়ে বসে থাকি। আমাকেও কেন্দ্রে আগত অন্যান্য অভিভাবকগণ ও শিক্ষকরা সহযোগিতা করছেন।
এ বিষয়ে শেরপুর সরকারি মহিলা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও কেন্দ্র সচিব মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ওই পরীক্ষার্থী তার শ্বাশুড়ি মার কাছে বাচ্চা রেখে এই কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছে। আমরা তাকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছি যাতে সে নির্বিঘ্নে ও শান্তিপূর্ণভাবে পরীক্ষা দিতে পারে। তিনি আরও বলেন, এত ছোট বাচ্চা রেখে পরীক্ষার হলে বসা বিশাল ব্যাপার। তার মনের ইচ্ছা ছিলো বলেই এটি সম্ভব হয়েছে।
