আনিসুজ্জামানের সাক্ষাৎকার : সাক্ষাৎকার গ্রহণে মনজুরুল আহসান বুলবুল
[এই বিপুলা পৃথিবীকে তিনি ধারণ করেছিলেন বিপুলভাবে, নানা অভিধায়। আনিসুজ্জামান, ১৯৩৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার বসিরহাটে জন্ম। বাবা এ টি এম মোয়াজ্জেম ছিলেন বিখ্যাত হোমিও চিকিৎসক। গৃহিণী মা সৈয়দা খাতুন লিখতেন। পিতামহ শেখ আবদুর রহিম ছিলেন লেখক ও সাংবাদিক। কলকাতার
পার্ক সার্কাস হাই স্কুলে শিক্ষাজীবন শুরু। দেশ ভাগ, চলে আসেন বাংলাদেশে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই পিএইচডি, শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পোস্ট ডক্টরাল। পেশাগত জীবন ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০১৪ সালে তাঁর সাক্ষাত্কারটি নেওয়া হয়। এটি বৈশাখী টেলিভিশনে সম্প্রচারিত হয়। সাক্ষাত্কারে আনিসুজ্জামান বলেছেন, বাংলাদেশের জন্মপ্রক্রিয়ার সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ত হওয়ার কথা। বাংলাদেশের জন্মকালীন স্বপ্ন, সেই স্বপ্নের নানা চড়াই-উত্রাইয়ের নেপথ্যের কথা। স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গের কথাও। তবে তাঁর দৃঢ় প্রত্যয় মুক্তিযুদ্ধের চার নীতির প্রতি। প্রজ্ঞাশীল রাজনীতির প্রতি। দুই পর্বের সাক্ষাত্কারটির শেষ পর্ব আজ প্রকাশিত হলো]
মনজুরুল আহসান বুলবুল : কিন্তু শিক্ষা নিয়ে কাজটা তো চলছিলই, যেটি আপনি শুরু করেছিলেন সেই প্রবাসী সরকারের সঙ্গেই।
আনিসুজ্জামান : আমাদের বড় ব্যর্থতা ছিল, প্রবাসী সরকারে আমাদের সব সুপারিশ মন্ত্রিসভায় বিবেচিত হওয়ার আগেই মন্ত্রিসভা ঢাকায় চলে এলো। আমাদের সঙ্গে একটা বড় ব্যবধান হয়ে গেল। আমার যে প্রস্তাব ছিল, একাত্তরের ১ মার্চ যে যে ক্লাসে ছিল, বাহাত্তরের ১ মার্চ তারা সেই ক্লাসেই থাকবে। বিষয়টা কেবিনেট অনুমোদনের আগেই ইউসুফ আলী সাহেব এক জনসভায় বললেন, সবাইকে এক ক্লাস ওপরে উঠিয়ে দেওয়া হবে। এটা খুব ক্ষতি করেছিল। তিনি তখনো মন্ত্রী হননি।
বুলবুল : শুরু হলো শিক্ষা কমিশনের কাজ। আপনি তাতে জড়িয়ে গেলেন।
আনিসুজ্জামান : পরে মন্ত্রী হয়ে ইউসুফ আলী সাহেব বৈঠক ডেকেছিলেন। তাতে ড. কুদরাত-এ-খুদা, ড. এ আর মল্লিক, ড. খান সারোয়ার মোরশেদ, অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান, অধ্যাপক আবুল ফজল এ রকম অনেকের সঙ্গে আমিও ছিলাম। ওখানে আমরা সবাই একমত হলাম এক ভাষার মাধ্যমে, এক পদ্ধতির শিক্ষা নিয়ে। শুধু আবুল ফজল সাহেব আপত্তি করেছিলেন। উনি বললেন, আপনারা মাদরাসা শিক্ষা তুলে দিতে চান, এটা কিন্তু ঠিক হবে না। আপনারা যদি বলেন মাদরাসা থেকে রাজাকার বেরিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও তো পাকিস্তান সরকারকে সমর্থন করেছেন। তাই বলে কি বিশ্ববিদ্যালয় উঠিয়ে দিতে হবে।
বুলবুল : পরে শিক্ষা কমিশনে তো এ নিয়ে বিস্তর কথা হয়েছে। কাজ হয়েছে?
আনিসুজ্জামান : শিক্ষা কমিশনেও আমরা এই বিষয়টি লক্ষ রেখেছিলাম। শিক্ষা কমিশনে, যেটা কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন হিসেবে পরিচিত। কুদরাত-এ-খুদা খুব চেষ্টা করেছিলেন এক পদ্ধতির শিক্ষার জন্য। তখন মাদরাসা শিক্ষা যাঁরা পরিচালনা করতেন, তিনি তাঁদের সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে বৈঠক করেছিলেন। কুদরাত-এ-খুদাকে ওরা কেউ ধর্মবিরোধী বলতে পারছে না। তিনি নিজে ধার্মিক মানুষ, কোরআন অনুবাদ করেছেন। কিন্তু খুব দৃঢ় ছিলেন মাতৃভাষায় শিক্ষা হতে হবে, এক পদ্ধতির শিক্ষা হতে হবে—এই নীতিতে। তাঁর মত ছিল, ধর্ম হবে বৃত্তিমূলক শিক্ষার মতো। একটা আলাদা স্রোত হিসেবে থাকবে। উচ্চ মাধ্যমিকের পর তারা যাতে উচ্চশিক্ষায় যেতে পারে বা ব্যবহারিক জীবনে এই শিক্ষা কাজে লাগাতে পারে। একপর্যায়ে মাদরাসা শিক্ষা পরিচালনাকারীরা রাজি হলেন যে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত একমুখী শিক্ষাই হবে। এক পাঠক্রম, এক পাঠ্য তালিকা। এটার মধ্যে কোনো পার্থক্য হবে না। তবে তাঁদের দাবি, এখানে ধর্ম শিক্ষাটা বাধ্যতামূলক করতে হবে। আমরা বলেছিলাম নীতি শিক্ষা বা ধর্ম শিক্ষা। কুদরাত-এ-খুদা এই আপোসটা করতে রাজি হলেন। কিন্তু পরে তো আর এটা কাজে লাগল না।
বুলবুল : এই যে এত বড় কাজ করছিলেন, এ সময় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কি কখনো কথা হয়েছিল?
আনিসুজ্জামান : নিশ্চয়ই। তাঁর আগ্রহও ছিল। বঙ্গবন্ধু যেদিন শিক্ষা কমিশনের উদ্বোধন করলেন, আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, জাতীয় আয়ের কত অংশ শিক্ষার জন্য ব্যয় করব। আপনি কি ভাবছেন। বঙ্গবন্ধু বলেন, এসব নিয়ে তোমাদের ভাবতে হবে না। দেশের জন্য ভালো হয় এমন একটি পরিকল্পনা করা হোক। আমি ভিক্ষা করে টাকা জোগাড় করব। কিন্তু আমরা যখন ’৭৪ সালে চূড়ান্ত রিপোর্ট দিলাম তখন দেশে আর্থিক সংকট প্রকট। বিশেষ করে খাদ্য সংকট দেখা দিচ্ছে।
বুলবুল : এর মধ্যেও তো বঙ্গবন্ধু আপনাদের কাজ সম্পর্কে খোঁজ রাখছিলেন।
অনিসুজ্জামান : বঙ্গবন্ধু একদিন আমাকে বললেন, তোমরা নাকি এমন এক রিপোর্ট দিয়েছ যাতে আমার বাজেটের পুরোটাই চলে যাবে? আমি বললাম, আপনাকে কে বলল এটা? আপনি কি রিপোর্ট পড়েছেন? তিনি বললেন, আমার রিপোর্ট পড়ার সময় কোথায়, আমাকে আমলারা বলেছে। বোঝা যায় আমলাদের মধ্যে যেকোনো কারণেই হোক, এর বিরোধিতা ছিল। বঙ্গবন্ধুকে আমি বললাম, আমি আপনাকে একটা উদাহরণ দেই। সব স্কুলে একটা করে গ্রন্থাগার থাকলে সেটি হবে আদর্শ অবস্থান। কিন্তু আমরা জানি আমরা এটা পারব না। তাই আমরা বলেছি, প্রতি ইউনিয়নে একটা গ্রন্থাগার থাকবে। সেখান থেকে স্কুল বই নেবে আবার ফেরত দেবে। উনি খুব খুশি হলেন, বললেন তাই! আমি বললাম, এই রকম অনেক বিষয় আছে যেগুলো আমরা আমাদের আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে সুপারিশ করেছি। কিন্তু পরে তো এটি এগোল না। উনিও দেখার সময় পেলেন না। হত্যাকাণ্ডের পব তো সব শেষ হয়ে গেল।
বুলবুল : ১৯৭৫ সাল-পরবর্তী বাংলাদেশ নিয়ে জানতে চাই।
আনিসুজ্জামান : বাহাত্তর সালে নতুন পরিকল্পনা কমিশন হলো। তাঁরা বিশেষ করে সংবিধানের অন্যতম নীতি সমাজতন্ত্রকে ধারণ করেই অগ্রসর হতে লাগলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে যারা আসল তারা তো সমাজতন্ত্রকে বাদ দিয়েই দিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের মধ্যেও এ ধরনের চিন্তা এলো, আমরা বোধ হয় এই পথে চলে ভালো করিনি। ’৭৫ সালের মধ্যে বেশ কিছু মানুষের মধ্যে, আমার ধারণা, কিছু টাকা-পয়সাও চলে এলো। তাঁরা নিজেরাই শিল্প প্রতিষ্ঠা করবেন এমন চিন্তাও করতে লাগলেন। একদিকে রাজনৈতিক ভিত্তিটা দুর্বল হয়ে গেল, অন্যদিকে চিন্তার একটা উল্টো স্রোত বইতে লাগল। এখন যে রকম দেখি, যে ধর্ম নিরপেক্ষতা আমাদের প্রবল অঙ্গীকার ছিল, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেও অত জোরেশোরে আর তা বলল না। বরং তাঁদের একটা ধর্মীয় দিক অছে, সেইটা সব সময় তুলে ধরার চেষ্টা করলেন।
বুলবুল : রাজনীতিতে ধর্ম এবং সাম্প্রদায়িকতার উত্থান নিয়ে আপনার হতাশা আছে?
আনিসুজ্জামান : যদি এভাবে ভাবি। পাকিস্তান হলো ধর্মের কথা বলে। পাকিস্তান হওয়ার পাঁচ বছরের মধ্যে ভাষা আন্দোলন হলো। ওই সময় থেকেই আমরা ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলছি নানাভাবে। গণতন্ত্রী দল হলো, ছাত্র ইউনিয়ন হলো, আওয়ামী মুসলিম লীগ আওয়ামী লীগ হয়ে গেল। এগুলো এত স্বাভাবিকভাবে হয়েছে যে এ নিয়ে কারো মনে কোনো প্রশ্ন ওঠেনি। ১৯৫৬ সালে যখন পাকিস্তানে সংবিধান হচ্ছে তখন আমরা যুক্ত নির্বাচন করে দশ বছরের মধ্যে মুসলিম লীগের আদর্শ থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছি। সেটা পতা আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের কারণেই হয়েছে। তাঁরা জনমতকে প্রভাবিত করেছেন প্রবলভাবে এবং জনগণ তাঁদের গ্রহণও করেছে। কাজেই বাংলাদেশ যখন হলো, ধর্মনিরেপক্ষতার কথা বলে, আমার ধারণা সেটি টিকিয়ে রাখা কঠিন ছিল না। কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর আমরা সবাই ভয় পেয়েছি। ফলে আমাদের মনে হয়েছে, আমরা যে পথে অগ্রসর হচ্ছিলাম এটা বোধ হয় মানুষ গ্রহণ করেনি। অথবা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর শাসকরা যে পরিবর্তন করল আমরা সেটাকে উল্টে দেওয়ার সাহস করিনি। মনে করেছি, ওসবে হাত দিলে বোধহয় মানুষ গ্রহণ করবে না।
বুলবুল : আমাদের নাগরিক সমাজ, সাংস্কৃতিক শক্তিও কি যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে পেরেছে?
আনিসুজ্জামান : ’৫২ সালে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের পর বাঙালি জাতীয়তাবাদের যে উত্থান হলো তার অনেকখানি সাংস্কৃতিক ক্ষেত্র থেকে এসেছে। আমরা রবীন্দ্র শতবর্ষ, নানা প্রাকৃতিক উৎসব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষার যে সাহিত্য উৎসব হয়েছিল সেখানে আমাদের হাজার বছরের উত্তরাধিকার উঠে এসেছে। এগুলো পাকিস্তানের আদর্শের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ ছিল না। কিন্তু আমরা করতে পেরেছি বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই। আমাদের সাংস্কৃতিক কাজ কর্ম এগিয়ে গেছে। কিন্তু ’৭৫-এর পরে আমরা বেশ কিছুটা দুর্বল হয়েছি। অবশ্য এটা ঠিক, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে আমাদের সাংস্কৃতিক আন্দোলন বড় ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু আমরা হয়তো কোনো আদর্শ সামনে রেখে এগোতে পারছি না। হয়তো অমরা নানাভাবে বিভক্ত। হয়তো আমরা মানুষের সঙ্গে অত নিবিড় সম্পর্কের মধ্যে যেতে পারছি না। সাংস্কৃতিক আন্দোলনেরও এই কালে কিছু দুর্বলতা আছে।
বুলবুল : তাহলে কি আমরা পেছনের দিকে হাঁটছি?
আনিসুজ্জামান : কখনো কখনো কিছু কিছু বিষয় হতাশ করে। উদাহরণ দেই : ’৭২ সালে আাামাদের প্রথম বাজেট হচ্ছে। তখন মাদরাসা শিক্ষার ব্যয় কমিয়ে দেওয়া হয়। আসলে ঘটেছিল, মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানে যে বাজেট হয় তাতে মাদরাসা খাতে অনেক বাড়তি বরাদ্দ দেয়। তাজউদ্দীন যে বাজেট করতে চাইলেন, উনি ’৭০ সালে যে বরাদ্দ ছিল ওইটাকে বেঞ্চমার্ক ধরে বরাদ্দ করেন। তখন আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশ মাদরাসা শিক্ষক সমিতির নেতা। তিনি বঙ্গবন্ধুকে গিয়ে ধরলেন যে তাজউদ্দীন সর্বনাশ করে ফেলেছে। সে মাদরাসার বরাদ্দ কমিয়ে ফেলেছে। সারা দেশে বিদ্রোহ হয়ে যাবে। বঙ্গবন্ধু তাজউদ্দীনকে ফোন করে বললেন, মাদরাসার বরাদ্দ কমিও না, বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে। এভাবে আমরা মাঝে মধ্যে এমন একটা ফাঁদের মধ্যে পড়ে যাই, যাতে অভীষ্ট লক্ষ্য থেকে দূরে সরে যেতে হয়।
বুলবুল : বেরোনোর পথ কী? নতুন প্রজন্ম কি আশার জায়গা হতে পারে?
আনিসুজ্জামান : বেরোনোর পথ হচ্ছে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা। মুক্তিযুদ্ধের চার নীতি। এখনই কোনটা লাভজনক না ভেবে একটু দূরে তাকানো দরকার। বঙ্গবন্ধু যে স্বল্প সময় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তাঁর দলের অনেক অঙ্গ সংগঠন নিয়েও অসন্তুষ্ট ছিলেন। তিনি ওদের সব কাজ সমর্থন করতেন না। তিনি আমাকে বলেছেন, আরো অনেককে বলেছেন : ওদের অনেক কাজ তার জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তিনি দলের ঊর্ধ্বে উঠে অনেক কিছু দেখতে পারতেন, বুঝতেও পারতেন। এখন আমরা সেটা কতটা পারছি বলা মুশকিল। গণজাগরণ মঞ্চের সময় আমরা দেখলাম যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানুষ কত গভীরভাবে ধারণ করে আছে। সেটাও তো আমরা নষ্ট করে ফেললাম। আমার মনে হয় সামগ্রিকভাবে দেশের যে পরিবেশ, তা থেকে তরুণরা কী শিক্ষা নিচ্ছে সেটিও নিবিড়ভাবে দেখা দরকার।
বুলবুল : আমরা কি বেশি মাত্রায় আপস করছি?
আনিসুজ্জামান : আমরা কেন দুর্বল হব। দেশের অধিকাংশ মানুষ তো আমাদের সঙ্গে। যারা দ্বিধার মধ্যে আছে তাদের বোঝাতে পারলে দ্বিধা কেটে যাবে। ধার্মিক মানুষদের মধ্যে যাঁরা ইতিবাচক চিন্তা করছেন তাঁদের কাজে লাগানো যায়। যাঁরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বাইরে আছেন তাঁদের মধ্যে যাঁরা বাংলাদেশের মূল চেতনায় বিশ্বাসী তাঁদেরকে রাষ্ট্রের কাজে যুক্ত করার খুব বেশি চেষ্টা দেখা যায় না। আমি সাধারণভাবে বলি, উত্পীড়িতদের পাশে দাঁড়ালে মানুষের আস্থা অর্জন করা যায়। নাগরিক সমাজ, প্রশাসন এবং রাজনৈতিক শক্তি যদি একসঙ্গে দাঁড়ায় তাহলে বড় কাজ হয়। সব দল তো একসঙ্গে আসবে না। তবে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের প্রতি যাদের আস্থা আছে তারা যদি সবাই একসঙ্গে দাঁড়ায়, বড় কাজ হয়।
বুলবুল : আপনার জীবনের সবচেয়ে আনন্দময় আর সবচেয়ে কষ্টের সময় সম্পর্কে জানতে চাই।
আনিসুজ্জামান : আনন্দময় হচ্ছে শিক্ষকতা জীবনের প্রথম পাঁচ-দশ বছর। আমিও তরুণ, ছাত্ররাও তরুণ, অন্য ব্যস্ততা কম। প্রথম দিকের ছাত্রদের সঙ্গে যে সম্পর্কে তা এখনো মধুর স্মৃতি। আর সবচেয়ে কষ্টের সময় ১৯৭৫ সালের এর পরবর্তীকাল। দেখছি আমাদের যা অর্জন সব বিসর্জন দিতে হচ্ছে। আমি ভারতের বন্ধুদের বলেছিলাম, বাংলাদেশ স্বাধীন হলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা কখনো হবে না, সামরিক অভ্যুত্থান কখনো হবে না। দুটোই ভুল প্রমাণিত হয়েছে। এটি আমার কষ্টের জায়গা।
বুলবুল : তবু তো আশায় বসতি গড়তে হয়। কি আশা নিয়ে বাঁচি?
আনিসুজ্জামান : মুক্তিযুদ্ধের সময় যে বাংলাদেশের রূপটা কল্পনা করেছিলাম। যেটা সংবিধানের চার মূল নীতিতে প্রতিফলিত হয়েছিল। সেটিই আমার স্বপ্নের বাংলাদেশ। আমি সেখানেই যেতে চাই। আমি আস্থা হারাইনি, আশা হারাইনি। আমরা ওইখানে পৌঁছাতে পারব একদিন না একদিন। সেটার জন্য কাজ করতে হবে।