বান্দরবান : বান্দরবান রাজবিলা ইউনিয়নের বাগমারা বাজারে দুর্বৃত্তদের গুলিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি সংস্কারের নেতাসহ ৬ জন নিহত হয়েছে। ওই ঘটনায় আহত হয়েছে এক নারীসহ ৩ জন। আহতদের জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ৭ জুলাই মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকের ওই ঘটনায় দুর্বৃত্তরা গুলি করে পালিয়ে যায়। তবে সংস্কার নেতাদের দাবি, পিসিজেএসএসের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা তাদের নেতাকর্মীদের গুলি করে হত্যা করেছে। পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থল ও আশপাশের এলাকা ঘিরে রেখেছে। সকাল ১১টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে নিহতদের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহতরা হলেন- পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি সংস্কারের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি বিমল কান্তি চাকমা ওরফে প্রজিত (৬৫), কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা ডেবিট মার্মা (৫০), সংস্কার দলের জেলা সভাপতি রতন তঞ্চঙ্গ্যা (৬০), জয় ত্রিপুরা (৪০), ডিপেন ত্রিপুরা (৪২) ও মিলন চাকমা (৬০)। নিহত রতন তঞ্চঙ্গ্যা ছাড়া বাকি ৫ জনের বাড়ি খাগড়াছড়ি জেলায়। আহত তিনজন হলেন- নিরু চাকমা (৫০), বিদ্যুত ত্রিপুরা (৩৭) ও এক মার্মা নারী।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সংস্কারের জেলা কমিটির সদস্য উয়াইমং মার্মা বলেন, ‘সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে আমি রান্না করছিলাম। এর প্রায় আধা ঘণ্টা পরে জলপাই রঙের পোশাক ও ত্রিকোয়ার্টার প্যান্ট পরিহিত দু’জন অস্ত্রধারী প্রথমে সংস্কারের জেলা সভাপতি রতন তঞ্চঙ্গ্যার বুকে গুলি করে। এরপর কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা বিমল কান্তি চাকমাকেও গুলি করে হত্যা করা হয়। ঘটনার সময় তারা দু’জনে বাইরে চেয়ারে বসে গল্প করছিলেন। এ সময় আমি পাশের ক্ষেতে লাফ দিয়ে পালিয়ে যাওয়ায় প্রাণে বেঁচে যাই। এর পরপরই অন্যদের গুলি করা হয়।’
নিহত রতন তঞ্চঙ্গ্যার স্ত্রী মিনি মার্মা বলেন, ‘সকালে বাগমারা বাজার থেকে রতন বাজার করে নিয়ে আসেন। বাজারগুলো বাইরের রান্না ঘরে রেখে ও উঠানে প্লাস্টিকের চেয়ার বসে বিমল কান্তি চাকমার সঙ্গে গল্প করছিল। এর কিছুক্ষণ পরেই গুলি শব্দ শুনি। বাইরে বের হয়ে দেখি, রতন চেয়ারে ও অন্যজন মাটিতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। অস্ত্রধারীরা আমাকে গুলি না করে আমার সামনেই অন্য সবাইকে গুলি করে হত্যা করে।’
পুলিশ জানায়, সকাল ৬টা ৫৫ মিনিটের দিকে বাগমারা বাজার পাড়ার সংস্কারের সভাপতি রতন তঞ্চঙ্গ্যার বাসায় এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। অস্ত্রধারীরা কাছ থেকে গুলি করে সংস্কারের নেতাকর্মীদের হত্যা করে। নিহতদের লাশ উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। আহত তিনজনকে জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
সংস্কারের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক উবামং মার্মা বলেন, ‘রতনের বাড়ির পাশের বাড়িটি আমার। বউ-বাচ্চা নিয়ে আমি তখনও বিছানায়। গুলির শব্দ শুনে ভয়ে ঘর থেকে বের হইনি। অস্ত্রধারীরা আমার বাড়ির মধ্যে ঢুকে মিলন চাকমাকে গুলি করে হত্যা করে। রুমের দরজা বন্ধ থাকায় আমি বেঁচে যাই। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সংগঠন জেএসএসের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা জড়িত। আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’
সদর থানা ওসি শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সংস্কারের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি অস্ত্রধারীরা জলপাই রঙের পোশাকে পরিহিত ছিল। তারা সবাই জেএসএসের সদস্য। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, এ ঘটনার সঙ্গে সরাসরি ৫ জন জড়িত ছিল। তবে তাদের সঙ্গে আর কারা কারা আছে তা তদন্ত করে জানা যাবে।’ এ ব্যাপারে কথা বলতে জেএসএসের জেলা কমিটির সভাপতি উছোমং মার্মার মোবাইলফোনে কয়েকবার ফোন করা হলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
