স্টাফ রিপোর্টার ॥ সারাবিশ্বে করোনা ভাইরাসের কারণে প্রায় সকল প্রকার ব্যবসা-বাণিজ্যে ও শিল্প প্রতিষ্ঠানে চলছে স্থবির অবস্থা। বাংলাদেশ এবং দেশের প্রান্তিক জেলা শেরপুরে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে অর্থনৈতিক অবস্থা সংকুচিত হয়ে পড়েছে। পুজি হারাচ্ছে শত শত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। মূলধন কমতে শুরু করেছে মধ্যবিত্ত ব্যবসায়ীদের। ওই অবস্থায় কিছুটা হলেও আলোর দিশারি হয়ে কাজ করছে ‘অনলাইন’ বেচাকেনা বা ই-কমার্স ব্যবসা।
জানা যায়, গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা ভাইরাস সনাক্তের পর ২৬ মার্চ অফিস, শিল্প, কারখানাসহ সবকিছুতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা দেয় সরকার। গত ৪০ দিনে সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও বেড়ে চলছে করোনা সনাক্তির সংখ্যা। করোনার প্রকোপ কমাতে জেলায় জেলায় চলছে লকডাউন। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে সকল প্রকার অনুষ্ঠান আয়োজন ও জনসমাগম বন্ধ করা হয়েছে। মুসলিম উম্মাহর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাস মাহে রমজানে নেই জমজমাট ইফতারের বাজার। দোকানপাট, কলকারখানাসহ সবকিছু বন্ধ হওয়ায় ভাটা পড়েছে মানুষের আয় উপার্জনে। কিন্তু প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারে ফলে থেমে নেই তরুণ উদ্যোক্তাদের আয়। কিছু তরুণ উদ্যোক্তা শেরপুরে চালু করেছে, ‘বাজার সদাই’, ‘ইফতার বাজার’ ও ‘আওয়ার শেরপুর’। ‘আওয়ার শেরপুর’ শেরপুরের ব্র্যান্ডিং খ্যাত তুলশীমালা সুগন্ধি চাল বাজারজাতের জন্য জেলা ও জেলার বাইরে অনলাইন অর্ডারের মাধ্যমে ডেলিভারি দেওয়া হচ্ছে। জেলার অর্ডার নিজেরা এবং জেলার বাইরের অর্ডার যাচ্ছে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে।
শেরপুরের ব্র্যান্ড খ্যাত তুলশীমালা চাউল নিয়ে অনলাইনে কাজ করেন ‘আওয়ার শেরপুর’ স্টার্টআপের প্রতিষ্ঠাতা মোঃ দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, লকডাউনে শুরুতে কুরিয়ার বন্ধ হয়ে যাওয়া আমাদের ডেলিভারিও বন্ধ হয়ে যায়। ১৬ এপ্রিল কুরিয়ার চালু হওয়ায় পুরোদমে আমাদের অর্ডার ও ডেলিভারি বেড়ে যায়। আমাদের বিক্রির টাকা দিয়ে নিজেদের পরিবার ও কর্মীদের পরিবার চলছে খুব ভালোভাবেই। করোনায় সবকিছু বন্ধ হলেও জীবন যাত্রা ও অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে ইন্টারনেটের সঠিক ব্যবহারের বিকল্প নেই। ইন্টারনেট নির্ভর হতে পারলে ব্যবসা, শিক্ষা, চাকরি সহ সবকিছুতে খরচ ও ভোগান্তি কমে আসবে।
এদিকে জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত ‘বাজার-সদাই শেরপুর’ নামে অনলাইন ব্যবসার অন্যতম উদ্যোক্তা ও সাংবাদিক জুবাইদুল ইসলাম বলেন, আমরা করোনা সংকটের কারণে মানুষকে ঘরে রাখতে মাছ-মাংস, চাল-ডাল থেকে তাদের সকল প্রকার বাজার-সদাই খুচরা বাজার দরেই ঘরে পৌছে দেয়ার জন্য চালু করলেও লাভের হিসেবটা দেখছি না। আমাদের চিন্তা হলো, ভালো সার্ভিস ও ভালো মানের পণ্য পৌছে দেয়ার মাধ্যমে আগামিতে বিশেষ করে করোনা ভাইরাসজনিত পরিস্থিতি কেটে গেলে এ ব্যবসা আমরা লাভের মুখ দেখতো পাবো। আপাতত লাভের চেয়ে মানুষের সেবার দিকটাই দেখছি।
‘ইফতার বাজারের’ অন্যতম উদ্যোক্তা ও সাংবাদিক ইমরান হাসান রাব্বী জানান, আমরা মূলতঃ জেলা প্রশাসনের সাথে সংযুক্ত হয়ে লকডাউন কার্যকর করতে মানুষকে ঘরে রাখার উদ্দেশ্য নিয়েই ইফতার বাজার এ কার্যক্রম শুরু করি। এখান থেকে প্রতিদিন যা লাভ হয় তা নিজেদের পকেটে না রেখে প্রতিদিন অসহায় মানুষকে ইফতার করাই।