শেরপুরের শ্রীবরদীতে শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে সোনালী ভবিষ্যতের স্বপ্ন নিয়ে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে মো. মিষ্টার মিয়া। সে ঝিনাইগাতী উপজেলার আহম্মদনগর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে। মিষ্টার উপজেলার জুলগাঁও গ্রামের মৃত আব্দুল আজিজের ছেলে।

মিষ্টারের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, তার বাবা আব্দুল আজিজ জুলগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। মা ২০০২ সালে মারা যাওয়ার পর বাবা বিয়ে করেন। পরে ২০০৬ সালে বাবা মারা যান। বাবার প্রথম ঘরে রেখে যান ৪টি ভাই। এরমধ্যে সবার বড় ও মেজো ভাই ঢাকায় পোষাক শ্রমিক, আরেক ভাই কৃষি কাজ করে ও মিষ্টার সবার ছোট। এছাড়া তাদের বাবার আরও তিন মেয়ে রয়েছে। বাবা মারা যাওয়ার পর অভাব-অনটনের সংসারেও মিষ্টার পড়াশোনা চালিয়ে যায়। এরই ধারাবাহিকতায় জুলগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিএসসি ও ঘাঘড়া এফ রহমান উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসি পাশ করে সে। পরে আহম্মদনগর উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। সেখান থেকেই সে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। তার পরীক্ষার কেন্দ্র পড়েছে ডা. সেরাজুল হক টেকনিক্যাল এন্ড কৃষি ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউটে। তার ভাইয়েরা সংসারের খরচ বহন করে। আর মিষ্টারের প্রতিবন্ধি ভাতা দিয়ে পড়াশোনার খরচের পাশাপাশি পরিবারের কাজেও খরচ করে।
মিষ্টার জানায়, প্রবল ইচ্ছাশক্তি আর আত্মবিশ্বাসকে পুঁজি করেই এ পর্যন্ত এসেছি। প্রতিবন্ধি জীবনকে আমি স্বাভাবিকভাবেই মেনে নিয়ে লেখাপড়া করে যাচ্ছি। আমার হাঁটতে ও কথা বলতে সমস্যা হয়। তারপরও আমি পড়াশোনা বাদ দিবো না। আমার ইচ্ছা আমি কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হবো। আমার এটাই আসল স্বপ্ন।

ঝিনাইগাতী বণিক সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটি সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবী জাহিদুল হক মনির বলেন, এই সমাজের প্রতিবন্ধি শিক্ষার্থীদের সরকারি ও বেসরকারিভাবে সহযোগিতা করা প্রয়োজন। কারণ তারাও মানুষ, তাদেরকেও মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনা দরকার। ইচ্ছাশক্তির কারণে মিষ্টার যে এখনো পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে এতে আমরা তার থেকেও শিক্ষা নিতে পারি। ঝিনাইগাতীবাসী তার জন্য গর্বিত।
এ ব্যাপারে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রেজুয়ান বলেন, এবার এসএসসি পরীক্ষায় ঝিনাইগাতীর এক প্রতিবন্ধি পরীক্ষা দিচ্ছে। শুনেছি সে অত্যন্ত মেধাবী। তার পরীক্ষা আমরা গুরুত্বসহকারে নেয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। প্রতিবন্ধিরা যে সমাজের বোঝা নয়, তা সে প্রমাণ করে দিয়েছে সে। আমি তার সাফল্য কামনা করি।