স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে শেরপুর জেলার সাথে ভিডিও কনফারেন্স করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০ এপ্রিল সোমবার সকালে ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের ৮ জেলার সাথে অনুষ্ঠিত ওই কনফারেন্সে শেরপুরের সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে খোঁজ নেন প্রধানমন্ত্রী। সেইসাথে করোনা রোগী যাতে আর না বাড়ে সে ব্যাপারে সজাগ থাকারও নির্দেশ দেন তিনি।
ভিডিও কনফারেন্সে জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুবের সঞ্চালনায় প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলেন জাতীয় সংসদের হুইপ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আতিউর রহমান আতিক এমপি, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর রুমান ও পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম পিপিএম। সূচনা বক্তব্যে জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে শেরপুরের করোনা পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, পরিস্থিতি মোকাবেলায় আপনার প্রদত্ত ৩১ দফা নির্দেশনার আলোকে জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ, স্বাস্থ্য বিভাগ, সেনাবাহিনী, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, স্বেচ্ছাসেবকসহ সবাই একযোগে কাজ করে চলেছি। গত ৫ এপ্রিল জেলায় প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। আর এ পর্যন্ত জেলায় মোট ১৭ জন আক্রান্ত হয়েছে, যার মধ্যে ইতোমধ্যে ৫ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। এ জেলায় বিদেশফেরত ১৪৯ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রেখেছিলাম, যাদের কোয়ারেন্টাইনের মেয়াদ শেষ হয়েছে এবং তারা সবাই সুস্থ আছেন। এ পর্যন্ত ৩৯১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। আমাদের যথেষ্ট পিপিই মজুদ আছে। আমরা ৫টি উপজেলায় সরকারি ১৫০টি শয্যা আইসোলেশনের জন্য তৈরি ও ব্যবহার করছি। এছাড়া বেসরকারিভাবে ২১টি ক্লিনিকে আরও ১০৩টি শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। শেরপুর জেলায় ৪ লক্ষ ৩৪ হাজার সুবিধাভোগী সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় সুবিধা পাচ্ছেন। আপনার প্রেরিত উপহার আমরা অসহায় ও দরিদ্র মানুষের ঘরে ঘরে রাতের বেলায় পৌঁছে দিচ্ছি। এছাড়া এ জেলার উৎপাদিত শাক-সবজিও উপহারের সাথে যুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া জেলা প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে বেসরকারি উদ্যোগেও সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এ জেলায়য় ৮৯ হাজার ৩৬৩ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে এবং ৮৭ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ হয়েছে। আমরা অনলাইন শপের মাধ্যমে জেলা শহরসহ সকল উপজেলায় মানুষের ঘরে ঘরে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছি। জেলা প্রশাসনের হটলাইন নাম্বারে প্রতিনিয়তই আবেদনকারীদৈর কল পাচ্ছি, সেগুলো রেজিস্টারভূক্ত করে তাদের কাছে খাবার ও অন্যান্য সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। আপনার নির্দেশনা অনুযায়ী জেলার সকল হাট-বাজার খোলা মাঠে স্থানান্তর করা হয়েছে। পৌরসভা ও ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতায় প্রতিটি হাট-বাজার ও রাস্তায় জীবাণুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে।
এরপর প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহে কথা বলেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর রুমান। তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় আপনার নির্দেশনা মোতাবেক জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি জেলা পরিষদের তরফ থেকেও সচেতনতামূলক প্রচারণাসহ নানা কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে জেলা পরিষদের তরফ থেকে ২০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে প্রায় ১০ লক্ষ টাকার খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। অবশিষ্ট টাকায় রমজানের প্রথমভাগে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হবে। এছাড়া আমার ব্যক্তিগভাবে ২ হাজার অসহায় মানুষকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। আরও এক হাজার রমজানে বিতরণ করা হবে।
পরে প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহে পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম কথা বলেন, লকডাউন নিশ্চিত করার জন্য আমরা জেলা প্রশাসনের সাথে সমন্বং করে কাজ করে যাচ্ছি। বিশেষ করে যে সমস্ত এলাকায় করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে, সে এলাকাগুলোতে বাড়িতে বাড়িতে খাবার পৌঁছে দিচ্ছি। তিনি আরও বলেন, শেরপুর কৃষি অর্থনীতি নির্ভর এলাকা। আমরা করোনা সংক্রমণের প্রথম থেকেই আপনার নির্দেশনা মোতাবেক কৃষি উৎপাদন যাতে ব্যাহত না হয়, সেজন্য আমরা প্রতিটি অঞ্চলে কৃষকদের সাথে সচেতনতামূলক সভা করেছি। তাদের আশ্বস্ত করেছি, তারা যাতে তাদের উৎপাদিত ফসল ঘরে তুলতে ও ঠিকভাবে বাজারজাত করতে পারে সেজন্য পদক্ষেপ নিয়েছি। এজন্য জেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের সাথে সমন্বয় করে কৃষকদের সহায়তা করতে আশ্বস্ত করা হয়েছে।
সবশেষে প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নিয়ে কথা বলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হুইপ আতিউর রহমান আতিক। তিনি বলেন, আপনার নির্দেশনায় করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সকল থানা ও শহর আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা কাজ করছে। ইতোমধ্যে দলীয় নেতারা বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ১০ হাজার মানুষের খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিয়েছে। আমার দুই মাসের বেতনের টাকায় প্রায় ১৪শ মানুষের বাড়িতে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছি। আপনার নির্দেশনা পেয়ে সাথে সাথেই একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে সদর উপজেলার ১৪ ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৬৫টি জায়গায় আপনার নির্দেশনা হ্যান্ড মাইকে প্রচার করেছি। আপনার অবগতির জন্য বলতে চাই, কথিত বিরোধী দল হিসেবে যারা বক্তৃতা দেন, তাদের মধ্যে বিএনপিসহ কেউই মাঠে নেই, অসহায়দের পাশে নেই। এটা জাতির জন্য দুঃখজনক। শেরপুর জেলা খাদ্যউদ্বৃত্ত এলাকা হলেও কিছু লোক আছে নিম্ন আয়ের মানুষ। তাদের মাঝে আপনার দেওয়া উপহার সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছে জেলা প্রশাসন। কয়েকদিন পরই ধান কাটা শুরু হবে। শুকনা মরিচ ভেজে আলু ভর্তা করে খেয়ে মানুষ যখন ধান কাটায় নেমে পড়বে, তখন তাদের শরীরের ঘামে করোনা দেশ থেকে পালাবে। কাজেই মানুষ হতাশ নয়। তিনি আরও বলেন, আপনার প্রতি মানুষের আস্থা রয়েছে। তাই আপনার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ যেমন বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হয়েছে, তেমনি করোনা ভাইরাস জয়েও রোল মডেল হবে ইনশাআল্লাহ।
ভিডিও কনফারেন্স চলাকালে শেরপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এবিএম এহছানুল মামুন, শেরপুর জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত ঘাটাইল সেনানীবাসের ১৯ পদাতিক ডিভিশনের মেজর তৌফিকুল বারী, সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডাঃ আকরাম হোসেন, জেলা সদর হাসপাতালের আরএমও ডাঃ খাইরুল কবীর সুমন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
https://www.facebook.com/ShamolBangla24/videos/1115296092189114/