‘আল্লায় শেখের বেডি হাসিনারে বাঁচায় রাহুক’
শ্যামলবাংলা ডেস্ক : দৈনিক জনকণ্ঠ, শ্যামলবাংলা২৪ডটকমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে করোনা পরিস্থিতিতে কর্মহীন হয়ে পড়া অসহায়দের খাদ্য সহায়তায় ভিক্ষা করে নিজের জমানো ১০ হাজার টাকা দান করে মানবতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী সেই ভিক্ষুক নজিম উদ্দিনের পুনর্বাসনের দায়িত্ব নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ সালাহ উদ্দিনকে উদ্বৃত করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল মাহমুদ গণমাধ্যমকে ওই তথ্য নিশ্চিত করেন। ওই দায়িত্ব নেওয়ার মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের তত্ত¡াবধানে তিনি পাচ্ছেন ২৫ লক্ষ টাকা মূল্যমানের ১২ শতক জমি এবং সেই জমিতে ১২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে পাকা বাড়ি ও জীবিকা নির্বাহের জন্য একটি দোকান।
এদিকে বুধবার দুপুরে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষ রজনীগন্ধায় ভিক্ষুক নজিম উদ্দিনকে উষ্ণ সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। ওইসময় জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব তাকে লালসবুজের উত্তরীয় ও ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। সেইসাথে তিনি তার হাতে জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে নগদ ২০ হাজার টাকা ও প্রধানমন্ত্রীর উপহার সামগ্রী তুলে দেন। ওইসময় জেলা প্রশাসক বলেন, ভিক্ষুক নজিম উদ্দিনের দৃষ্টান্তে আমরা অভিভূত এবং অনুপ্রাণিত হয়েছি। তিনি ভিক্ষা করলেও হৃদয়ের দিক দিয়ে অনেক ধনশালী ও ঐশ্বর্যবান। পৃথিবীতে এত মহৎ প্রাণের মানুষ আছে বলেই পৃথিবীটা এত সুন্দর। মানুষ হিসেবে মানুষের পাশে থাকার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে তিনি আবারও প্রমাণ করলেন মানুষ মানুষের জন্য। এসব দৃষ্টান্তের কারণে অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও আমরা আলোর ঝলকানি দেখতে পাই। প্রাণঘাতী করোনা পরিস্থিতিতে তার সেই অবদানে বিত্তবান-সম্পদশালীরা আর্তমানবতার সেবায় এগিয়ে আসবেন বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন। সেইসাথে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক তার পুনর্বাসনে দ্রæত পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় নজিম উদ্দিনকে বয়স্ক ভাতা এবং তিনিসহ তার স্ত্রী আবেদা খাতুনের চিকিৎসার দায়-দায়িত্ব গ্রহণের ঘোষণা দেন।
অন্যদিকে পুনর্বাসনে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ ও সংবর্ধনা প্রসঙ্গে ৮০ বছর বয়স্ক ভিক্ষুক নজিম উদ্দিন তার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, ‘এইবারের ভাইরাসের মতন মানুষের দুঃক্কু-কষ্ট আমার জীবনে আর দেহি নাই, হুনিও নাই। মানুষ অহন ঘর থাইক্যাও বাইর অবার পায় না। কাম-কাজ নাই, এহেবারে কর্মছাড়া। তাই মাইনসের কষ্ট দেইখ্যা ইউএনও সাবের উদ্যোগের সাথে সামিল হইতে নিজের ঘর করার জন্য দুই বছরের জমানো ভিক্ষার ১০ হাজার টাকা দান করছি। এই কাজটার জন্য আমার আত্মা খুব শান্তি পাইছে। তাই এই বয়সে কিছু পাওয়ার আশা আমার আছিল না। তবুও আমার কতা হুইন্যা শেখের বেডি মুখ তুইলা তাহাইছে, এতে আমি খুব খুশি। আল্লাই শেখের বেডি হাসিনারে আরও বাঁচায়া রাহুক।’ উপস্থিত সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, ‘ছোড থাইক্যাই দিনমজুরির কাম কইরা বড় অইছি। অনেক বছর দিনমজুরি কইরাই চলছি। কিন্তু ৮/১০ বছর আগে ঠ্যাঙ ভাইঙ্গা বিছনায় পড়ার পর থেইক্যা ভিক্ষা কইরা চলতে শুরু করি। ৩ ছেলে ও ৩ মেয়ের মধ্যে ২ জন ঢাহায় রিকশা চালায়, ২ মেয়ে বিয়া দিছি। আর ১ ছেলে ও মেয়ে ছোড ঘরে আছে। হেগরেসহ বাড়িওয়ালীরে নিয়া আমার সংসার। হেরও পাও ভাঙ্গা’।
সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সংক্ষিপ্ত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এবিএম এহছানুল মামুন, ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল মাহমুদ, এনডিসি মিজানুর রহমান, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন প্যাসিফিক ক্লাবের সভাপতি আবু রায়হান জুয়েল প্রমুখ।
উল্লেখ্য, ২১ এপ্রিল মঙ্গলবার ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের গান্ধীগাঁও গ্রামের ভিক্ষুক নজিম উদ্দিন দুই বছর ভিক্ষা করে জমানো ১০ হাজার টাকা করোনা ভাইরাসজনিত পরিস্থিতিতে ইউএনওর উদ্যোগে ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন প্যাসিফিক ক্লাবের সহযোগিতায় গঠিত কর্মহীন অসহায় হয়ে পড়া মানুষের খাদ্য সহায়তা তহবিলে দান করেন। তার ওই মানবতার দৃষ্টান্ত বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে সারা দেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। বিষয়টি নজরে আসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।
-রফিকুল ইসলাম আধার।