স্টাফ রিপোর্টার ॥ শেরপুরে রওজা শরীফ জিয়ারত ও আখেরী মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে জাকের পার্টির প্রতিষ্ঠাতা বিশ্বওলী খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃ ছেঃ আঃ)’র ৩ দিনব্যাপী বিশ্ব উরস শরীফ। ১৮ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার ভোরে সদর উপজেলার পাকুড়িয়াস্থ বিশ্বওলীর আবির্ভাব মঞ্জিলে ওই আখেরী মোনাজাত পরিচালনা করেন বিশ্বওলীর উত্তরাধিকার, জাকের পার্টির চেয়ারম্যান পীরজাদা মোস্তফা আমীর ফয়সল মুজাদ্দেদী। ওইসময় তিনি দেশ ও জাতির সুখ-শান্তি সমৃদ্ধি, মুসলিম উম্মার ঐক্য ও সংহতি সর্বোপরি বিশ্ব মানবতার শান্তি ও কল্যাণ কামনা করেন।
বাদ ফজর আখেরী মোনাজাতের আগে প্রথমে কোরআন তেলাওয়াত করা হয়। পরে জাকের পার্টি চেয়ারম্যান বিদায়ী ভাষণ দেন। তিনি অশ্রুভারাক্রান্ত কণ্ঠে প্রকৃত ইসলামের অগ্রগতি এবং মানবতার কল্যাণ সাধনে বিশ্ব ওলী খাজাবাবা ফরিদপুরীর (কুঃ ছেঃ আঃ) অসামান্য ত্যাগ-তিতীক্ষা ও আত্মোৎসর্গের দিক স্মৃতিচারণ করেন। সেইসাথে তিনি যারা ইসলাম নিয়ে কাজ করেন, তাদের কাজে কর্মে, কথা বার্তায় ইসলাম এবং মুসলমানদের মাঝে যেন বিভক্তি না আসে, সেদিকে সতর্ক ও সজাগ থাকার আহ্বান জানান। ওই সময় সমবেত লাখো শান্তিকামী মানুষের মাঝে কান্নার রোল উঠে। প্রকৃত ইসলামের উদারনৈতিক মানবিক সৌন্দর্যে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মত ও পথের মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ভিত্তিতে কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মূল সুরই ধ্বনীত হয় বিশ্ব উরস শরীফে।
রবিবার মধ্যরাত থেকে সোমবার সারা রাতব্যাপী সারা দেশ থেকে বিশ্বওলীর আবির্ভাব মঞ্জিল অভিমুখে কয়েক হাজার যানবাহনের কাফেলার আগমনে পাকুড়িয়ার গোটা এলাকায় তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। মেহমানদের আশ্রয় দিতে পাকুড়িয়াবাসী তাদের বাড়িঘরের উঠোন ছেড়ে দেন। সার্বিক সহায়তাদানে তারা দারুণ উন্মুখ ছিলেন। বিশ্ব উরস শরীফ ঘিরে লাখো মানুষের মহাস্রোত শেরপুরের জন্য একেবারেই নতুন। তাই সর্ব মহলে আলোচনার মূল কেন্দ্রে ছিল বিশ্ব উরস শরীফের অকল্পনীয় বিশালতা।
এদিকে গত সোমবার রাত ছিল বিশ্বওলীর (কুঃ ছেঃ আঃ) বেছালতের (ওফাত) রজনী। শোকের রজনী স্মরণে রাত সোয়া ১টা থেকে ২ টা পর্যন্ত কোরআন তেলাওয়াত ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে জাকের পার্টির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ড. সায়েম আমীর ফয়সল মূল মঞ্চে এসে বক্তৃতা করেন। তিনি রাজনীতি, অর্থনীতি এবং ধর্মীয় নানা বিষয়ে আলোকপাত করেন। মহাআয়োজনে শেরপুরবাসীর সর্বাত্মক অংশগ্রহণের জন্য কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান।
বিশ্ব উরস শরীফে বিশ্ব ওলীর আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকার এবং জাকের পার্টি চেয়ারম্যান পীরজাদা মোস্তফা আমীর ফয়সল মুজাদ্দেদী দফায় দফায় সাক্ষাৎ দেন। ওয়াক্তিয়া নামাজের সাথে নফল ইবাদত বন্দেগী, তেলাওয়াতে কালামে পাক, দফায় দফায় মিলাদ মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাত, রাতের শেষ ভাগে আল্লাহ তায়ালার রহমত কামনা ও বিশ্ব নবী রাসুলে পাক (সা:) এর স্মর, মোরাকাবা মোশাহেদা, জেকের আসকার ও ওয়াজ নসিহত অনুষ্ঠিত হয়। বিদায় বেলায় ‘আজি কি চাঁদের হাট ভাঙ্গিল…’ কান্না ভেজা গজলের সাথে চোখে পানি নিয়ে বাড়ির পথে রওনা হন শান্তিকামী নারী-পুরুষ।