স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বদান্যতায় ও তারই নির্দেশনায় শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে হৃদয়ের ঐশ্বর্যবান সেই নাজিমুদ্দিনের (৮০) জন্য বাড়ি তৈরির কাজ এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের প্রত্যন্ত পল্লী গারো পাহাড়ের গান্ধীগাঁও গ্রামে ৫ শতাংশ জমির উপর নির্মিয়মান সেই বাড়ির পুরোটা ইট দিয়ে গেঁথে তোলা হয়েছে। এখন চলছে পলেস্তারার কাজ। টিনশেড হাফ বিল্ডিং ওই গৃহে থাকছে দু’টি কক্ষ। বাড়ির ওপরে রঙিন টিনের ছাউনি। দু’পাশে লোহার গ্রিল দিয়ে বারান্দা করা হয়েছে। রয়েছে বড়সর রান্নাঘর, তারপাশে পাশে গোসলখানা ও শৌচাগার। সবমিলিয়ে যেন একটি পরিপাটি বসতবাড়ি। আর এটিই বৃদ্ধ নাজিম উদ্দিনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহার। অন্যদিকে ওই ঘর দেখতে এখন প্রতিদিন আশপাশের এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় প্রতিদিন লোকজন ভিড় করছেন।
করোনা ভাইরাসজনিত পরিস্থিতিতে লকডাউনে সারাদেশের ন্যায় সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী অঞ্চলসহ শেরপুরে কর্মহীন হয়ে পড়ায় হতদরিদ্র ও অসহায় মানুষের জীবনে দুর্ভোগ-কষ্ট নেমে আসলে তাদের সহায়তায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল মাহমুদের হাতে গড়া সহায়তা তহবিলে গত ২১ এপ্রিল নিজের ঘর করার জন্য তিলে তিলে জমানো ১০ হাজার টাকা দান করেন ভিক্ষুক নাজিম উদ্দিন। গান্ধীগাও গ্রামের মৃত ইয়ার উদ্দিনের ছেলে নাজিম উদ্দিনের দানের ওই ঘটনা সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে ওই ভিক্ষুকের মহানুভবতার কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে শেরপুরের জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব ঘোষণা দেন নাজিম উদ্দিনকে পাকাঘর করে দেওয়ার পাশাপাশি যাবতীয় সরকারি সুযোগ সুবিধা দেওয়ার। প্রধানমন্ত্রীর সেই নির্দেশনা মোতাবেক ২২ এপ্রিল নাজিম উদ্দিনকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় রজনীগন্ধায় উষ্ণ সংবর্ধনা দেওয়ার পাশাপাশি তার হাতে তুলে দেওয়া হয় নগদ ২০ হাজার টাকা। এর পরপরই তার বাড়ি নির্মাণের জন্য জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বাছাই করা হয় সরকারি খাস খতিয়ানের এক খণ্ড জমি।
পাকা বাড়ি পেয়ে সেই দানবীর ভিক্ষুক নাজিম উদ্দিন নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, ‘৮০ বছর বয়স অইলো। আইজ পর্যন্ত পাক্কা গরে থাহি নাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমারে পাক্কা ঘর কইরা দিতাছে। স্বপ্নেও ভাবি নাই আমার মত ভিখারি দালান ঘরে থাকমু। খুব ভাল লাগতাছে। আল্লাহ মাবুদ শেখ হাসিনারে বাঁচায়া রাখুক, সুখী করুক। আর দেশরে করোনামুক্ত করুক। এইডাই আমার চাওয়া।
এলাকার সংসদ সদস্য আলহাজ্ব প্রকৌশলী একেএম ফজলুল হক চাঁন বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী সত্যিকার অর্থেই মানবতার মা। তিনি প্রত্যন্ত গ্রামের একজন ভিখারির দানকে গ্রহণ করে তাকে সম্মানীত করেছেন। সেইসাথে দেশকেও করেছেন সম্মানীত। এজন্যই শেখ হাসিনাকে জননেত্রী বলা হয়।
এ ব্যাপারে ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল মাহমুদ বলেন, ভিক্ষুক নাজিম উদ্দিন তিল তিল করে ঘর তৈরি করার জন্য অনেক কষ্টে ১০ হাজার টাকা সঞ্চয় করেছিলেন। সেই টাকা তিনি সরকারি করোনা তহবিলে দান করে অনন্য নজির সৃষ্টি করেন, যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসে। এর প্রেক্ষিতেই তিনি বিরল সেই দৃষ্টান্তের স্বীকৃতিস্বরূপ তার থাকার জন্য জায়গাসহ বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়ার নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশনা মোতাবেক এক খণ্ড জায়গাতে চলছে তার টিনশেড হাফ বিল্ডিং বাড়ি নির্মাণের কাজ। পুরো কাজ শেষ করে আগামী জুলাই মাসের মধ্যে ওই বাড়ি হস্তান্তর করা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় উপজেলা প্রশাসনের তরফ থেকে নাজিম উদ্দিনকে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেওয়ার পাশাপাশি চিকিৎসা ও খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।