বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের নতুন গবেষণা জাহাজ ইলিশ উৎপাদনে ব্যাপক সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। ৪ জানুয়ারি মঙ্গলবার খুলনা শিপইয়ার্ডে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের জন্য শিপইয়ার্ড কর্তৃক নবনির্মিত ইলিশ গবেষণা জাহাজ হস্তান্তর উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ কথা জানান।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী আরো বলেন, ইলিশ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে। অতীতের চেয়ে এখন বেশি ইলিশ উৎপাদন হচ্ছে। তবে ইলিশের সাময়িক উৎপাদন বৃদ্ধি নয় বরং গবেষণার মাধ্যমে আমরা ইলিশ উৎপাদনে সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে চাই। ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি ইলিশের গুণগত মান আমরা নিশ্চিত করতে চাই। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে ইলিশ কখনো বিপন্ন যাতে না হয় সেজন্য আমাদের গবেষণা ইনস্টিটিউট রয়েছে, বিভিন্ন ল্যাবরেটরি রয়েছে। ইলিশ গবেষণার ক্ষেত্রে গবেষণা জাহাজ বড় ধরনের সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। আমরা চাই নদীমাতৃক বাংলাদেশে যেন পৃথিবীর সবচেয়ে সুস্বাদু ইলিশ পাওয়া যায়।
মন্ত্রী আরো বলেন,বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অপ্রতিরোধ্য গতি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। খুলনা শিপইয়ার্ডে গবেষণা জাহাজ তৈরি আমাদের সক্ষমতার পরিচয়। জাহাজ নির্মাণে ভবিষ্যতে আমরা বিদেশের উপর নির্ভর করবো না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায়ই বলেন আমাদের নিজেদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। আজ দেশের মানুষের সাংবিধানিক মৌলিক চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। উন্নয়নের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বিশ্বের বিস্ময় হবে বাংলাদেশ।
শ ম রেজাউল করিম বলেন, করোনার সময় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দরজা একদিনের জন্যও বন্ধ ছিল না। কারণ এ মন্ত্রণালয়ের কাজ স্থবির হয়ে গেলে মানুষের পুষ্টি ও আমিষের চাহিদা মেটানো মাছ, মাংস, দুধ, ডিমের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে। এ খাতে কাজ করা মানুষ বেকার হয়ে যাবে। এ খাতের রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাবে। এভাবে আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতকে একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তনের দিকে নিয়ে এসেছি।
এ সময় চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন,এ দেশটা আইনসঙ্গতভাবে চলবে। দেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধান। সংবিধানে যেটা নেই সে জাতীয় আবদার করলে সেটা দেয়ার কোন সুযোগ থাকবে না। অসাংবিধানিক কোন কিছু দাবী করা আইনের শাসনের পরিপন্থী। বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি সংবিধানসম্মত নয়। তাই এ দাবি কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ইলিশ গবেষণা জোরদারকরণ প্রকল্পের আওতায় খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেড এ গবেষণা জাহাজ নির্মাণ করেছে। ৮৬ ফুট দৈর্ঘ্যের ও ১৯ দশমিক ৬৮ ফুট প্রস্থের এ জাহাজে ফিশ ফাইন্ডার, ইকো-সাউন্ডার, নেভিগেশন এবং অত্যাধুনিক টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা, অগ্নি নির্বাপক সরঞ্জামাদি, আধুনিক ইলিশ গবেষণা ল্যাবরেটরি, নেটিং সিস্টেম, পোর্টেবল মিনি হ্যাচারিসহ অন্যান্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সংযোজন করা হয়েছে। জাহাজটি দিয়ে নদী এবং সাগরের মোহনায় ইলিশের প্রজনন এবং বিচরণক্ষেত্রের পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ এবং নতুন নতুন ক্ষেত্র চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। এছাড়া ইলিশের সর্বোচ্চ সহনশীল উৎপাদন, ইলিশের গতিবিদ্যা, জীবনচক্র ও উৎপাদনশীলতার ওপর পরিবেশ ও জলবায়ুগত প্রভাব নির্ণয় সংক্রান্ত গবেষণা পরিচালনা করা হবে।
খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর খন্দকার আক্তার হোসেনের সভাপতিত্বে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সম্মানীয় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই)-এর মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ। খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মো. ইসমাইল হোসেন, খুলনা নেভাল এরিয়া কমান্ডার রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, খুলনার জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার, বিএফআরআই-এর ইলিশ গবেষণা জোরদারকরণ প্রকল্পের পরিচালক মো. আবুল বাশার এবং বিএফআরআই ও খুলনা শিপইয়ার্ডের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ এসময় উপস্থিত ছিলেন।