আবারও সংবাদ মাধ্যম বা গণমাধ্যমের প্রতি জবাবদিহিতা নিশ্চিত করলেন ৪ দফার প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা। গণতন্ত্রের প্রতি একজন সরকার প্রধানের কতটুকু শ্রদ্ধাবোধ থাকলে- রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ খ্যাত গণমাধ্যমে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়, তা বলাই বাহুল্য। এবার আমেরিকা সফর শেষে দেশে ফেরার পর ৪ অক্টোবর বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ঢাকা সাংবাদ সম্মেলনে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী। এটি তার দেড় বছর পর সংবাদ সম্মেলন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুসৃত দর্শন-নীতির কারণেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হওয়া পছন্দ করেন শেখ হাসিনা। আর তাই, করোনা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘ দেড় বছর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হতে পারেননি বলে এবারের সংবাদ সম্মেলনে ছিলো ভিন্নতা, ছিলো আক্ষেপও। বরাবরই বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে ভালবাসেন। বিশেষ করে বিদেশ সফর শেষে দেশে ফিরে কি কারণে এই সফর, কি কি কাজ হয়েছে কিংবা সফর কতটা সফল ইত্যাদি জাতির সামনে তুলে করার জন্যই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। এই সুযোগে উঠে আসে পারিপার্শ্বিক ঘটনা প্রবাহ। সকল বিষয়ে তার এই স্বচ্ছতা সেই ‘৯৬ সাল থেকে। তিনি বিশ্বাস করেন, সংবাদ মাধ্যম হচ্ছে জাতির আয়না। তিনিও এই আয়নায় স্পষ্ট থাকতে চান। এজন্য ধৈর্য্য ধরে সাংবাদিকদের সকল প্রশ্নের জবাব দেন। এবারও দিয়েছেন। সোয়া দুই ঘণ্টার এই সংবাদ সম্মেলনে তিনি জাতিসংঘে তার সকল কর্মসূচী উপস্থাপন ছাড়াও সাংবাদিকদের প্রশ্নে সমসাময়িক সকল বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর লিখিত বক্তব্যে জাতিসংঘে তার সকল কর্মসূচীর বর্ণনা করেন। তিনি জানান, জাতিসংঘের ৭৬তম অধিবেশনের মূল সভা এবং সাইড ইভেন্ট মিলিয়ে তিনি ১০টি সভা এবং ৮টি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশগ্রহণ করেছেন। মূল অধিবেশনে সাধারণ বিতর্ক পর্বের উদ্বোধনী অধিবেশনেও যোগদান করেন। এবারের অধিবেশনে কোভিড-১৯ প্রেক্ষাপটে ‘প্রত্যাশা’কে উপজীব্য করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল মহামারী থেকে টেকসই উত্তরণ। এছাড়াও টিকার সর্বজনীন প্রাপ্যতা, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব, নারীর ক্ষমতায়ন, বর্ণবাদ, এসডিজি, পারমাণবিক অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণ ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনা হয়েছে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে। প্রধানমন্ত্রী এসডিজি অর্জনে সর্বোচ্চ সাফল্যের জন্য তাকে যে পুরস্কার দেয়া হয়েছে তা তিনি দেশের জনগণকে উৎসর্গ করেছেন বলেও প্রকাশ করেন।

প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন হলেই দেশবাসীর প্রত্যাশা থাকে, তিনি দেশের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে কিছু জানাবেন কিংবা চলমান কোন ইস্যুতে সরকারের চিন্তা-ভাবনা অবহিত করবেন জাতিকে। প্রধানমন্ত্রী মানুষের সেই প্রত্যাশা সব সময়ই পূরণ করেন। এজন্য সংবাদ সম্মেলনে তার মূল বিষয়ের বাইরে গিয়ে কথা বলতে কখনও দ্বিধা করেন না। ওইসব তথ্য এবং সরকারের অবস্থান জানাতে প্রধানমন্ত্রীকে সহায়তা করে সাংবাদিকদের নানামুখী প্রশ্ন। এবারও তাই হয়েছে। লিখিত বক্তব্যের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সাংবাদিকের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে উঠে আসে আগামী নির্বাচন, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন, জিয়াউর রহমানের আমলে কথিত ক্যুর অভিযোগে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের হত্যা, রোহিঙ্গা সঙ্কট, বাংলাদেশে করোনার টিকা উৎপাদনের প্রস্তুতি, ই-কমার্সের প্রতারণা, তালেবানদের উত্থানে বাংলাদেশের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ, বিভিন্ন কাজে গবেষণার প্রয়োজনীয়তা, মুজিববর্ষ উপলক্ষে গৃহহীনদের দেয়া ঘরে ভাঙ্গন ইত্যাদি প্রসঙ্গ। দীর্ঘ সোয়া ২ ঘণ্টার ওই সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা প্রধানমন্ত্রীকে অসংখ্য প্রশ্ন করেন। ধৈর্যের সঙ্গে স্বভাবসুলভ হাসিমাখা মুখে প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি। করোনার কারণে সব সাংবাদিককে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন না করতে পারায় দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনতে আমরা সক্ষম হয়েছি। আশা করছি শীঘ্রই সবাইকে নিয়ে বসে কথা বলতে পারবো।
কাজেই গণমাধ্যমের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওই জবাদিহি গণতন্ত্রের প্রতি কেবল তার গভীর শ্রদ্ধাবোধই প্রকাশ করে না, বরং সকল রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে তার স্বচ্ছতাও প্রমাণ করে। জয়তুঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জয়তুঃ গণতন্ত্র।
