ads

বুধবার , ৩ আগস্ট ২০২২ | ২৫শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধনপ্রাপ্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
  1. ENGLISH
  2. অনিয়ম-দুর্নীতি
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. আমাদের ব্লগ
  6. ইতিহাস ও ঐতিহ্য
  7. ইসলাম
  8. উন্নয়ন-অগ্রগতি
  9. এক্সক্লুসিভ
  10. কৃষি ও কৃষক
  11. ক্রাইম
  12. খেলাধুলা
  13. খেলার খবর
  14. চাকরির খবর
  15. জাতীয় সংবাদ

শেরপুরে জমিদারদের শেষ নিদর্শন গোল্ডেন হেরিটেজ হিসেবে সংরক্ষণের দাবি

রফিকুল ইসলাম আধার , সম্পাদক
আগস্ট ৩, ২০২২ ১২:৩৪ পূর্বাহ্ণ

জমিদারদের দুর্দান্ত প্রতাপ-প্রভাবের শাসন-শোষণ শুধুই স্মৃতি

জমিদার অধ্যূষিত শেরপুরে একসময় ছিল সেই জমিদারদের দুর্দান্ত প্রতাপ-প্রভাব। কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হলেও প্রায় সব জমিদার মহল বা বাড়িতে প্রজাদের প্রবেশে ছিল কড়ারোপ। খালি পায়ে হাত জোড় করে কেবল জমিদারের প্রাসাদেই নয়, তাদের বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে হেটে যেতেও অনুসরণ করতে হতো একই রীতি। কিন্তু যুগের বিবর্তন আর কালের পরিক্রমায় কোন কোন জমিদারের শেষ নিদর্শন থাকলেও তাদের দুর্দান্ত প্রতাপের শাসন ও শোষণের নানা চিত্র এখন কেবলই স্মৃতি। তবে লোকমুখে এখনও শোনা যায় তাদের শাসনামলের সেইসব স্মৃতির কথা। অন্যদিকে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে জমিদারদের শেষ চিহ্নগুলো এখন ক্রমেই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। তাই গোল্ডেন হেরিটেজ হিসেবে সেগুলো সংরক্ষণের দাবি উঠেছে।

Shamol Bangla Ads

অনেক ইতিহাস-ঐতিহ্যের পাদপীঠখ্যাত শেরপুর ছিল কামরূপ রাজ্যের অধিভূক্ত। তখন ভারত সীমান্তের মেঘালয় ঘেঁষা এ অঞ্চলের নাম ছিল ‘শেরপুর পরগণা’, একসময় যা ‘দশকাহনীয়া বাজু’ নামেও পরিচিতি পায়। খ্রিস্টীয় অষ্টাদশ শতাব্দীর সূচনায় শেরপুর পরগণার শেষ মুসলিম জমিদার ছিলেন কিংবদন্তী খ্যাত গাজী বংশের শের আলী গাজী। ইতিহাস বলে, দীর্ঘ ২১ বছরকাল তার শাসনকার্য ইতিবাচকভাবেই পরিচালিত হয় এবং পরবর্তীতে তার নামানুসারেই এ অঞ্চলের নামকরণ হয় ‘শেরপুর’। পরবর্তীতে নবাব মুর্শিদ কুলি খাঁর বিচারে শের আলী গাজীর জমিদারী বাতিল করে রামনাথ চৌধুরীকে শেরপুর পরগনার জমিদারি দেয়া হয়। তিনি ছিলেন শেরপুর পরগণার প্রথম হিন্দু জমিদার। তার উত্তরসূরিরাই পরবর্তীতে ছিলেন শেরপুর পরগণার জমিদার। ১৭৯০ সালে ময়মনসিংহের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও কালেক্টর ডব্লিউ রাটন শেরপুরের এই জমিদারদের সঙ্গে দশসনা বন্দোবস্ত সম্পাদন করেন। পরবর্তীতে স্টিফেন বায়ার্ডের সঙ্গে তাদের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হয়। ১৮২০ সালে শেরপুরের চৌধুরীদের ষোলআনি জমিদারি প্রথমে নয়আনি ও সাত আনিতে ভাগ হয়। পরে সাতআনি বিভক্ত হয় তিনআনি, পৌনে তিনআনি, আড়াইআনি বড় বাড়ি, আড়াইআনি ছোট বাড়ি ও দেড়আনি বাড়িতে।

কিন্তু যুগের বিবর্তনে আর কালের আবর্তে হারিয়ে গেছে নয়আনি বাড়ি, তিনআনি বাড়ি, আড়াইআনি বড় বাড়ি, আড়াইআনি ছোট বাড়ি ও দেড় আনি বাড়ি। এর মধ্যে যে নয়আনি বাড়িতে ছিল শিক্ষিত ও অনারারি ম্যাজিস্ট্রেটদের বসবাস এবং বিচার পরিচালনা ছিল সেই বাড়ির কর্তাদের অন্যতম শখের অংশ, সেই বাড়ির ধ্বংসাবশেষ অপসারণ করে সেখানে স্থাপিত হয়েছে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়। আর সেই বাড়ির পাশে থাকা প্রকাণ্ড নাটমহলের অস্তিত্বও একেবারেই বিলীন। তিনআনি জমিদারবাড়িতে ১৯৬৪ সালে স্থাপিত হয়েছে শেরপুর সরকারি কলেজ। আড়াইআনি বড়বাড়িতে ১৯১৯ সালে স্থাপিত হয়েছে গোবিন্দকুমার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় যা জিকে পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় নামে পরিচিত। এ জমিদারবাড়ির অপরাংশে ১৯৭২ সালে স্থাপিত হয়েছে শেরপুর সরকারি মহিলা কলেজ এবং পাশে জমিদারদের কর্মচারীদের থাকার মেসবাড়িতে করা হয়েছে বর্তমান জেলা রেজিস্টার-সাবরেজিস্টার অফিস ও পাশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) অফিস। আড়াইআনি ছোটবাড়িতেও নেই কোন নির্দশন। তবে তাদের বাগানবাড়িটি এখনও বাগানবাড়ি এলাকা নামে পরিচিতি ছড়িয়ে এলেও সেখানে গড়ে উঠেছে বন্দোবস্তের নামে এক শ্রেণির দখলদারদের বসতি। দেড়আনি বাড়ির অস্তিত্ব বিলীন হয়ে সেখানেও গড়ে উঠেছে বসতি। আজ নেই সেই দুর্দান্ত প্রতাবশালী জমিদাররা, নেই তাদের জমিদারি। আছে শুধু তাদের শাসনকালের নানা গল্পকথা, নানাভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে কিছু স্মৃতিচিহ্ন। সংরক্ষণের অভাবে সেগুলোও নিশ্চিহ্ন হতে চলেছে।

Shamol Bangla Ads

তবে শেরপুরের জমিদারদের এখন শেষ নিদর্শন হিসেবে আজও জৌলুসপূর্ণ অস্তিত্বের জানান দিচ্ছে পৌণে তিনআনি বাড়ি। ঐতিহাসিক তথ্যমতে, উনিশ শতকের গোড়ার দিকে পৌনে তিনআনী জমিদার কিশোরী মোহন চৌধুরীর আমলে রং মহল, শীষ মহলসহ নানা সৌধ নির্মাণ করা হয়। এ বাড়ির সর্বশেষ জমিদার ছিলেন সত্যেন্দ্র মোহন চৌধুরী ও জ্ঞানেন্দ্র মোহন চৌধুরী। জ্ঞানেন্দ্র মোহন চৌধুরী ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। তিনি চিরকুমার ছিলেন। সত্যেন্দ্র মোহন চৌধুরী ছিলেন বিএ-বিএসসি। তারা দুই ভাই ছিলেন বিলাসী ও শৌখিন। বিভিন্ন দেশ থেকে গাছপালা এনে তার বাগান করেছিলেন। এদের বৃক্ষপ্রীতি ছিল প্রচুর। এর স্থাপত্যশৈলীর সাথে গ্রিক স্থাপত্যের মিল রয়েছে। যা একে অন্যান্য জমিদার বাড়ি থেকে আলাদা করেছে। চমৎকার নকশা করা স্তম্ভগুলো মুগ্ধ করবে যেকোন দর্শনার্থীকে। অপূর্ব কারুকার্যখচিত সবগুলো ভবন। উত্তর-দক্ষিণে প্রলম্বিত রং মহলের তিন অংশ। প্রথম অংশে জমিদারদের খাস দরবার কক্ষ ও জলসা ঘর। দ্বিতীয় অংশে জমিদারদের খাস কামরা। তৃতীয় অংশে নায়েব-ম্যানেজারের কাচারি হিসেবে ব্যবহৃত হতো। রং মহলের প্রবেশ পথের দরজা দুটি। ডানদিকের দরজা বরাবর টানা লম্বা করিডোর। করিডোর ও ভিতরের অর্ধেক দেয়াল জুড়ে বিরাজ করছে রঙিন চিনাপাথরের ফ্রেসকো ও ফুল লতাপাতার আঁকা টালি বসানো। কবির ভাষায় ‘আজি হতে শতবর্ষ পরে কে মোর কবিতাখানি-র মতো শতবর্ষ পরও সেগুলোর ঔজ্জ্বল্য আজও চির যৌবন, চির উজ্জল’। জমিদার বাড়ির ঠিক দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অবস্থিত রং মহল। চমৎকার বাড়িটি দেখলেই বোঝা যায় জমিদার কেমন সংস্কৃতি প্রিয় ছিলেন! নাচ গানসহ অন্যান্য সকল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এখানেই হতো। রং মহলের ডানদিক ঘেঁষে শান বাঁধানো পুকুর। জলে জলসা ঘর প্রতিবিম্বিত হয়। সেই আমলে রং মহলের দীর্ঘ করিডোর ধরে প্রতিটি কক্ষে ঢোকার দরজার পাশে ছিল বিরাট আকারের নান্দনিক ফুলদানি এবং পিতল ও পাথরের নানা ধরনের মূর্তি।

শেরপুরের জমিদারদের মধ্যে পৌনে তিনআনী জমিদার পরিবার শিক্ষিত ও সংস্কৃতিমনা ছিলেন। তাদের ছিল জয় কিশোর লাইব্রেরি ভবন, কূল দেবতা অন্নপূর্ণা-গোপীনাথের অপরূপ সুন্দর মন্দির। যার মাঝে রয়েছে প্রাচ্য, পাশ্চাত্য ও মুসলিম স্থাপত্যরীতির অপূর্ব সুসমন্বয়। লাইব্রেরিতে ছিল পাঁচ সহস্রাধিক বই। অধিকাংশই বিজ্ঞান বিষয়ক। পরের আধুনিক ইতিহাসে জমিদার বাড়িটিকে ১৯৫৭ সালে কৃষি প্রশিক্ষণালয়ে রূপান্তরিত করা হলে লাইব্রেরি ভবনটি ভেঙে সেখানে টিনশেডের শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ করা হয়। রং মহলটি এক সময় কৃষি প্রশিক্ষণালয়ের প্রশাসনিক ভবন হিসেবে ব্যবহার হলেও এখন তা আর ব্যবহার হচ্ছে না। বরং অনেকটা অযত্ন আর অবহেলায় পৌণে তিনআনি জমিদারবাড়ির সেই ভবনগুলো এখন জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে আছে, সামান্য বৃষ্টিতেই এর ছাদ চুঁইয়ে পানি পড়ে। স্থানে স্থানে সুরকির গাঁথুনিগুলো হয়ে পড়েছে নড়বড়ে। পলেস্তারা খুলে পড়ছে যখন তখন। যেন দেখার কেউ নেই।

শেরপুর অঞ্চলে জমিদারদের শেষ নিদর্শনগুলো বিলীন হওয়া প্রসঙ্গে জেলা ইতিহাস পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাডভোকেট মুহাম্মদ আখতারুজ্জামান বলেন, এ অঞ্চলের জমিদারদের শেষ নিদর্শন পৌণে তিনআনি বাড়ি। কিন্তু অযত্ন-অবহেলা ও উদাসিনতার কারণে সেই নিদর্শনটির অস্তিত্বও এখন হুমকীর সম্মুখীন। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট চন্দন কুমার পাল পিপি ঐতিহাসিক প্রাচীন স্থাপত্য হিসেবে এ বাড়ির স্থাপনাগুলোকে গোল্ডেন হেরিটেজ হিসেবে রক্ষণাবেক্ষণের দাবি জানিয়ে বলেন, তা না হলে শেরপুরের জমিদারদের অন্যান্য প্রাচীন স্থাপনার মতো এ বাড়িটিও হারিয়ে যাবে। তার মতে, স্থাপনাগুলো সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের আওতায় নিয়ে রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কার করা হলে পর্যটকদের অন্যতম স্পট হিসেবেও পরিচিতি পেতে পারে।
এ ব্যাপারে শেরপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মুকতাদিরুল আহমেদ বলেন, প্রাচীন সম্পদগুলো অবশ্যই রক্ষা করা প্রয়োজন। এজন্য সেগুলো কিভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা যায়, তা সরকারের সংশ্লিষ্ট উচ্চ পর্যায়ে অবহিত করা হবে।

সর্বশেষ - ব্রেকিং নিউজ

Shamol Bangla Ads
error: কপি হবে না!