ময়মনসিংহ সার্কিট হাউস মাঠের নান্দনিকতা বৃদ্ধির প্রকল্প, কিছু বিরোধিতা এবং সদ্য বিদায়ী বিভাগীয় কমিশনারের খোলা চিঠি
বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে যখন ময়মনসিংহে যোগদান করেছিলাম তখন সুধী ও সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেছিলাম ময়মনসিংহকে আমি আমার নিজের বিভাগ বলে মনে করি এবং সে লক্ষ্যে ময়মনসিংহের মাটি ও মানুষের সাথে মিশে গিয়ে ময়মনসিংহের উন্নয়নের লক্ষ্যে নিরলস ভাবে কাজ করে যাবো। সে দায়বদ্ধতা থেকেই রুটিন মাফিক কাজের বাহিরে গিয়ে বিভিন্ন জনকল্যানমূখী বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।
যেমন পলিথিন মুক্ত ময়মনসিংহ বিভাগ বাস্তবায়ন,বাল্যবিবাহমুক্ত ময়মনসিংহ বিভাগ ঘোষণা, মুজিববর্ষে ৭৮০০ ভূমিহীন কৃষককে বিনামূল্যে সরকারি খাসজমি বন্দোবস্ত প্রদান,সরকারি ভূমি হতে ১০০০ অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের টারর্গেট নির্ধারন এবং আরও কত কী।
এরূপ আরেকটি বিশেষ উদ্যোগ হলো ময়মনসিংহের সার্কিট হাউসের মাঠটিকে একটি নান্দনিক উদ্যানে পরিনত করন।
১৬ একর বিশিষ্ট এই সার্কিট হাউস মাঠে প্রতিনিয়ত চলছে ফুটবল ও ক্রিকেট খেলার মহড়া এবং অন্যদিকে চলছে গরু-ছাগলের অবাধ বিচরণ। রাতের আধারে গাঁজাখোরদের আড্ডা দেয়ার অভিযোগও কানে আসছে। থেমে নেই অবৈধ দখলদাররাও। ইতোমধ্যে মাঠের একাংশে গড়ে উঠেছে অনেক অবৈধ স্থাপনা। ক্রমান্বয়ে মাঠের বাকি অংশও ভূমিদস্যুদের কবলে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এসকল বিষয় বিবেচনায় নিয়ে অবৈধ দখলদারদের কবল থেকে মাঠটিকে রক্ষা এবং একটি দৃষ্টিনন্দন উদ্যান সৃষ্টির লক্ষ্যে মাঠের চতুর্দিকের ৩ ফুট উচু একটি পাকা দেয়াল তৈরি করে তার উপরে ৩ ফুট উচু এস,এস এর সুদৃশ্য গ্রিল দ্বারা সাজানো হবে এই মাঠটিকে। বাহির থেকে অনায়াসে উপভোগ করা যাবে মাঠে নয়নাভিরাম দৃশ্য। জনগনের প্রবেশের জন্য থাকবে একটি সুউচ্চ নান্দনিক প্রধান ফটকসহ বড় বড় ৩ টি তোরণ এবং আরও থাকবে ৪/৫ টি ছোট আকারের গেইট। প্রয়োজন বোধে গেইটের সংখ্যা বাড়ানো হতে পারে।
মাঠের ভিতরে চতুর্দিকের তৈরি করা হবে নিরাপদ প্রাতঃ ও বৈকালিক ভ্রমনের জন্য ওয়াকওয়ে যার দু’পাশে থাকবে বাহারি ফুলের গাছ।বাদ যাবে না ভেষজ বৃক্ষসহ থুজা,ক্রিস্টমাস এবং হাসনাহেনারাও। পুরো মাঠটিতে থাকবে সুদৃশ্য বৈদ্যুতিক আলোর ব্যবস্থা। মহিলা-পুরুষের ব্যবহারের জন্য থাকবে ভিন্ন ভিন্ন ২ টি ওয়াশব্লক। ২টি গভীর নলকূপের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হবে নিরাপদ পানি সরবরাহ। ক্রিকেট ও ফুটবল প্রেমীদের জন্য মাঠে অভ্যন্তরে অক্ষুণ্ণ থাকবে খেলার ব্যবস্থা।
জাতির পিতার স্মৃতিকে চির অম্লান করে রাখার জন্য মাঠের একধারে নির্মাণ করা হবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর পরিবারের শহিদ সদস্যদের ম্যুরাল। এ ম্যুরাল নির্মানের ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি টাকা। প্রতি বছর জাতীয় শোক দিবসে হাজার হাজার মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদনের সুযোগ পাবে এখানে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে পুরো সার্কিট হাউস মাঠের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
ময়মনসিংবাসীকে একটি নান্দনিক, নিরাপদ,পরিবেশবান্ধব ও নয়নাভিরাম উদ্যান উপহার দেয়ার লক্ষ্যেই আমার এই আন্তরিক প্রয়াস। ইতোমধ্যেই এ প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়েছে এবং এ অর্থবছরে টেন্ডারের মাধ্যমে কাজটি শুরু হওয়ার পথে।
মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে গৃহীত এ মহতী প্রকল্পটিকে নস্যাৎ করার জন্য ইতোমধ্যেই লক্ষ্য করা গেছে নানা তৎপরতা। বিভিন্ন কু-যুক্তি দাড় করিয়ে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে সাদা মনের সরলপ্রাণা ময়মনসিংহবাসীকে।
দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহরে এরূপ সীমানা প্রাচীর বেষ্টিত উদ্যান/পার্ক রয়েছে। যেমনঃঢাকার রমনা পার্ক ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান,খুলনার শহিদ হাদিছ পার্ক,বরিশালের বঙ্গবন্ধু উদ্যান। এভাবে আরও শতাধিক উদাহরণ দেয়া যাবে। তবে ময়মনসিংহের ক্ষেত্রে কেন এই বিরোধিতা?
ইতঃপূর্বে এ ধরনের বিরুদ্ধাচরণের জন্য ময়মনসিংহবাসী বঞ্চিত হয়েছে বিমান বন্দর থেকে। খেসারত দিতে হয়েছে আরও অনেক ক্ষেত্রে…….।
একজন বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে ময়মনসিংহের মাটি ও মানুষের সাথে একাত্ম হয়ে একটি দৃষ্টিনন্দন উদ্যান উপহার দেয়ার আন্তরিক প্রয়াসের বাস্তব প্রতিচ্ছবি মুজিববর্ষের এ মহতী উদ্যোগ।
এখন একজন সদ্য বিদায়ী বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে আমি এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের যৌক্তিকতা বিচারের ভার ছেড়ে দিলাম ময়মনসিংহবাসীর উপর। আমি দূর থেকে চেয়ে দেখবো বিরোধিতার কারনে ময়মনসিংহবাসী আবারও কি বঞ্চিত হবে—যেভাবে বঞ্চিত হয়েছিল বিমান বন্দর থেকে।
খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান এন,ডি,সি, সদ্য বিদায়ী বিভাগীয় কমিশনার।
(Divisional Commissioner Mymensingh ফেসবুক থেকে নেয়া।)