বিনোদন ডেস্ক : সময়ের আলোচিত সরলপুর ব্যান্ডের শ্রোতাপ্রিয় গান ‘যুবতি রাধে’ নিয়ে বিতর্ক চলছেই। এ চলমান বিতর্কের মাঝেই কপিরাইট অফিসে আনুষ্ঠানিকভাবে কপিরাইট আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ দায়ের করলো ব্যান্ডটি।

‘আইপিডিসি আমাদের গান’ শীর্ষক গান প্রকল্পে পার্থ বড়ুয়ার সংগীতায়োজনে জনপ্রিয় তারকা শাওন ও চঞ্চলের কণ্ঠে ‘সর্বত মঙ্গল রাধে’ শিরোনামের গানটি হুবহু নকলের অভিযোগ এনেছে তারা। ৮ ডিসেম্বর এক মেইল বার্তায় ওই তথ্য নিশ্চিত করেছে সরলপুর। সরলপুর জানায়, কপিরাইট আইন লঙ্ঘন করে বিনা অনুমতিতে তাদের ৪২ লাইনের গানটির ৩২ লাইন হুবহু গাইবার অভিযোগে সোমবার (৭ ডিসেম্বর) প্রমাণসহ ওই অভিযোগ দায়ের করেছে তারা। অভিযোগ প্রমাণিত হলে দোষী ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ ৪ বছরের জেল ও ২ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে।
এর আগে ‘আইপিডিসি আমাদের গান’ প্রকল্পে গানটি প্রকাশের সাথে সাথেই কপিরাইট প্রদর্শন করে ইউটিউব ও ফেসবুক থেকে গানটি সরিয়ে দেয় সরলপুর ব্যান্ড। এর জের ধরেই বিতর্কের সূত্রপাত ঘটায় আইপিডিসি সংশ্লিষ্টরা। ‘গানটি মৌলিক নয়’ এমন দাবিতে গণমাধ্যমে বক্তব্য রাখেন জনপ্রিয় তারকা শাওন ও চঞ্চল।

বাংলা একাডেমির উপপরিচালক গবেষক সাইমন জাকারিয়াও বিভিন্ন লোকসংগীত গ্রন্থ থেকে গানটির বিভিন্ন অংশের সমিল তুলে ধরেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। যদিও, সরলপুর ব্যান্ড বরাবরই বলে আসছে গানটি রাধা-কৃষ্ণের চিরায়ত প্রেম কাহিনী অবলম্বনে তাদের সৃষ্ট গানটি সম্পূর্ণ নতুনত্বের দাবি রাখে। যে কারণেই ইতিপূর্বে সুমী মির্জা নামের এক শিল্পীর একই ধরণের অভিযোগের প্রেক্ষিতে যথাযথ যাচাই বাছাই ও গবেষণার পর কপিরাইট অফিস তাদের সনদ বহাল রাখে। এদিকে, নতুন করে সৃষ্ট বিতর্কের পর সম্প্রতি আইপিডিসি কর্তৃপক্ষ কপিরাইট অফিসে সরলপুর ব্যান্ডের গানটির মৌলিকত্ব নিয়ে পুনরায় প্রশ্ন তুলে তাদের সনদ পুনর্বিবেচনার আহবান জানিয়ে একটি অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
এ ব্যাপারে সরলপুর ব্যান্ডের ভোকাল মার্জিয়া আমিন তুরিন বলেন, ‘আমরা এ ব্যাপারে মোটেই চিন্তিত নই আমরা। আমরা তাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সন্তোষজনক জবাব কপিরাইট অফিসে জমা দিয়েছি। আশা করছি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক আইন বিবেচনায় গানটির কপিরাইটের বিষয়ে আমাদের যৌক্তিক দাবি কপিরাইট অফিস সুবিবেচনা ফলপ্রসূ সিদ্ধান্ত নেবেন। অন্যথায় যেকোনো নেতিবাচক সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে আমরা আমাদের পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবো।’
মার্জিয়া তুরিন প্রশ্ন রাখেন, ‘আমাদের এই ‘যুবতি রাধে’ গানটি লিখতে গিয়ে আমাদের অনুসরণ করতে হয়েছে বাংলার চিরায়ত সেই লীলা কীর্তন ধারার ভাব-ভংগিমা, রাধা-কৃষ্ণের প্রেমলীলার বিভিন্ন শব্দ চয়ন, ভাবধারা ও তথ্য উপাত্ত, এটি কখনোই কোন গানের হুবহু নকল নয়। অথচ, আমাদের গানটি হুবহু চুরি করে তারা আমাদেরকেই চোর প্রমাণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। বিভিন্ন বই থেকে রাধা-কৃষ্ণের সেই চিরন্তন প্রেম কাহিনী নিয়ে বিভিন্ন লোকগীতি থেকে খণ্ড খণ্ড কয়েক লাইন এনে মিল দেখাচ্ছেন। বারবার আহ্বান জানানোর পরও দেখাতে পারেননি আমাদের আগে গানটি কোথায় তারা শুনেছেন? গবেষক সাইমন জাকারিয়া ২০২০ সালে প্রকাশিত একটি কীর্তনের আসরে গাওয়া আমাদের গানটিরই একটি কাভার ভিডিও দেখিয়ে বলছেন, গানটি যুগযুগ ধরে গাওয়া হচ্ছে। তার ভুলটি ধরিয়ে দেয়ার পরও তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করে সংশোধন করেননি। তার গবেষণা খণ্ডিত, পক্ষপাতদুষ্ট ও আইওয়াশ।
তিনি আরও বলেন, গানটি গাইবার আগেই কি এ ধরণের গবেষণা তারা করতে পারতেন না? রাধা-কৃষ্ণ, শিরি-ফরহাদ, লাইলি-মজনুর প্রেম কাহিনী নিয়ে অসংখ্য সৃষ্টি আছে। তারাও কি নিজেদের মতো করে একটি গান তৈরি করতে পারতেন না? কেন হুবহু আমাদের গানটিই তারা চুরি করলেন। এটি স্পষ্টতই কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন। দেশের আইনের প্রতি, মেধাস্বত্তের প্রতি নুন্যতম শ্রদ্ধাবোধ থাকলে তারা এমনটি করতে পারেন না।’
সরলপুর ব্যান্ডের পক্ষে আইনি লড়াই করছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি ব্যারিস্টার গাজী ফরহাদ রেজা। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের কপিরাইট আইন অনুযায়ী গানটির কপিরাইট ইস্যুতে অভিযোগ করার ক্ষেত্রে আইপিডিসির যোগ্যতা ও আইনগত কোনো ভিত্তি নেই। শুধু তাই নয়, আন্তর্জাতিক আইনেও কপিরাইট লঙ্ঘনকারী কখনোই কপিরাইটের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন রাখার যোগ্যতা রাখে না। পাশাপাশি যেহেতু এইরকম অভিযোগে কপিরাইট অফিসের রেজিস্টার শুনানির মাধ্যমে গানটির কপিরাইট সনদ বহাল রেখেছেন, সেক্ষেত্রে তার বা তার সমান ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তার এ বিষয়ে পুনরায় শুনানি গ্রহণে দেওয়ানী কার্যবিধি ১১ অনুসারে আইনগত বাধা আছে। তাই ‘যুবতি রাধে’ গানটি নিয়ে আইপিডিসি কর্তৃপক্ষের আবেদনটি শুরুতেই খারিজযোগ্য বলে আমরা মনে করি। এছাড়াও গানটির মৌলিকত্ব প্রসঙ্গে সরলপুর তাদের যৌক্তিক দাবি তুলে ধরেছে, যা এ ধরণের গানের ক্ষেত্রে শুধু আমাদের দেশের আইন নয় আন্তর্জাতিক আইনও সরলপুরকে সমর্থন করছে এবং করবে।’
