৬ দিনে মোট জামিন ১৮০ আসামির
স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনা ভাইরাসজনিত পরিস্থিতিতে সরকার ও বিচার বিভাগের যুগান্তকারী পদক্ষেপ ভার্চুয়াল আদালতে শেরপুরে জামিন পেয়েছে আরও ৩১ আসামি। ১৯ মে মঙ্গলবার ষষ্ঠ কার্যদিবসে জেলা ও দায়রা জজ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালসহ শিশু আদালত এবং চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতসহ আমলী আদালতগুলোতে জামিন শুনানী নিস্পত্তি হয়েছে ৫৩টি মামলায়। আর ওইসব মামলায় জামিন পেয়েছেন ৩১ আসামি। এর আগে গত ৫ দিনে সব আদালত মিলে জামিন পায় ১৪৯ আসামি। এ নিয়ে ভার্চুয়াল আদালতে জামিন পেল মোট ১৮০ আসামি।
জানা যায়, মঙ্গলবার শেরপুরের জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ১৬টি আবেদন শুনানী শেষে ১১টি আবেদন মঞ্জুর করেন জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ আল মামুন। এতে জামিন পায় ১৩ আসামি। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালসহ শিশু আদালতে ৪টি আবেদনের মধ্যে ৩টি মঞ্জুর করেন বিচারক মোঃ আখতারুজ্জামান। আর ৪টি আবেদনের মধ্যে ২টি মঞ্জুর করেন চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এসএম হুমায়ুন কবীর। এছাড়া জেলার ৫টি জিআর আমলী আদালতে মোট ২৯টি আবেদনের মধ্যে ১৩টি মঞ্জুর করেন স্ব-স্ব আদালতের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটগণ। এ নিয়ে কেবল চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৬ দিনে করা মোট ২৩৯টি আবেদনের মধ্যে ২০৬টি আবেদন শুনানীঅন্তে ১৩৮টি মঞ্জুর হয়। এতে জামিন মেলে ১৪৩ আসামির।
আদালতের সাথে সংশ্লিষ্ট ও আইনজীবীসহ নানা সূত্র জানায়, শেরপুর একটি সীমান্তবর্তী ছোট্ট জেলা হলেও এখানকার মানুষ খুবই শান্তিপ্রিয়। এখানে অপরাধের পরিমাণও কম। তাই শেরপুরে কোর্ট-কাচারীতে মামলার সংখ্যা অন্যান্য জেলার তুলনায় খুবই কম। যেমন শেরপুরের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে মামলার সংখ্যা প্রায় ৪ হাজারের কিছু বেশি, যেখানে পাশ্ববর্তী ময়মনসিংহ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে মামলার সংখ্যা প্রায় ২২ হাজারেরও বেশি। তাই মামলা সংখ্যাধিক্য ও মামলাজটের কারণে অনেক জেলার নাম নানাসময় শোনা গেলেও শেরপুরের নাম কখনও সেভাবে শোনা যায়নি। তবে সম্প্রতি শেরপুর চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে ভার্চুয়াল শুনানীতে ব্যাপক সাড়া পড়ায় শেরপুর জেলা সমগ্র বাংলাদেশের মধ্যে ব্যাপক সুনাম কুড়িয়েছে। সমগ্র দেশের বিচারক, আইনজীবী ও মানুষের মুখে মুখে শেরপুরের নাম। এমনকি যেসব জেলায় কোর্ট-কাচারীতে ভার্চুয়াল শুনানী হচ্ছে না, সেসব জেলার বিচারক, আইনজীবী, সাধারণ মানুষও এ জেলার সাফল্য জানতে ফোন করছেন পরিচিতজনদের কাছে। এতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি একেএম মোছাদ্দেক ফেরদৌসী ও সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমকে মুরাদুজ্জামানসহ অনেকেই।
এ ব্যাপারে জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এডভোকেট রফিকুল ইসলাম আধার বলেন, তুলনামূলকভাবে অনেক অল্প মামলা, অল্প বিচারক ও অল্প আইনজীবী থাকা স্বত্বেও শেরপুরের নবাগত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এসএম হুমায়ুন কবীরের নেতৃত্বে এখানকার ম্যাজিস্ট্রেসীতে বিচার বিভাগের যুগান্তকারী পদক্ষেপ ভার্চুয়াল শুনানীর মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক মামলা নিষ্পত্তির জন্যই বিচার অঙ্গনে শেরপুর একটি মডেল হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে। তিনি যেভাবে কোর্ট কাচারীতে ভার্চুয়াল পদ্ধতি শুরুর পূর্বাহ্নেই জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটগণ, আইনজীবী, কোর্টের স্টাফসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন, অন্যান্য জেলাও সেভাবে কাজ করলে শেরপুরের মত সফল হতে পারত। অবশ্য এজন্য এখনও সময় রয়েছে। শেরপুরবাসী আশা করে, শেরপুরের ন্যায় দেশের অন্যান্য জেলাও কোর্ট-কাচারীতে সাফল্যের সাথে ভার্চুয়াল পদ্ধতি প্রয়োগ করে সহজে ও নিরাপদে জনগণকে বিচারিক সেবা প্রদানে সচেষ্ট হবে।
উল্লেখ্য, গত ১০ মে নিম্ন আদালতের ভার্চুয়াল কোর্টে শুধু জামিন শুনানি করতে নির্দেশ দেন সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন। এরপর ১১ মে থেকে সারাদেশে ওই শুনানীর সুযোগ নিশ্চিত হলেও শেরপুরে তা শুরু হয় ১২ মে থেকে। ওইদিন নবাগত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এসএম হুমায়ুন কবীর ২টি আবেদন গ্রহণ করে ২টিই নিস্পত্তি করায় জেলায় ভার্চুয়াল আদালতে প্রথম জামিন মেলে ২ আসামির।