শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয়েছে রোম্যান ক্যাথলিক খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের দুই দিনব্যাপী ২৫ তম বার্ষিক ফাতেমা রাণীর তীর্থোৎসব। এ উৎসবকে ঘিরে বৃহত্তর ময়মনসিংহ খ্রিস্টধর্ম প্রদেশের খ্রিস্টান ও দেশ বিদেশের পূণ্যার্থীদের অংশগ্রহনে গারো পাহাড় পরিণত হয়েছে রোম্যান ক্যাথলিক খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের মিলন মেলায়। প্রতি বছরের মতো এবারও অর্ধলক্ষ ক্যাথলিকদের মোমের আলোক মিছিলে আলোকিত হয় গারো পাহাড়।

‘মিলন, অংশ গ্রহন ও প্রেরনকর্মে মা মারিয়া’ এই মূলসুরের উপর ভিত্তি করে তীর্থোৎসবে যোগ দেন প্রায় ৫০ হাজার দেশি-বিদেশি রোমান ক্যাথলিক খ্রিষ্টভক্ত।
আয়োজক কমিটি সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বারোমারীতে ফাতেমা রানির তীর্থস্থানটি পর্তুগালের ফাতেমা নগরের আদলে ও অনুকরণে ১৯৯৮ সালে স্থাপিত হয়। সেই থেকেই ফাতেমা রাণীর করুণা ও দয়া লাভের আশায় অক্টোবর মাসের শেষ বৃহস্পতি ও শুক্রবারে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে তীর্থযাত্রীরা সমবেত হচ্ছেন এই তীর্থোৎসবে।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে পুনর্মিলনী, পাপ স্বীকার এবং বিকেলে পবিত্র খ্রিষ্টযাগের মধ্য দিয়ে তীর্থ উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। পরে রাতে আলোক শোভাযাত্রায় অংশ নেন দেশ বিদেশের প্রায় ৫০ হাজার পূণ্যার্থী, পরে আরাধ্য সাক্রান্তের আরাধনা, নিরাময় অনুষ্ঠান ও নিশি জাগরণের মধ্য দিয়ে শেষ হয় প্রথম দিনের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান।
দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা প্রায় ৫০ হাজার খ্রিষ্টভক্ত নিজেদের পাপ মোচনে মোম জ্বালিয়ে আলোর মিছিলে অংশ গ্রহণ করেন। এ সময় প্রায় ২ কিলোমিটার পাহাড়ি ক্রুশের পথ অতিক্রম শেষে মা মারিয়ার প্রতিকৃতির সামনে সমবেত হয়ে ভক্তি শ্রদ্ধা জানিয়ে অকৃপণ সাহায্য প্রার্থনা করেন ক্যাথলিক ভক্তরা।
ওইসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তার, পুলিশ সুপার কামারুজ্জামান রাসেল, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হেলেনা পারভীন, নালিতাবাড়ী পৌরসভার মেয়র আবু বক্কর সিদ্দিক, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমদাদুল হক প্রমুখ।
এ উৎসবের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে মোমবাতি প্রজ্বালন করে আলোক মিছিল করা। তবে গত দুই বছর করোনার কারণে সীমিত পরিসরে পালন করা হয় এ উৎসব। তবে এ বছর উৎসবমুখর পরিবেশে আলোক মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বগুড়া থেকে আসা অর্পিতা ম্রং বলেন, এখানে এসে যা চাওয়া হয় তাই পেয়ে থাকি। পরিবারের সবাই মিলে প্রতিবছরের মতো এবারেও এসেছি। অন্য বছরের চেয়ে এবার আমাদের আনন্দটাও বেশি।
ময়মনসিংহ থেকে আসা সুস্মি চাম্বুগং বলেন, মায়ের কাছে আমাদের অনেক চাওয়া পাওয়া ও মানত থাকে। সেগুলো পূরণের লক্ষ্যেই পরিবারের সকলে মিলে এসেছি।
পরে গতকাল শুক্রবার সকালে জীবন্ত ক্রুশের পথ অতিক্রম ও মহাখ্রিষ্টযাগের মধ্য দিয়ে দুই দিনব্যাপী ২৫ তম তীর্থোৎসবের সমাপ্তি ঘোষণা করেন এবারের র্তীর্থোৎসবের প্রধান বক্তা ঢাকার বনানীর মেজর সেমিনারীর প্রাক্তন রেক্টর রেভারেন্ট ফাদার গাব্রেল কোরাইয়া।
