কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর সেবার মান বৃদ্ধি, সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও অংশগ্রহণমুলক উন্নয়নের লক্ষ্যে শেরপুরে কর্ম-পরিকল্পনা প্রণয়ন সভা করা হয়েছে। ৬ অক্টোবর বুধবার শেরপুর সদর উপজেলা বিআরডিবি হলরুমে ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয়ভাবে কমিউনিটি ক্লিনিক পরিচালনায় সহায়তাকারি কমিউনিটি গ্রুপ (সিজি) এবং বেসরকারি সংস্থা উন্নয়ন সংঘের অনুপ্রেরণায় গঠিত সিটিজেন ভয়েজ এন্ড এ্যাকশন (সিভিএ) এ কর্ম-পরিকল্পনা সভাটির আয়োজন করে।
সদর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আসমাউল ইসলামের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সদর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা তনিমা আফ্রাদ। অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য রাখেন গাজীরখামার ইউপি চেয়ারম্যান মো. আওলাদুল ইসলাম, বলাইয়েরচর ইউপি চেয়ারম্যান ইয়াকুব আলী, উন্নয়ন সংঘের ব্লিংস প্রকল্প সমন্বয়কারি নূর মোহাম্মদ, ওয়ার্ল্ডভিশনের কৃষি বিষয়ক স্পেশালিস্ট জহিরুল হক প্রমুখ। এতে সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধি, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর সিএইচসিপি, সিজি ও সিভিএ কমিটির সদস্যবৃন্দ ও বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় কমিউনিটি ক্লিনিকের সিজি ও সিভিএ কমিটি পরিচালিত উঠোন বৈঠকের মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবার মান সম্পর্কে ওই এলাকার মানুষের সন্তুষ্টি-অসন্ত্রুষ্টি, সমস্যাবলী চিহ্নিতকরণ সংক্রান্ত রিপোর্ট কার্ড উপস্থাপন করা হয়। একইসাথে সেইসব সমস্যা দূরীকরণে কোথায় কীভাবে যোগাযোগ করে সম্পদ সংগ্রহ করে উত্তরণ ঘটানো যায় সেসব বিষয়ে আলোচনা করা হয়। কয়েকটি কমিউনিটি ক্লিনিকের সীমানা প্রাচীর না থাকা, কোন কোনটির টিউবঅয়েল থাকলেও তা নষ্ট থাকা কিংবা পানি তোলার সমস্যা, ওষুধের সংকট, নারী-পুরুষের জন্য আলাদা স্যানিটেশন ব্যবস্থা না থাকার বিষয়গুলো ওঠে আসে। কয়েকপি কমিউনিটি ক্লিনিকের মেঝে-দেওয়ালে ফাটল ধরায় সেগুলো দ্রুত সংষ্কারের বিষয়েও দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
সভার সভাপতি ডা. আসমাউল ইসলাম তার বক্তব্যে এই কর্ম-পরিকল্পনার প্রস্তাবগুলো লিখিতভাবে তাদের দপ্তরে প্রেরণের পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, সিজি গ্রুপের মাধ্যমেই স্থানীয়ভাবে সম্পদ সংগ্রহ করে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সার্বিকভাবে পরিচালনার কথা। সিজি গ্রুপ শক্তিশালী হলে কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রমও ভালো হওয়ার কথা। স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকেও কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো নিয়মিত মনিটরিং করা হয়ে থাকে। তারপরও এ বিষয়ে সেসব প্রস্তাবনা এসেছে সেগুলো বাস্তবায়নে মনিটরিং আরো জোরদার করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
ইউপি চেয়ারম্যান আওলাদুল ইসলাম কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোকে তাদের পক্ষ যেভাবে যতটুকু সহায়তা করা দরকার, তাই করা হবে বলে আশ^স্ত করেন। তবে এ ধরনের কর্ম-পরিকল্পনা সভায় স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং উপজেলা চেয়ারম্যানদের রাখা গেলে ভালো হবে বলে পরামর্শ প্রদান করেন। তাতে করে কাজ বাস্তবায়ন সহজ হবে এবং সমস্যাগুলোর দ্রুত সমাধান ও বড় ধরনের উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।
শেরপুর সদরে পুষ্টি উন্নয়নে বিংগ্স (বাংলাদেশ ইনিশিয়েটিভ টু এনহেন্স নিউট্রেশন সিকিউরিটি এন্ড গভর্ণেন্স) প্রকল্পর আওতায় যৌথভাবে কাজ করছে সরকার এবং বেসরকারি সংস্থা ‘উন্নয়ন সংঘ’। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অস্ট্রেলিয়ান এইডের অর্থায়নে ওয়ার্ল্ডভিশন বাংলাদেশ এতে সহযোগিতা করছে। এ প্রকল্পের আওতায় উপজেলা পুষ্টি উন্নয়ন সমন্বয় কমিটি সক্রিয়করণ এবং বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। পুষ্টি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে শেরপুরে সদর উপজেলার ১৪ ইউনিয়নের ৩৬ গ্রামের দরিদ্র ও হতদরিদ্র পরিবারের মা ও শিশুদের দেওয়া হয়েছে বিশেষ পুষ্টি প্রশিক্ষণ। যেসব দরিদ্র ও হতদরিদ্র পরিবারে গর্ভবতী নারী রয়েছেন, কিংবা ৫ বছরের নীচের শিশু কিংবা ১৮ বছরের নীচের বয়সী কিশোরী রয়েছে, সেইসব পরিবারের মাঝে বিনমাুল্যে ছাগল বিতরণ করা হয়েছে। সদরের ১৪ ইউনিয়নের ৩৬ গ্রামের ২ হাজার হতদরিদ্র পরিবার বাছাই করে তাদের মাঝে পরিবার প্রতি ২টি করে ৮ হাজার ২০০ টাকা সমমুল্যের ৪ হাজার ছাগল বিতরণ করা হয়েছে।
এবার গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারগুলোর স্বাস্থ্য ও পুষ্টি উন্নয়নে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর সেবার মান বৃদ্ধি ও শক্তিশালী করণের মাধ্যমে অংশগ্রহণ মুলক উন্নয়নের লক্ষ্যে করা হচ্ছে কর্ম-পরিকল্পনা সভা। বিংস প্রকল্পটি শেরপুর ও জামালপুর জেলার ৬টি উপজেলায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর আওতায় আগামী ২০২৪ সালের মধ্যে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৮২৫টি লক্ষ্যভুক্ত পরিবারের পুষ্টি ও জীবযাত্রার মান উন্নয়ন ঘটবে এবং তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটবে বলেন জানিয়েছেন উন্নয়ন সংঘের কর্মকর্তারা।