২১ মার্চ বিশ্ব বন দিবস (World forest day)। বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বন এবং বনের বাইরে গাছের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতে প্রতি বছর বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ দিনটিকে উদযাপন করে থাকে বিশ্বের সকল দেশ।

বন বা অরণ্য হলো ঘন বিভিন্ন উদ্ভিদের দ্বারা ঘেরা একটি এলাকা। উৎপত্তি অনুসারে বন তিন প্রকার, যথা –
১। প্রাকৃতিক বন।
২। সামাজিক বন।
৩। কৃষি বন।
প্রাকৃতিক বন আবার তিন প্রকার, যথা –
১। উপকূলীয় বন।
২। সমতল ভূমির বন।
৩। পাহাড়ি বন।

লক্ষ লক্ষ বছর আগে পৃথিবীর প্রায় ষাট শতাংশই বনভূমি ছিল। আমূল জলবায়ুর পরিবর্তন, হিমশৈলের চলন এবং মানুষের কার্যকলাপের জন্য বিপুল পরিমাণ বনভূমি নষ্ট হয়ে গেছে। বর্তমানে মানুষের নির্দয়ভাবে গাছ কাটার জন্য বনাঞ্চল ধ্বংসের পথে। এ ছাড়াও ঘর-বাড়ি এবং অবকাঠামো নির্মাণে কাঠের দরকারে নির্বিচারে গাছ কাটাও দায়ী বন ধ্বংসে।
১৮৭৩ সালে এ উপমহাদেশের প্রাক্তন ঔপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠী “ইম্পেরিয়াল ফরেস্ট সার্ভিস’ চালু করে। সে সুবাধে কাপ্তাই অঞ্চলের বিরাট এলাকার প্রাকৃতিক বন ধ্বংস করে বিদেশী তথাকথিত “মনোকালচার” বন সৃষ্টির সুত্রপাত হয়। হালে এখনো তা চলমান।
দুঃখের বিষয়, ঔপনিবেশিক শক্তি আমাদের কিছু প্রাকৃতিক বন ধ্বংস করে বিদেশী “মনোকালচার” বন গড়ে তুলেছিল। আর আমরা কিন্তু এখনো “Most obedient servant” – এর মতো তাদের পদানুসরণ করে বিনা বিচারে অবশিষ্ট প্রাকৃতিক বনাঞ্চল ধ্বংস করে ফেলছি।
শুধু তাই নয় “পোপের চেয়েও বড় ক্যাথলিক” প্রমাণ করার জন্য আমরা বিগত কয়েক দশকে পল্লী অঞ্চলের জনগণ কে বিদেশী গাছের চারা লাগাতে উৎসাহিত করছি। জনগণ তাই করছে। এখন গ্ৰামে-গঞ্জে রাস্তার ধারে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চারপাশে, বাড়ির আঙিনায়, এমন কি ক্ষেতের আইলেও আম, জাম, শিমুল, করই, কাঁঠাল, তাল, সুপারি, খেজুর, বট, পাকুড়, বাঁশ ইত্যাদি দেশী গাছের পরিবর্তে দেখা যায় মেহগনি, শিশু, এ্যকাশিয়া, ইউকেলিপটাস ইত্যাদি বিদেশী গাছের সারি। গাছের চারা বিতরণ করে মানুষকে আমরা বলছি “প্রথম বিবাহ বার্ষিকীতে একটা গাছের চারা লাগান। ২০/২২ পর তা বিক্রি করে মেয়ের বিয়ে দিতে পারবেন।” আমরা বলি না যে ঐসব বিদেশী গাছ কাটার যোগ্য হতে ৭০/৮০ বছর লেগে যায় এবং তখন ঐ মেয়ে নানির নানি হয়ে যাবে।
১৯৯৮ সালে বন বিভাগ একটা শ্লোগান চালু করেছিল ” জনগণের বন, জনগণের জন্য বন এবং জনগণের দ্বারা বন।”
উপর্যুক্ত শ্লোগানের পরিবর্তে বর্তমানে এই শ্লোগান দেয়া দরকার ” দেশী গাছের বন, দেশী গাছের জন্য বন এবং দেশী গাছের দ্বারা বন।”
প্রিয় বন্ধুরা, ধৈর্য ধরে আমার লেখাটি পড়ে যদি কারও বাড়ির আঙিনায় একটি ফুল, ফল, ভেষজ গাছ লাগানোর ইচ্ছা জাগে তবে আমার লেখা সার্থক।
(কৃতজ্ঞতা : লেখার অনেকাংশ প্রয়াত শ্রদ্ধেয় প্রকৃতিবিদ, প্রকৃতি বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. কাজী জাকির হোসেন স্যারের লেখা থেকে সংগৃহীত)
লেখক : প্রকৃতি-পরিবেশপ্রেমী ও সৌখিন আলোকচিত্রী, শেরপুর।