বিএনপি নেতা জমি দখল করে নির্মাণ করেছে বাড়ি ও কবরস্থান
অভিযোগ পেয়ে ইউএনও, এসিল্যান্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শন
ঝিনাইগাতী (শেরপুর) প্রতিনিধি ॥ শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে উচ্ছেদ আতঙ্কে ভুগছে অসহায় এক সংখ্যালঘু পরিবার। উপজেলার সদর ইউনিয়নের পাইকুড়া গ্রামের নগেন্দ্র রবিদাসের (২৫) ১০ সদস্যের ওই পরিবারের বসতঘরসহ জমি দখল করে নিয়ে তাদের ভিটেছাড়া করতে নানা ষড়যন্ত্র ও ভয়ভীতি হুমকি প্রদর্শন করে আসছে স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালী। ফলে ওই অসহায় সংখ্যালঘু পরিবার উচ্ছেদ আতঙ্কের পাশাপাশি নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। অন্যদিকে প্রভাবশালীদের ষড়যন্ত্র ও ভয়-ভীতি প্রদর্শনের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণসহ শেষ আশ্রয়স্থল ভিটেবাড়ি রক্ষায় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ দায়িত্বশীল মহলের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন আতঙ্কে থাকা ওই পরিবারটি।
জানা যায়, ঝিনাইগাতী উপজেলার সদর ইউনিয়নের পাইকুড়া বাজারে মৃত গুরুচরণ রবিদাসের নামে ৮১ শতাংশ জমি ছিল। এরমধ্যে ১৬৭২ দাগে ২২ শতাংশ জমির মধ্যে ১০ শতাংশ জমি জাফর আলী নামে এক ব্যক্তি কিনে নেন। প্রায় ৩০ বছর আগে ৭৩ ও ৭৪ দাগের ৩৩ শতাংশ জমি কেনে স্থানীয় মৃত রজব আলীর দুই ছেলে সেকান্দর আলী ও ছামিউল হক। বর্তমানে গুরুচরণের ছেলে নগেন্দ্র রবিদাস ও নাতি রতন রবিদাস ৪ সদস্যের পরিবার নিয়ে ৭২ দাগের ১২ শতাংশ জমিতে বসত ঘর করে বসবাস করেন। সেইসাথে ওই বাড়িতে অনেকদিন আগে থেকেই আশ্রয় নিয়ে আছেন নগেন্দ্রর ঘরজামাই আবুল রবিদাস, মেয়ে শান্তি রাণীসহ ৬ সদস্য। ফলে বসতভিটার ওই জমিটুকুই তার পরিবারের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন।
ভুক্তভোগী পরিবারসহ স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই গ্রামের রজব আলীর ৩ ছেলের মধ্যে ছোট ছেলে স্থানীয় বিএনপি নেতা রূস্তম আলী ২০০১ বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর গুরুচরণের ৭৫ দাগের ২৬ শতাংশের পুরো জমিটিই দখল করে নেয়। পরে সেখানে দোতালা বাড়ী ও কবরস্থান গড়ে তুলে। বর্তমানে তিনি পাইকুড়া বাজারের প্রভাবশালী রড সিমেন্ট ব্যবসায়ী। তার সামনে কথা বলার কেউ নেই। শুধু তাই নয়, পাইকুড়া জমিদার বাড়ীর কয়েক একর খাস জমিও এখন রূস্তমের দখলে। রূস্তমের বড় ভাই সেকান্দর আলী আগে বিএনপি করত। বর্তমানে আওয়ামী লীগ করেন। সেকান্দর আলী ও তার আরেক ভাই ছামিউল হক কিছুদিন আগে নগেন্দ্র রবিদাসের বাড়িতে গিয়ে জোর করে বাড়িটি দখলে নেয়। ওই সময় তারা জমিটি তাদের দাবি করে সেখানে থাকা একটি ঘর ও জমির অর্ধেক অংশে বাঁশের বেড়া দিয়ে দেয়। এতে দরিদ্র পরিবারটি বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না।
স্থানীয় পাইকুড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূর নবী আজাদ বলেন, গুরুচরণ রবিদাসের নামে ৮১ শতাংশ জমির মধ্যে ৪৩ শতাংশ বিক্রি হয়েছে। তার ছেলে নগেন্দ্র ১২ শতাংশ জমিতে বসবাস করেন। বাকী জমি বেদখল। কিছুদিন আগে তাদের বসতভিটে দখল করে নিয়েছে সেকান্দর ও ছামিউল। নগেন্দ্র রবিদাসের ছেলে শেরপুর সরকারি কলেজের স্নাতক শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী রতন রবিদাস অভিযোগ বলেন, সেকান্দর, রূস্তম ও ছামিউল তাদের বাড়ি ছেড়ে দিতে বলেছেন। ছেড়ে না দিলে এলাকা ছাড়া করা হবে বলে হুমকি দিয়েছে। আমরা ভীষণ আতঙ্কে আছি। নগেন্দ্র রবিদাসের স্ত্রী স্থানীয় গ্রামপুলিশ ভুদিয়া রাণী (৫৫) বলেন, দীর্ঘ প্রায় ৮ বছর যাবত তার স্বামী অসুস্থ ও কর্মঅক্ষম। এরপরও পরিবারে রয়েছে এক প্রতিবন্ধী মেয়ে। ছেলে রতন কষ্টে পড়াশোনা করছে। ফলে তার সামান্য বেতন ছাড়া পরিবারের কোন আয় নেই। সেই সাথে নেই বসতভিটা ছাড়া কোন সহায়-সম্পত্তি। ফলে ৪ জনের সংসার খুব কষ্টে চললেও এখন তার পরিবারে নেমে এসেছে উচ্ছেদ আতঙ্ক।
অন্যদিকে রূস্তম আলী অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ওই বাড়ি ৩০ বছর আগে আমার ভাই সেকান্দর ও ছামিউল হক কিনেছেন। নগেন্দ্রকে থাকতে দিয়েছিলাম। এখন ভাইদের প্রয়োজনে আমরা মাপঝোক করে আমাদের জমি দখলে নিয়েছি।
এদিকে ঘটনার বিষয়ে পরিবারের পক্ষে রতন রবিদাস তাদের বসতভিটার জমি জবর দখল ও তাদের উচ্ছেদের ষড়যন্ত্রের প্রতিকার চেয়ে ঝিনাইগাতী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে বুধবার বিকেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল মাহমুদ ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) জয়নাল আবেদীন অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এর আগে ওই সংখ্যালঘুদের খোঁজ নিয়েছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন চাঁন।
এ ব্যাপারে ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল মাহমুদ শ্যামলবাংলা২৪ডটকমকে বলেন, অভিযোগের স্পর্শকাতরতা বিবেচনায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও উপজেলা প্রকৌশলীসহ স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে নিয়ে বুধবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তারা দাবি করছেন, ওই জমি তাদের অনেক আগের কেনা। তবে দু’পক্ষকেই শান্ত পরিবেশে স্ব-স্ব অবস্থানে থাকার জন্য সতর্ক করা হয়েছে। সেইসাথে কাগজপত্র পর্যালোচনা সাপেক্ষে অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্যে সহকারী কমিশনার (ভূমি)কে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর ওই বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।