ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা জামালপুরগামী কমিউটার ট্রেনে ডাকাতি ও দুজনকে হত্যার ঘটনায় রেলওয়ে থানায় মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন শিমুল (২৬) নামে একজনকে আটক করা হয়েছে। শনিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ময়মনসিংহ রেলওয়ে থানার ওসি মামুন রহমান। ডাকাতের ছুরিকাঘাতে নিহত সাগরের মা হনুফা খাতুন বাদী হয়ে শুক্রবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাতে ময়মনসিংহ রেলওয়ে থানায় মামলাটি দায়ের করেন। এ মামলায় অজ্ঞাত ৮-১০ জনকে আসামি করা হয়েছে। রেলওয়ে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার সাইফুল্লাহ আল মামুন শুক্রবার দুপুরে জামালপুর হাসপাতালে আহত রোগীকে দেখেন। ওসি মামুন রহমান আরও বলেন, বিষয়টি পুলিশ গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে। ইতোমধ্যে শিমুল নামে সন্দেহভাজন একজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আশা করি শিগগিরই জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে পারব।
এর আগে বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাতে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা জামালপুরগামী কমিউটার ট্রেনের ছাদে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতদের ছুরিকাঘাতে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার সানন্দবাড়ী মিতালী বাজার এলাকার ওয়াহিদের ছেলে নাহিদ মিয়া ও জামালপুর শহরের বাগেড়হাটা বটতলা এলাকার হাফিজুর রহমানের ছেলে সাগর নিহত হয়।
আহত রুবেল মিয়ার বরাত দিয়ে জামালপুর রেলওয়ে থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আরও জানান, ময়মনসিংহের গফরগাঁও স্টেশনে কয়েকজন ছিনতাইকারী ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা দেওয়ানগঞ্জগামী কমিউটার ট্রেনের ছাদে উঠে। ছাদে থাকা তিন যাত্রীর কাছ থেকে মোবাইলসহ নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়ার সময় বাধা দিলে ছিনতাইকারীরা প্রথমে দুজনকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে ও পরে রুবেল মিয়াকেও ছুরিকাঘাত করে। ট্রেনটি ময়মনসিংহ স্টেশনে ঢোকার আগেই পাঁচজনের ডাকাতদলটি নাহিদসহ অনেক যাত্রীর কাছ থেকে মানিব্যাগ ও মোবাইল ফোন লুট করে ট্রেনের ইঞ্জিনের দিকে চলে যায় এবং কেওয়াটখালী ওভারব্রীজের কাছে নেমে পড়ে।
ফারুক নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেলে আমরা ঢাকা থেকে কমিউটার ট্রেনের ছাদে জামালপুর ফিরছিলাম। ট্রেনটি ময়মনসিংহের গফরগাঁও রেলস্টেশন ছাড়ার পর ছাদের যাত্রীদের অনেকেই ডাকাত দলের কবলে পড়েন। তিনি আরও বলেন, ট্রেনটি রাত পৌনে ৯টার দিকে ময়মনসিংহ রেলস্টেশন ছাড়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই বেশ কয়েকজন যাত্রী এক হয়ে ট্রেনের ছাদে ডাকাতদের খুঁজতে যান। তারা ডাকাতদের চিনতে পারলে কিছু বলার আগেই ডাকাতরা তাদের ওপর হামলা করে। এতে নাহিদ, রুবেল ও অজ্ঞাত আরেকজন গুরুতর আহত অবস্থায় ট্রেনের ছাদেই পড়ে থাকেন।
পরে রাত ১০টার দিকে ট্রেনটি জামালপুর রেলস্টেশনে পৌঁছালে গুরুতর আহত তিন যাত্রীকে ছাদ থেকে নামিয়ে চিকিৎসার জন্য জামালপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যায় রেলওয়ে থানা পুলিশ। পরে তাদের মধ্যে নাহিদ ও সাগরকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।
ময়মনসিংহ রেলওয়ে থানার ওসি মামুন রহমান জানান, ইতিপূর্বে ময়মনসিংহে হত্যা ছিনতাই ঘটনার মামলা কারো সাজা হয়েছে কিনা তার তার জানা নেই। তবে ২০১৮ সালে শ্যামগঞ্জ ও গৌরীপুরের মাঝামাঝি ট্রেনে ছিনতাইকারীর আঘাতে একজন নিহত হলে থানায় মামলা হয় এবং ৬জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। মামলাটি এখন বিচারাধীন রয়েছে। এছাড়াও চলতি সেপ্টেম্বর মাসে ময়মনসিংহ রেলওয়ে থানায় এছাড়া আরো ৪টি চুরি ও ছিনতাই মামলা হয়েছে।