পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ে যখন বাংলাদেশ হাঁটছিল উল্টো পথে, ইতিহাস থেকে তাঁকে বিচ্ছিন্ন করার ছলচাতুরী করা হচ্ছিল ব্যাপকভাবে, তখন কথাসাহিত্যিক আবুল ফজল লিখেছিলেন, ‘বাংলাদেশের সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ও সর্বাধিক উচ্চারিত নাম শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশের ইতিহাসে তিনি শুধু নির্মাতা নন, তার প্রধান নায়কও। …তাঁকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস রচিত হতে পারে না।’ তাঁর সেই ভবিষ্যদ্বাণী আজ অক্ষরে অক্ষরে সত্যি হয়েছে। আজ তিনি বাংলাদেশের হৃদয়জুড়ে অবস্থান করছেন।

২০০৪ সালের মাঝ এপ্রিলে বাংলা নববর্ষের প্রত্যুষে বিবিসি বাংলা সার্ভিসে তাদের শ্রোতা জরিপে হাজার বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে বঙ্গবন্ধু নির্বাচিত হয়ে বিশ্বকে অবাক করে দেন। কিন্তু আমরা তো জানি, একটি ভাষাগোষ্ঠীকে জাতিরাষ্ট্রে রূপান্তর করতে তিনি কতই না সংগ্রাম করেছেন। তাঁর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও ‘কারাগারের রোজনামচা’ পড়লেই যে কেউ বুঝতে পারেন, কীভাবে একটি জাতি গঠন প্রক্রিয়ায় তিনি শত বছরের ঐতিহ্যের সম্মতিকে থিতু করেছেন বাংলাদেশ নামের এই ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের ভূখণ্ডে। ধীরে ধীরে তিনি গড়ে তুলেছেন বাঙালির মানসপট। সেই মানসপটে প্রথমেই রয়েছে মানুষ ও তারপর বাঙালি। ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণি মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে সেই মানসতটে। ক্ষুধা, দারিদ্র্য, অপমানের জ্বালায় পিষ্ট একটি ভাষিক জনগোষ্ঠীকে তিনি নির্মাণ ও বিনির্মাণ করে বাঙালি জাতিতে রূপান্তর করেছেন। তাঁর বজ্রকণ্ঠে অনুরণিত হয়েছে হাজার বছরের নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর পুঞ্জীভূত অভিমান, আবেগ ও প্রতিবাদ। তাই এই কণ্ঠের অধিকারীর সঙ্গে যোগ রাখলেই পুরো সমাজ ও পরবর্তী সময়ে বাঙালি জাতির সঙ্গে যোগ রাখা হতো। সে কারণেই তিনি অনন্য, অসাধারণ। সব অর্থেই তিনিই বাংলাদেশ। একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। নিজে তিনি বেড়ে উঠেছেন সাহসের সঙ্গে, আর সেই সাহসের বীজ বপন করেছেন বেড়ে ওঠা বাঙালি জাতির জীবনে। অতীতের সব মহৎ অর্জন, বৃহৎ সাফল্য, ক্ষুদিরাম, সূর্য সেন, প্রীতিলতা, তিতুমীর, সুভাষচন্দ্র বসু, নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, জগদীশচন্দ্র বসু, শেরেবাংলা, সোহরাওয়ার্দী, মওলানা ভাসানীর মতো সাহসী নেতৃত্বের নির্যাস তিনি ধারণ করেছিলেন নিজের মধ্যে। আর সেই সাহসী নেতৃত্বের গুণাবলি ছড়িয়ে দিয়েছেন পুরো সমাজের ভেতর। তাঁর সক্রিয় নেতৃত্বের বিস্তৃতি ছিল তাই সর্বব্যাপী।
বরাবরই নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত তথা সাধারণ মানুষের মনোযোগের একেবারে কেন্দ্রে ছিলেন তিনি। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে তিনি দাপিয়ে বেড়িয়েছেন সারা বাংলাদেশে। ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী- সবার প্রিয় নেতার নাম শেখ মুজিবুর রহমান। কেউ ডাকতেন ‘মুজিব ভাই’ বলে, কেউ বা বলতেন ‘লিডার’। ‘৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান তাঁকে মুক্ত করার জন্যই ঘটেছিল। তাই তাঁরা তাঁকে ভালোবেসে ‘বঙ্গবন্ধু’ নামের কালজয়ী এক উপাধি দিয়েছিলেন। এই ভালোবাসার প্রতিদান তিনি তাঁর আপসহীন নেতৃত্বের মাধ্যমে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত দিয়ে গেছেন। আমাদের ভবিষ্যৎ নিস্কণ্টক করার জন্য তিনি তাঁর বর্তমানকে নিঃশঙ্কচিত্তে উৎসর্গ করে গেছেন।

তিনি ছিলেন গরিবের বন্ধু। সর্বক্ষণ তিনি ভাবতেন, কী করে সাধারণের মঙ্গল নিশ্চিত করা যায়। একেবারে কৈশোরে যে মানুষটি ক্ষুধার্ত মানুষের জন্য নিজেদের ধানের গোলা উন্মুক্ত করে দিতে পারেন, সেই তিনি যে গরিবের দুঃখ-বঞ্চনা হৃদয় দিয়ে অনুভব করবেন, সেটাই তো স্বাভাবিক। তাই তিনি হতে পেরেছিলেন সাধারণ মানুষের ভরসার প্রতীক। হতে পেরেছিলেন একটি উদীয়মান জাতির প্রাণভ্রমরা। বাংলাদেশের জনগণের জন্য শুধু রাজনৈতিক স্বাধীনতা নয়, তাদের দৈনন্দিন জীবনে সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য তিনি আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। লন্ডনের ‘লিবারেশন’ নামের সংগঠনের চেয়ারম্যান লর্ড ব্রকওয়ে ১৯৭৯ সালে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক বাণীতে এসব কথা লিখেছিলেন। তাই তিনি বলতে পেরেছিলেন- বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড কোনো ব্যক্তিবিশেষের হত্যার চেয়েও বড় অপরাধ। এটা ছিল পুরো জাতির বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ।
একেবারে তরুণ বয়স থেকেই তিনি সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্টে ব্যথিত হতেন এবং তাদের জন্য একটা কিছু করতে চাইতেন। তাঁর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ পড়লেই জানা যায়, তিনি কীভাবে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় বুক চেতিয়ে দাঁড়াতেন, দাঙ্গাক্রান্তদের আশ্রয়শিবিরের নেতৃত্ব স্বেচ্ছায় কাঁধে তুলে নিতেন, পঞ্চাশের দুর্ভিক্ষের সময় লঙ্গরখানা পরিচালনা করতেন। সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক শোষণ-বঞ্চনা খুব কাছে থেকে দেখেছেন বলেই তিনি ‘দুই অর্থনীতি’র প্রবক্তা হতে পেরেছিলেন। এ কারণেই তিনি বাঙালির জন্য ‘ছয় দফা’ আন্দোলনের সূত্রপাত করতে পেরেছিলেন। সত্তরের ঘূর্ণিঝড়ের পর নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধ রেখে উল্ক্কার মতো উপদ্রুত এলাকায় ছুটে গিয়েছেন। দুর্যোগে দিশেহারা মানুষকে দিশা দিয়েছেন।
১৯৫৫ সাল। ২৮ সেপ্টেম্বর। পাকিস্তানের গণপরিষদের এক অধিবেশনে তিনি গর্জে ওঠেন সাধারণ মানুষের পক্ষে। ওই পরিষদে প্রশ্ন রাখেন- ‘গভর্নরকে মাসে ছয় হাজার রুপি বেতন দেবেন আর আমাদের দেশের গবির মানুষ অনাহারে মারা যাবে, এরই নাম কি ইসলামী নীতিমালা অনুসরণ?’ তিনি আরও বলেন, ‘যে দেশে একজন পিয়নের বেতন মাসে ৫০ রুপি, সে দেশে গভর্নরের এ বেতন কীভাবে মেনে নেওয়া যায়?’ আজীবন তিনি তাই এ দেশের অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন। পরবর্তী সময়ে দেশ পরিচালনার সময়ও তিনি গরিব মানুষের দুঃখ-বঞ্চনা দূর করতে সদাতৎপর ছিলেন।
১৯৫৬ সাল। ৬ ফেব্রুয়ারি। আবার গণপরিষদের এক অধিবেশনে বলেন, ‘পূর্ব বাংলায় জনসাধারণের কাফনের কাপড় পাচ্ছে না। লাশ নদীতে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। জনগণের জন্য খাদ্য, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা, চিকিৎসা ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। সংবিধানে এ নিশ্চয়তা দিতে হবে।’ ১৯৭০ সালের ২৮ অক্টোবর নির্বাচনী প্রস্তুতিমূলক ভাষণেও তিনি জনগণের এসব মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি পর্বে অসহযোগের দিনগুলোতে কার্যত তিনিই বাংলাদেশের অঘোষিত সরকারপ্রধান ছিলেন। সে সময়ও তিনি সাধারণ মানুষের জীবন চলায় যাতে সামান্য কষ্ট না হয়, সেদিকে পুরোপুরি সচেতন ছিলেন। আর তারই ধারাবাহিকতায় তিনি মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অতি অল্প সময়ে যে সংবিধান রচনা করলেন, তার রাষ্ট্রীয় মৌলনীতিতে রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি অর্থনৈতিক স্বাধীনতার কথা স্পষ্ট করে উল্লেখ করলেন। মানুষের বেঁচে থাকার মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার পাশাপাশি তিনি সাম্যভিত্তিক আর্থসামাজিক কাঠামো গড়ার অঙ্গীকার করেন। নারীর ক্ষমতায়ন, নগর ও গ্রামের বিদ্যমান বৈষম্য দূরীকরণের মতো অঙ্গীকারও লিপিবদ্ধ করা হয় ওই সংবিধানে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জারক রসে সিক্ত ওই সংবিধানের আলোকেই তিনি বাংলাদেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও অর্থনৈতিক নীতিকৌশল নির্ধারণ করেন। আর তাই ১৯৭৪ সালে অকালবন্যায় ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য সহযোগিতা বন্ধের কারণে বাংলাদেশে যে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল, তা মোকাবিলার জন্য তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। এ সময়টায় তিনি সর্বক্ষণ ছটফট করতেন। দু’বেলা ঠিকমতো ভাতও খেতেন না। অনাহারে ক্লিষ্ট মানুষের কষ্ট ভাগ করে নেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করতেন। আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীকে তিনি বলেছেন (সমকাল ১৭/৩/১৮), ‘গাফ্ফার তুমি বিশ্বাস করবে, এই দুর্ভিক্ষ ঠেকাতে না পারলে আমি আত্মহত্যা করব ভেবেছিলাম। করিনি কেন জানো? আমি একজন মুসলমান। আত্মহত্যা করা ইসলাম ধর্মে মহাপাপ।
দ্বিতীয়ত, বাংলার মানুষের আমার প্রতি বিশ্বাস আছে। আমি তাদের ফেলে রেখে বিশ্বাসহন্তার কাজ করতে পারি না।’ সেই বিশ্বাস তিনি রেখেছিলেন। শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তিনি পঁচাত্তরেই বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ফসল ফলানোর ডাক দিয়েছিলেন। ওই বছরই বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছিলেন। পাশাপাশি দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। প্রশাসনের বিকেন্দ্রায়নের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে তাঁর প্রচুর অভিযোগ ছিল, যা তিনি সুযোগ পেলেই প্রকাশ করেছিলেন। ১৯৭৩ সালে গণভবনে গাফ্ফার চৌধুরীকে তাঁর লেখা একটি কবিতার কথা জানিয়েছিলেন। গাফ্ফার ভাই জানিয়েছেন, রবীন্দ্রনাথের ‘বিচারের বাণী নীরবে কাঁদে’ কবিতার অনুরূপ এক কবিতা লেখেন বঙ্গবন্ধু। ‘আমার বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে/ বাংলার ভদ্রলোকেরা শুধু চুরি করে, পোঁটলা বাঁধে।’ ১৯৭৫-এর ২৬ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তাই তিনি বজ্রকণ্ঠে আওয়াজ তুলেছিলেন- ‘আমার কৃষক দুর্নীতিবাজ? আমার শ্রমিক দুর্নীতিবাজ? …ওরাই মালিক, ওদের দ্বারাই আপনার সংসার চলে। …আমাদের লেখাপড়া শিখিয়েছে কে? ডাক্তারি পাস করায় কে? অফিসার করে কে? কার টাকায়? বাংলার দুঃখী জনগণের টাকায়?’ তাই শিক্ষিত মানুষদের বলেছেন, ‘ওদের ইজ্জত করুন।’ আর প্রশ্ন করেছেন, ‘আপনি দিচ্ছেন কী? কী ফেরত দিচ্ছেন?’ সাধারণ মানুষের জন্য তাঁর অন্তর সর্বক্ষণ কাঁদত- এই আবেগমথিত ভাষণই তার বড় প্রমাণ।
১৯৫৩-৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে বঙ্গবন্ধু প্রার্থী ছাত্রনেতা খালেক নেওয়াজ খানের নির্বাচনী এলাকা ময়মনসিংহের নান্দাইল গিয়েছিলেন। কর্মীদের সঙ্গে ডাকবাংলোয় উঠেছিলেন। মশারি ছিল না। ছিল একটি কাঁথা। মাঝরাতে তিনি গাফ্ফার চৌধুরীকে সেই কাঁথাটি দিয়ে জড়িয়ে দিলেন। টের পেয়ে তা ফেরত দিতে গেলে গাফ্ফার চৌধুরীকে তিনি বলেন, ‘বাংলার মশা আমাকে কামড়াবে না।’ বাংলার মশা না কামড়ালেও এ দেশেরই কিছু ষড়যন্ত্রকারী কু-সন্তান অতর্কিতে হামলা করে ‘বাংলাদেশের আরেক নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’কে শারীরিকভাবে তাঁর প্রিয় দেশবাসীর কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের কালরাতে। এর পরের দিন, অর্থাৎ ১৬ আগস্ট লন্ডনের ‘দ্য ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস’ লিখেছিল- ‘এই করুণ মৃত্যুই যদি মুজিবের ভাগ্যে অবধারিত ছিল, তা হলে বাংলাদেশের জন্মের মোটেই প্রয়োজন ছিল না।’
এর কয়েক দিন পরে ২৮ আগস্ট বিবিসির সংবাদদাতা ব্রায়ান ব্যারন ‘দ্য লিসনার’ পত্রিকায় ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, “বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের হৃদয়ে উচ্চতর আসনেই অবস্থান করবেন। তাঁর বুলেটবিদ্ধ বাসগৃহটি গুরুত্বপূর্ণ ‘স্মারকচিহ্ন’ এবং কবরস্থানটি ‘পুণ্যতীর্থে’ পরিণত হবে।” তাঁর সেই ভবিষ্যদ্বাণী আজ অক্ষরে অক্ষরে সত্যি হয়েছে। তাঁকে আমাদের তরুণ প্রজন্মের মনে চিরদিনের জন্য গেঁথে দিতে হলে তাঁর মৌল চাওয়াগুলোর আলোকে আমাদের দেশকে সুশাসনের চাদর দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। দুর্নীতি, বঞ্চনা, অন্যায্যতা, অবিচার যেন সমাজের অলিগলিতে অবাধে বিচরণ না করতে পারে, সে জন্য মানবকল্যাণধর্মী গরিবহিতৈষী বঙ্গবন্ধুর ভাবনাকে আমাদের চলার পথের পাথেয় করতে হবে। পুরো জাতির মনে তাঁর সুদূরপ্রসারী কল্যাণ ভাবনা চিন্তার আলোকে কাঙ্ক্ষিত মুক্তির দিশা দিতে হবে।
চলমান বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকট সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতি যে অনেক দেশ থেকে অনেকটাই ভালো করছে, তার কারণ বঙ্গবন্ধু আমাদের শিখিয়েছেন কী করে সংকট উত্তরণ করতে হয়। কী অসামান্য নেতৃত্বের গুণে তিনি ধ্বংসস্তূপ থেকে বাংলাদেশকে উদ্ধার করে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে গিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু বিশ্বাসঘাতকদের হামলায় সাময়িকভাবে লাইনচ্যুত হলেও বাংলাদেশ ফের খুঁজে পেয়েছে তার কাঙ্ক্ষিত পথরেখা বঙ্গবন্ধুর কন্যার নেতৃত্বে। তাঁর সুদৃঢ় নেতৃত্বে আজ বাংলাদেশ উন্নয়নের বিস্ময়। নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অর্থনীতির এক বিস্ময়কর রূপান্তর ঘটেছে সাম্প্রতিক সময়ে। ধ্বংসস্তূপ থেকে ডানা ঝাপটা দিয়ে ফিনিক্স পাখির মতো উঠে দাঁড়িয়েছে বঙ্গবন্ধুর আরাধ্য বাংলাদেশ। তথাকথিত ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ থেকে উপচে পড়ছে সমৃদ্ধির ফসল। তা সত্ত্বেও হতাশা ছড়ানোর মানুষের অভাব কিন্তু নেই। তারা সারাক্ষণ আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। তাই আমাদের নিরন্তর সজাগ থাকতে হবে যেন আমাদের অবহেলায়, অপরিণামদর্শিতার কারণে সম্ভাবনাময় বাংলাদেশের এই উন্নয়নের অভিযাত্রা কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন না হয়। আমাদের নিরন্তর শুভকর্মের মাধ্যমেই প্রকাশ করে যেতে হবে বঙ্গবন্ধুর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা। আর তা করতে পারলেই শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে তাঁকে আমরা অনুভব করতে পারব আমাদের নিঃশ্বাসে-প্রশ্বাসে। আর উচ্চারণ করতে পারব মহাদেব সাহার ভাষায়, ‘এই নাম স্বতোৎসারিত।’
‘… তুমি কেউ নও, বলে ওরা, কিন্তু বাংলাদেশের আড়াইশত নদী বলে,
তুমি এই বাংলার নদী, বাংলার সবুজ প্রান্তর
তুমি এই চর্যাপদের গান, তুমি এই বাংলা অক্ষর,
বলে ওরা, তুমি কেউ নও, কিন্তু তোমার পায়ের শব্দে
নেচে ওঠে পদ্মার ইলিশ;
তুমি কেউ নও, বলে ওরা, কিন্তু রবীন্দ্রনাথের গান আর নজরুলের
বিদ্রোহী কবিতা বলে,
তুমি বাংলাদেশের হৃদয়।’
লেখক, উন্নয়ন সমন্বয়ের সভাপতি ও সাবেক বঙ্গবন্ধু চেয়ার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।