স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইগাতী ॥ গারোদের বিশ্বাস, ‘মিসি সালজং’ বা শস্য দেবতার ওপর নির্ভর করে ফসলের ভালো ফলন। এই শস্য দেবতাকে ধন্যবাদ জানিয়ে ও নতুন ফসল খাওয়ার অনুমতির পাশাপাশি ‘পরিবারে ভালবাসা, মণ্ডলীর আনন্দ, সব পরিবারের মঙ্গল কামনা করে’ প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে গারো সম্প্রদায়রা পালন করেছেন ওয়ানগালা বা নবান্ন উৎসব। ২২ নভেম্বর রবিবার করোনা সংকটের কারণে সংক্ষিপ্ত আয়োজনে উপজেলার দুধনই গ্রামের মরিয়মনগর সাধু জর্জ ধর্মপল্লীতে ওই উৎসবের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ও প্রার্থনা পরিচালনা করেন করেন খামাল ফাদার সুবল কুজুর, সিএসসি। ওইসময় ৩ জনকে নকমা প্রদান করা হয়। ওইসময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে থক্কা, পবিত্র খ্রীষ্টযাগ, দান সংগ্রহ, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এছাড়া বিকেলে মিশন এলাকার গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে নক্গাত্তা অনুষ্ঠিত হয়।
জানা যায়, গারোদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎসব ওয়ানগালা। ‘ওয়ানা’ শব্দের অর্থ দেবদেবীর দানের দ্রব্যসামগ্রী আর ‘গালা’ অর্থ উৎসর্গ করা। দেবদেবীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও মনোবাসনার নানা নিবেদন হয় এ উৎসবে। সাধারণত বর্ষার শেষে ও শীতের আগে, নতুন ফসল তোলার পর এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। এর আগে নতুন খাদ্যশস্য ভোজন নিষেধ থাকে এ সম্প্রদায়ের জন্যে। তাই অনেকেই একে নবান্ন বা ধন্যবাদের উৎসবও বলে থাকেন। আবার ওয়ানগালা উৎসব একশ ঢোলের উৎসব নামেও পরিচিত।
মরিয়মনগর ধর্মপল্লীর পালপুরোহিত ও খামাল ফাদার সুবল কুজুর সিএসসি জানান, ১৯৮৫ সাল থেকে মরিয়মনগর সাধু জর্জের ধর্মপল্লীর উদ্যোগে ওয়ানগালা উৎসব পালন করা হচ্ছে। সুপ্রাচীনকাল থেকে গারো সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিকে নতুন প্রজন্ম ও বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে তুলে ধরাই এর মূল লক্ষ্য। উৎসব ঘিরে ধর্মপল্লীর পাশে গারোদের ঐতিহ্যবাহী পোষাক ও শিশুদের নানা রকমের খেলনা নিয়ে মেলা বসে। তবে এবার করোনার কারণে এ উৎসব বড় পরিসরে আয়োজন করা হয়নি।