বিশ্বের সব দেশের বিমান এখন দুবাইমুখী। মানুষ বোঝাই করে প্রতিদিনই শত শত বিমান অবতরণ করছে দুবাই বিমানবন্দরে। ক্রিকেট আর বাণিজ্যের আকর্ষণ টেনে আনছে তাদের। ভিন্ন ক্ষেত্র হলেও মানুষের কাছে এ দুইয়ের আকর্ষণ দুর্নিবার। ১২ দল নিয়ে মূলত আজই শুরু হচ্ছে ‘আসল’ বিশ্বকাপ। মূল পর্বের প্রথম দিনের দুটি ম্যাচই হাইভোল্টেজ। আবুধাবিতে অস্ট্রেলিয়ার মোকাবিলা করবে দক্ষিণ আফ্রিকা, আর টুর্নামেন্টের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন হট ফেভারিট ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রবল প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ডের সঙ্গে খেলবে দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে। ক্রিকেটবিশ্বের ফোকাস কেড়ে নেওয়ার জন্য একেবারে আদর্শ সূচি।
কাল এই পর্বে প্রথম ম্যাচে বিকেল ৪টায় শারজায় বাংলাদেশ খেলতে নামবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। আর দুবাইয়ে রাতের ম্যাচে মুখোমুখি হবে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তান। বিগত ছয় আসরের পাঁচটি চ্যাম্পিয়ন দল পেয়েছে টি২০ বিশ্বকাপ। মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে ২০০৭ সালে টুর্নামেন্টের প্রথম চ্যাম্পিয়ন ভারত। ইংল্যান্ড, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা একটি করে শিরোপা জিতলেও দু’বার জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। মজার ব্যাপার হলো, উইন্ডিজ দু’বারই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে উপমহাদেশে, ২০১২ সালে শ্রীলঙ্কা আর ২০১৬ সালে ভারতে। কলম্বোর প্রেমাদাসায় স্বাগতিকদের হারিয়ে গ্যাংনাম স্টার ড্যান্স করেছিলেন গেইলরা। আমুদে ক্যারিবীয়দের উদযাপন দিয়েই কোরিয়ান এই ড্যান্স উপমহাদেশে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে। ষোলোর ফাইনাল শেষেও ইডেন গার্ডেনে মাস্তি করেছিলেন কার্লোস ব্রাথওয়েটরা।
অভিজ্ঞ ও তারুণ্যের মেলবন্ধনে গড়া উইন্ডিজ বিশ্বকাপ দলকে হট ফেভারিটের তকমা দিয়ে রেখেছেন ড্যারেন সামি। বাংলাদেশের সাবেক ক্রিকেটারদেরও বাজি বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের পক্ষে। লঙ্কার পর ভারতে সফল অভিযান শেষে এবার মধ্যপ্রাচ্য বিজয়ের মিশন ক্যারিবীয়দের। ওয়ানডে বিশ্বকাপজয়ী ইংল্যান্ডকেও হেলাফেলা করার সুযোগ নেই। গেইল-পোলার্ডদের মতো ইংলিশ ক্রিকেটাররাও আইপিএল টি২০-র পাকা খেলোয়াড় হয়ে উঠেছেন। ২০২১ আইপিএলের বেশিরভাগ ম্যাচই হয়েছে আমিরাতের বিশ্বকাপ ভেন্যুতে। সেদিক থেকে চোখ বন্ধ করে বলে দেওয়া যায়, বড় দলগুলোই মাতাবে বিশ্বকাপ। এক্সপোর শহরে হতে চলছে ক্রিকেটের তারার মেলা। ক্রিকেট নক্ষত্রমণ্ডলে বিশ্বকাপের উপহার দিতে পারে নতুন কোনো নক্ষত্র। মরুর আকাশকে রোশনাই করে তারা আলো ছড়িয়ে দেবেন বিশ্বজুড়ে।
সুপার টুয়েলভ মাতাতে বাংলাদেশ দলও গতকাল ওমান থেকে যোগ দিয়েছে সুপার টুয়েলভের গ্রুপ-১-এর দল অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কার সঙ্গে। গ্রুপ পর্বের দ্বিতীয় দল হিসেবে মূল টুর্নামেন্টে খেলছেন মাহমুদউল্লাহরা। অথচ ১৭ সেপ্টেম্বর আইসিসি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছিল- বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা পয়েন্ট প্রাপ্তিতে দ্বিতীয় হলেও গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সুপার টুয়েলভে খেলবে। সে হিসেবে বাংলাদেশের খেলার কথা ছিল ভারত, পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড, আফগানিস্তান আর ‘এ’ গ্রুপ রানার্সআপ দলের সঙ্গে। শ্রীলঙ্কার খেলার কথা ছিল গ্রুপ-১-এ। সম্প্রতি সে নিয়ম পরিবর্তন করা হয়। বাছাই পর্বে টানা তিন ম্যাচ জিতে ছয় পয়েন্ট নিয়ে ‘বি’ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ভারত-পাকিস্তানের সঙ্গে খেলছে স্কটল্যান্ড। ‘এ’ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সুপার টুয়েলভের বড় চমক নামিবিয়া। আয়ারল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডসের মতো দলকে বিদায় দিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের মূল পর্বে খেলছে দলটি।
নিউ নরমাল সময়ে হলেও প্রতিটি দলের বিশ্বকাপ প্রস্তুতি ভালো নিয়েছে। আমিরাত ও ওমান মিলিয়ে বেশিরভাগ দলই এক মাসেরও বেশি সময় ধরে কন্ডিশনিং ক্যাম্প করেছে। অনুশীলন ম্যাচ খেলেছে চার-পাঁচটি করে। বড় দলগুলো সিরিজ খেলে যোগ দিয়েছে বিশ্বকাপ মঞ্চে। খেলার ভেতরে থাকায় চার-ছক্কার ফুলঝুরি দেখা যেতে পারে টুর্নামেন্টজুড়ে। মরুর কন্ডিশনের কারণে বোলারদের কঠিন সময় পার করতে হবে। বাংলাদেশের মতো স্পিননির্ভর দলের কাজ কঠিন করে তুলতে পারে পেস শক্তিতে বলীয়ান দলগুলো। পাওয়ার হাউসখ্যাত অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকার ফাস্ট বোলিং মোকাবিলার চ্যালেঞ্জ নিতে হবে মাহমুদউল্লাহদের। কন্ডিশনের চ্যালেঞ্জও কোনো অংশে কম নয়। টাইগারদের সব ম্যাচ স্থানীয় সময় দুপুর ২টায় শুরু হবে। গনগনে সূর্যের তাপ ও গরম ক্লান্তির স্রোত বয়ে যেতে পারে শিরায় শিরায়। প্রতি এক দিন পর পর ম্যাচ খেলার চাপ বাড়িয়ে দিতে পারে ইনজুরি শঙ্কা। যদিও কন্ডিশনের সমস্যা প্রতিপক্ষ দলের খেলোয়াড়দের জন্যও প্রভাব ফেলবে। দক্ষিণ এশিয়ার দল হওয়ায় মাহমুদউল্লাহরা বরং গরমের সঙ্গে বেশি অভ্যস্ত। সেদিক থেকে চ্যালেঞ্জের মধ্যে ভালো করার সুযোগ টাইগারদেরও রয়েছে।
অন্য ৬ আসরের চেয়ে এবারের টি২০ বিশ্বকাপের আকর্ষণ একটু বেশি থাকার কথা। করোনাকালে বায়োসিকিউর বাবলে হচ্ছে আইসিসির প্রথম কোনো বৈশ্বিক আসর। ওমান ও আমিরাতে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় দর্শক উপস্থিতিতেই হচ্ছে খেলা। মোট আসনের ৭০ ভাগ টিকিট বিক্রি করেছে আইসিসি। গ্যালারিতে বসে খেলা দেখতে হলে মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক। সাংবাদিকদের করোনা পরীক্ষার নিয়ম রাখা হলেও দর্শকরা তা থেকে মুক্ত। তবে স্বাস্থ্যবিধি মানার বাধ্যবাধকতা রেখেছে সবার জন্যই। দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে কিছুটা নমনীয়তা দেখানো হলেও আবুধাবিতে সব ব্যাপারে কড়াকড়ি থাকবে বলে জানিয়েছে আইসিসি।