নালিতাবাড়ী (শেরপুর) প্রতিনিধি ॥ শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে অতিরিক্ত বালু পরিবহনের কারনে নাকুগাঁও ভোগাই সেতুর একাংশ ভেঙ্গে যাওয়ার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার বালু বোঝাই ট্রাকের লোড নিতে না পেরে সীমান্তবর্তী খলচান্দা-আন্দারুপাড়া ব্রিজের এপ্রোচ-রেলিংসহ এপার্টমেন্ট ভেঙ্গে দেবে গেছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে ওই ঘটনা ঘটে। এতে জনভোগান্তি বেড়ে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ এলাকাবাসী।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে অতিরিক্ত বালু বোঝাই করা একটি ট্রাক নালিতাবাড়ী সিমান্ত সড়কে উঠতে প্রায় এক যুগ আগে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশন নির্মিত আন্দারুপাড়া-খলচান্দা ব্রিজ পাড় হতে গেলে ওই ব্রিজের একপাশের এপ্রোচ ভেঙ্গে দেবে যায়। সেই সাথে রেলিং ও এপার্টমেন্টও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আটকে যায় বালু বোঝাই ট্রাকটি। সাথে সাথে এলাকাবাসী ছুটে গেলে তাদের মাঝে সৃষ্টি হয় উত্তেজনা। ওই অবস্থায় ট্রাক রেখেই পালিয়ে যায় চালক-হেলপার। পরে খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ট্রাকটি আটক করেন। সেই সাথে তিনি ঘটনার বিষয়ে আইননানুগ পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, নালিতাবাড়ী সীমান্ত সড়কের বুরুঙ্গা ব্রিজের উত্তরে ভারত থেকে বয়ে আসা পাহাড়ি নদী চেল্লাখালীতে প্রতিবছর বালু উত্তোলনের জন্য বালু মহাল হিসেবে বেশকিছু এলাকা লীজ দেয় জেলা প্রশাসন। এ সুযোগে সরকারী নির্দেশনা না মেনে বালু ব্যবসায়ীরা যত্রতত্র বালু উত্তোলন অব্যাহত রাখে বছরজুড়ে। যেখানে-সেখানে নদীর তলা বোরিং করে, নদী তীরবর্তী সমতল ভূমি খুঁড়ে, নদী তীরবর্তী পাহাড় ও পাহাড়ি বনভূমি ইত্যাদি খুঁড়ে বালু উত্তোলনে চলে মহোৎসব। ফলে গত কয়েক বছরে মৃত প্রায় পরিনত হয় খরস্রোতা নদীটি। সেই সাথে ঝুঁকিতে পড়ে আছে সীমান্ত সড়কে প্রায় ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বুরুঙ্গা ব্রিজটি।
অন্যদিকে যান চলাচলের উপযুক্ত রাস্তা না থাকলেও আদিবাসী গ্রাম খলচান্দায় যাতায়াতের কাঁচা রাস্তা দু’টি অতিরিক্ত বালু বোঝাই ট্রাক চলাচল করে খদাখন্দে পরিণত করা হয়েছে। শুকনো মৌসুমে প্রচন্ড বালু আর বর্ষা মৌসুমে কাঁদাপানিতে একাকার হয়ে ওই এলাকায় যাতায়াত বিঘিœত হয় সবসময়। স্থানীয়দের মতে, গত কয়েক বছরে বালু মহাল ইজারার নামে ওই এলাকায় চলে আসছে পরিবেশের মারাত্মক ধ্বংসযজ্ঞ। প্রশাসন মাঝে মাঝে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করলেও তা থোরাই কেয়ার করেন বালু ব্যবসায়ীরা। স্থানীয় ভুক্তভোগীরা জানান, নদীতে বর্তমানে পর্যাপ্ত বালু না থাকলেও সরকার ইজারা দিয়ে যাচ্ছে। এতে করে নদীর নাব্যতা নষ্ট ও প্রকৃতি ধ্বংস হচ্ছে। হুমকির মুখে পড়েছে সরকারী স্থাপনা। বালু পরিবহনের কারনে রাস্তা-ঘাট নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ভোগান্তি বেড়েই চলেছে স্থানীয়দের। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আজাদ মিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, অতিরিক্ত বালুভর্তি ট্রাক পরিবহন করে খলচান্দা গ্রামের প্রবেশের রাস্তায় থাকা ব্রিজে উঠায় ব্রিজের একাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে তিনি সংশ্লিদের উদাসীনতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুর রহমান জানান, একদিকে বৃষ্টিপাতে রাস্তা দূর্বল হয়ে পড়েছে, অন্যদিকে অতিরিক্ত বালি বোঝাই করার কারনে ব্রিজটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে খবর পেয়ে ঘটনস্থল পরিদর্শন করে ট্রাকের চালক বা অন্য কাউকে না পেলেও ট্রাকটি আটক করা হয়েছে। ঘটনার বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।