মো. নজরুল ইসলাম, ময়মনসিংহ ॥ আমাদের মায়ের ভাষা, মাত্রভাষা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সালাম, জব্বার, বরকতসহ নাম না জানা অসংখ্য শহীদ ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন। তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে ১৯৫২ সালে আমরা পেয়েছি আমাদের মাতৃভাষার অধিকার। এখন শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বেই ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার স্থাপন বাধ্যতামূলক। শহীদ মিনারের বেদিতে ফুল দিয়ে ভাষাসৈনিক বীরদের সম্মান জানানো হয় প্রতিবছর। ভাষা দিবসের ৬৮ বছর পার হলেও ময়মনসিংহ জেলার ৭ শত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখনো শহীদ মিনার স্থাপন করা হয়নি। শুধু তাই নয়, ত্রিশাল উপজেলাসহ অনেক উপজেলাতে কেন্দ্রীয় কোনো শহীদ মিনার নেই।
ময়মনসিংহ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শহীদ মিনার নির্মাণ করা বাধ্যতামূলক হলে জেলার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখনো শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়নি। এ ব্যাপারে জেলা শিক্ষা অফিস থেকে বার বার পত্র দেয়া হলেও সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটি ও প্রতিষ্ঠান প্রধান এখনো শহীদ মিনার নির্মাণ করতে পারেনি।
জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ময়মনসিংহ জেলায় ৫৯৮টি মাধ্যমিক স্কুল, ১২৩টি কলেজ ও ৩৮৪টি মাদরাসাসহ সর্বমোট এক হাজার ১০৫টি মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা। তন্মমধ্যে মাত্র ৪০৫টি প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার রয়েছে এবং ৭ শত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখনো শহীদ মিনার স্থাপন করা হয়নি। জেলার ১৩টি উপজেলার মধ্যে ২৭২টি মাধ্যমিক স্কুল, ৬৩টি কলেজ ও ৩৬৫টি মাদরাসায় এখনো শহীদ মিনার নির্মাণ করতে পারেনি।
ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মোঃ মিজানুর রহমান জানান, জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে যেন প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও এখনো নির্মাণ করছে না আবার অনেক প্রতিষ্ঠানের তেমন সক্ষমতা নেই। তা সত্ত্বেও অনেক প্রতিষ্ঠান শহীদ মিনার নির্মাণ করা শুরু করেছে।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত ত্রিশাল সদরে কোনো শহীদ মিনার স্থাপিত হয়নি। এমনকি ত্রিশালের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত সরকারি নজরুল একাডেমি, ত্রিশাল নজরুল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ত্রিশাল মহিলা ডিগ্রি কলেজ, দুখু মিয়া বিদ্যানিকেতন ও ইসলামী একাডেমি অ্যান্ড কলেজেও স্থাপন করা হয়নি কোনো শহীদ মিনার।
ত্রিশাল পৌর শহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার না থাকায় নজরুল কলেজে অবস্থিত শহীদ মিনারের বেদিতেই ত্রিশালবাসী শহীদদের সম্মান জানিয়ে পুষ্পস্তবক প্রদান করে আসছেন। উপজেলা প্রশাসনও এখানেই শহীদ দিবসে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। ত্রিশাল সরকারি নজরুল কলেজ মাঠের এক পাশে অবস্থিত শহীদ মিনারটিই অঘোষিতভাবে ত্রিশালের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার হিসেবে ব্যবহার হয়।
ত্রিশাল পৌরসভার মেয়র এবিএম আনিছুজ্জামান বলেন, আমরা আলাদা করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছি। এ ব্যাপারে জায়গা পাওয়া গেলেই নির্মাণকাজ শুরু করা হবে।