ব্যাটিং বিপর্যয়ে হার দিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব শুরু হল বাংলাদেশের। আইসিসির সহযোগী সদস্য স্কটল্যান্ডের কাছে ৬ রানে হেরে গেছে মাহমুদউল্লাহর দল। ১৪১ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে সাত উইকেটে ১৩৪ রানের বেশি করতে পারেনি সাকিব-মুশফিকরা।
স্কটল্যান্ডের দেওয়া ১৪১ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই সৌম্য সরকারের উইকেট হারায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ওভারের তৃতীয় বলে আউট হন সৌম্য। ৫ বল খেলে ৫ রান করেন তিনি। সৌম্যর বিদায়ের পর ক্রিজে বেশিক্ষণ টেকেননি লিটন দাসও। চতুর্থ ওভারের তৃতীয় বলে ব্র্যাড হুইলের বলে আউট হন লিটন। ৭ বলে ৫ রান করেন তিনি।
১৮ রানে দুই উইকেট হারিয়ে সাকিব ও মুশফিকে প্রতিরোধ গড়েছে বাংলাদেশ। ৪৭ রানের জুটি গড়েছেন দুই ব্যাটসম্যান। ইনিংসের ১২তম ওভারে সাকিবকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙ্গেন ক্রিস গ্রিভস। ২৮ বলে ২০ রান আসে সাকিবের ব্যাট থেকে। সাকিবের পর ক্রিজে বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি মুশফিকও। ১৪তম ওভারের প্রথম বলে ক্রিস গ্রিভসের বলে বোল্ড হন এই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। ৩৬ বলে তিনি করেন ৩৮ রান।
শেষ দিকে ম্যাচ জেতার চেষ্টা চালান দলীয় অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এবং আফিফ হোসেন। কিন্তু ততক্ষণে রানের সঙ্গে বলের ব্যবধান বাড়ছে দ্বিগুণ। ছক্কার চেষ্টায় ২৩ রানে রিয়াদ এবং ১৮ রানে ফেরেন আফিফ। এছাড়া ২ রান করেন নুরুল হোসেন সোহান। শেষ ওভারে জয়ের জন্য বাংলাদেশের দরকার ছিল ২৪ রান। এক ছয় এবং দুই চারে ১৭ রান তুলতে পারেন শেখ মেহেদি হাসান এবং সাইফ। ১৩ রানে মেহেদি এবং ৫ রানে সাইফ অপরাজিত থাকেন।
এর আগে টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। রাতে শিশিরের কারণে বল করার সিদ্ধান্ত নেননি টাইগার দলপতি। তিন পেসার নিয়ে একাদশ সাজিয়ে প্রথম ওভারেই তাসকিনের হাতে বল তুলে দেন মাহমুদউল্লাহ। দ্বিতীয় ওভারে আসেন মোস্তাফিজুর রহমান। প্রথম দুই ওভারে মাত্র চার রান দেন তাসকিন ও মোস্তাফিজ। তৃতীয় ওভারে সাইফউদ্দিন এসেই দুর্দান্ত ইয়র্কারে ফেরান স্কটল্যান্ড দলপতি কাইল কোয়েটজারকে। ৭ বল খেলে কোনো রান না করেই ফিরলেন তিনি। কোয়েটজারের এটি স্কটল্যান্ডের হয়ে ২০০তম ম্যাচ।
তিনজন পেসারকে দিয়ে পাওয়ার প্লের ৬ ওভার করান মাহমুদউল্লাহ। পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশের শিকার ১ উইকেট। এরপর দুই প্রান্তেই স্পিন দিয়ে শুরু করে বাংলাদেশ। সাকিবের পর আসেন মেহেদি। বিপজ্জনক হতে থাকা জর্জ ক্রসকে আউট করেছেন তিনি। এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরার আগে ক্রস করেছেন ১৭ বলে ১১ রান।
\এরপর দুর্দান্ত এক ঘূর্ণিতে মানসিকে থামান মেহেদী। শুরুর দিকে স্কটল্যান্ডের সবচেয়ে মারমুখী ব্যাটার ছিলেন তিনি। ২৩ বল খেলে ২৯ রান করে মেহেদীর বলে ফিরতে হয় তাকে। মেহেদীর পর স্কটিশ শিবিরে জোড়া আঘাত হানেন সাকিব। নিজের তৃতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে তিনি ফেরান রিচি ব্যারিংটনকে। সাকিবকে উড়িয়ে মারতে লং-অনে আফিফ হোসেনের ক্যাচে পরিণত হন তিনি। এর এক বল পরেই আউট করেন মাইকেল লিস্ককে, এবার ক্যাচ নিয়েছেন লিটন দাস।
এরপর নিজের তৃতীয় ওভারে নিজের তৃতীয় উইকেট পেলেন মেহেদি। এবার তার শিকার ক্যালাম ম্যাকলিওড। উইকেট থেকে সরে কাট করতে গিয়ে বল মিস করে বোল্ড কন ম্যাকলিওড। ১৪ বলে ৫ রান করে ফেরেন তিনি। ১৭তম ওভারে দলীয় ১০০ পূর্ণ করে স্কটল্যান্ড। এরপর তাসকিন এসেই ভাঙেন জুটি। ওয়াট তুলে মারতে গিয়ে ধরা পড়েছেন সৌম্য সরকারের হাতে। ১৭ বলে তার সংগ্রহ ২২ রান।
তাসকিনের ওই ওভারেই ঝড় তুলেন ক্রিস গ্রিভস। ওভারের তিন বলে দুইটি চার ও একটি ছয় মেরেছেন গ্রিভস। ইনিংস শেষ হওয়ার চার বল আগে মোস্তাফিজের শিকার হওয়ার আগে ২৮ বলে চারটি বাউন্ডারি আর দুটি ছক্কায় দলীয় সর্বোচ্চ ৪৫ রান করেন ক্রিস গ্রিভস। এতে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ১৪০ রানেই থামে স্কটল্যান্ডের ইনিংস।
এদিন বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট নেন শেখ মেহেদি হাসান। এছাড়া দুটি করে উইকেট পেয়েছেন সাকিব আল হাসান এবং মোস্তাফিজুর রহমান। আর একটি করে উইকেট নেন তাসকিন আহমেদ ও সাইফউদ্দিন।
এই নিয়ে ক্রিকেটের ক্ষুদ্র এই ফরম্যাটে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে দুইবার হারের মুখ দেখলো বাংলাদেশ। এর আগেরবার ২০১২ সালে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ-স্কটল্যান্ড। সেই ম্যাচে ১৬৩ রান তাড়া করে ৩৪ রানে হেরে যায় টাইগাররা।