করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) পরিস্থিতিতে শেরপুর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ মোবারক হোসেন তার অভিজ্ঞতার আলোকে জনসাধারণকে সচেতনতার জন্য বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে। শ্যামলবাংলা২৪ডটকম’র পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো :
শেরপুরে প্রথমদিকে একটু ঢিলেঢালা থাকলেও গত ০৫/০৪/২০ ইং তারিখে প্রথম রোগী সনাক্ত হওয়ার পর জনমনে ব্যাপক ভীতির সঞ্চার হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য প্রশাসন জোরালো ভুমিকা পালন করলেও জরুরী প্রয়োজনে জনগণ রাস্তায় বের হচ্ছে। এমতাবস্থায় অনেকের পক্ষ থেকে শেরপুরকে লকডাউন করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনও অফিসিয়ালি লকডাউন কথাটি বলা হয়নি। তবে আমি মনে করি এটা বলা জরুরী নয়। জরুরী হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব তথা শারীরিক দূরত্ব (কমপক্ষে ৩ ফুট) বজায় রাখা, এমনকি নিজের বাসাতেও।
লকডাউন একটি ইংরেজী পরিভাষা। বাংলায় এর অর্থ হচ্ছে- অতি জরুরী প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হবে না। আর জরুরী প্রয়োজনের বের হলেও সামাজিক/ শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চলবে। কিন্তু সাধারণের অনেকেরই ধারণা, লকডাউন মানে কেউ ঘর থেকে বের হতে পারবে না, যার যার ঘরে তালা দিয়ে রাখা হবে, রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেয়া হবে ইত্যাদি। একটা কথা মনে রাখা প্রয়োজন, এই মহামারী একটি দীর্ঘমেয়াদি মহামারী। সবকিছু বন্ধ করে এত বিপুল সংখ্যক মানুষকে সরকারের পক্ষে দীর্ঘদিন বসিয়ে বসিয়ে খাওয়ানো সম্ভব নয়। তাছাড়া এটি বাস্তবসম্মতও নয়। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে খেটে খাওয়া মানুষের জন্য স্বল্প পরিসরে সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। তবে পরিবহন সেক্টর অবশ্যই বন্ধ রাখতে হবে।
আর ইতিমধ্যেই প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘরে থাকা, সামাজিক/ শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আন্তঃজেলা যাতায়াত বন্ধ করা হয়েছে। তবে হ্যা, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার (নয়ানী বাজার), কাঁচাবাজার ইত্যাদি অন্যত্র সরিয়ে সামাজিক/ শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করা যেতে পারে।
যারা অন্য জেলা থেকে (ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ) শেরপুরে নিজ বাড়িতে এসেছেন তাদের ব্যাপারে এলাকায় অতিমাত্রায় ভীতি ছড়ানো হচ্ছে। তাদেরকে নানাভাবে ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে, রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। ফলে তারা ভয় পেয়ে পালিয়ে গোপনে অন্যত্র অবস্থান করছেন। অথচ তারা যদি ঘরেই থাকে তাহলে আশেপাশের জনসাধারণের ভয়ের কোন কারণ নেই, সংক্রমণের ঝুঁকিও নেই। এতে বোঝা যায়, সামাজিক/ শারীরিক দূরত্বের বিষটি এখনও আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। এমতাবস্থায় যারা সর্দি-কাশি জ্বরে ভুগছেন তারা কোন পরীক্ষা করতে চাচ্ছেন না। কারণ তারা সামাজিকভাবে বয়কটের সম্মুখীন হচ্ছেন, অপমানিত বোধ করছেন। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি আরও বেড়ে যাচ্ছে।
আমি মনে করি লকডাউনের চেয়ে সামাজিক/ শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা নিশ্চিত করতে পারলে এই মহামারী থেকে হয়তো আমরা দ্রুতই মুক্তি পাবো ইনশা-আল্লাহ। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।
লেখক : উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা, শেরপুর সদর, শেরপুর।