বাঙালি জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় কলঙ্কের দিন ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। এদিন অর্থাৎ আজ থেকে ৪৭ বছর আগে ক্ষমতালিপ্সুদের প্রত্যক্ষ ইন্ধনে সেনাবাহিনীর বিপথগামী একটি দল নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল স্বাধীন বাংলার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের সদস্যদের। বাংলাদেশ ও বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা লাভ করে। কিন্তু ক্ষমতার মাত্র সাড়ে ৩ বছরের মাথায় দেশের স্থপতি ও নির্বাচিত রাষ্ট্রপ্রধানকে তার পরিবারের সদস্যসহ এমন ভয়াবহভাবে হত্যার ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।

এ কথা বলার অবকাশ রাখে না যে, সেদিন বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে পরবর্তীকালে দেশ ও জাতিকে বিপথগামী করার অপচেষ্টা চালানো হয়। বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতিকে পিছিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলতে থাকে। ১৫ আগস্টের পর ক্ষমতা দখলকারী সামরিক-বেসামরিক চক্র বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শগত অবস্থান ও লক্ষ্য থেকে সরিয়ে ধর্ম-সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করার তোড়জোড় শুরু করে। রাষ্ট্রের ওপর জনগণের মালিকানা বেদখল করে এবং সংবিধানের কর্তৃত্ব ধ্বংস করে। এ কাজে তারা সফলও হয়। হত্যাকারীদের বিচার থেকে রেহাই দিয়ে জারি করা হয় কুখ্যাত ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’। পরবর্তীতে দীর্ঘ ২১ বছর পর জাতির পিতার সুযোগ্য তনয়া শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ঐক্যমতের সরকার ক্ষমতাসীন হলে সেই অধ্যাদেশ বাতিল হয় এবং দেরিতে হলেও স্ব-পরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যা ও জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচার সম্পন্ন হয়। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের কয়েকজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। কিন্তু এখনও বিভিন্ন দেশে পালিয়ে রয়েছেন কয়েকজন। কাজেই পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে তাদের শাস্তি কার্যকরের এখনও সম্ভব হচ্ছে না। তবে সরকার প্রাণান্ত চেষ্টা করছে।
বাংলা ও বাঙালির মুক্তির জন্য নিজেকে উৎসর্গ করাই ছিল বঙ্গবন্ধুর সমগ্র জীবনের একমাত্র মহান ব্রত। তাই দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনে জেল-জুলুম, অত্যাচার-নির্যাতন আর স্বৈরশাসকের রক্তচক্ষু ছিল বঙ্গবন্ধুর নিত্যসঙ্গী। তিনি নিশ্চিত মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন বহুবার। একাধিকবার ফাঁসির মঞ্চ তৈরি হয়েছিল তার জন্য। বাঙালির প্রতি তার বিশ্বাস ও আস্থা ছিল আকাশচুম্বী সেজন্যই হাসিমুখে, নির্ভীকচিত্তে মানুষের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে সব ধরনের জুলুম-নির্যাতন বরণ করেছেন তিনি।

বঙ্গবন্ধু যে সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তা এগিয়ে নিতে হবে। দলমত নির্বিশেষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেশ ও জাতির সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে তার আপন মহিমায় প্রতিস্থাপন করা হলে জাতি হিসেবে সবাই গৌরবান্বিত হবে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশের যথাযথ রূপায়ণই হতে পারে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের সর্বোত্তম উপায়। সেই লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটানোই হোক জাতীয় শোক দিবসের অঙ্গীকারÑ এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
