অসমাপ্ত তুমি >>

শীতের সকালগুলোতে আলো একবার হলেও উকি দিয়েই যাবে,তবে কুয়াশার চাদরটা ভাঙতে খানিকটা সময় লাগে!এ জীবনের আলো তুমি আর কুয়াশা হয়ে জমে থাকা ঘৃণাটা সে।ঘৃণা না, ভুল বলে ফেললাম অতি নগণ্য মানুষকে কখনো ঘৃনাও করা যায় না!-কথাটা বলেই হিজল বিকট শব্দে হেসে উঠল, তার চোখ মুখ জুড়ে তীব্র একটা তাচ্ছিল্য। থমথমে সময়টা এবার মনে হয় সে কাটিয়ে উঠেছে।
ধবধবে সাদা শাড়ি জুড়ে নানা রঙের গোলাপের বাহার, কপালে টিপ, গলায় সাদা মুক্তার মালা,-কি আশ্চার্য মেয়েটাকে এত দারুন লাগছে দেখতে।

হাসি থামিয়ে খুব স্বাভাবিক সুরে হিজল আবার বলতে শুরু করলো-আমি জানি আমার কথাগুলো তুমি বুঝতে পারোনি! অতীত হলো জীবনের এমন একটা ক্ষত যেখানে কখনোই ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়,বর্তমান যা প্রতিনিয়ত বদলানো যায় আর ভবিষ্যৎ হলো ভুল শুধরানের আর একটা সুযোগ।যেমন তোমার আমার গল্পটা।তার উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় তুমি পরর্বতী দুয়ে বাস করো আমার।
মাঝে মাঝে খুব অকারনেই আমি বিষণ্ণ হয়ে পড়ি, হারিয়ে যায় খানিকটা সময়ের জন্য বর্তমান থেকে।তুমি সবটা বুঝেও আমার মাথায় হাত রাখো,না বোঝার ভান করে জানতে চাও কারন, এটাই হলো তোমার ভালোবাসার উদারতা।
ছেড়া জুতা পরে মাইলের পর মাইল হাটা যাই হয়ত কিন্তু পায়ে ক্ষত বা অাঘাত নিয়ে কয়েক কদম হাটার পর আর তা সম্ভব হয় না।
ভালোবাসায় এমন একটা অধ্যায় আছে যেখানে অসম্মান বা বিশ্বাসহীনতার কোন জায়গা নেই।ভালোবাসার জন্য যেমন মানুষ সব করতে পারে তেমনি ঘৃণার জন্যও মানুষ সব করতে পারে।পাগলামি দুটোর মাঝেই কাজ করে!পরিপূর্ণ ভালোবাসায় একটা দিন বেচে থাকার আহ্লাদ প্রতারিত ভালোবাসার হাজার বছরের মুহূর্তো কে পায়ের কাছে মিশিয়ে দেয়!
কথা গুলো শেষ করেই হিজল তার হাতের কাচের চুড়ি গুলোর সাথে কেমন একটা মুগ্ধতার খেলায় মেতে উঠল।
কিছুদিন আগেও হিজল এত বছর পর সেই বির্বন সময়ের মুখোমুখি হয়েছিল।হিজল অনেক শক্ত স্বভাবের এটা যেমন সত্য তেমনি ভেতরে প্রবল শিশুসুলভ অভিমান কাজ করে।
হয়তো আমার আর তার গল্পে শুধু আমার ভালোবাসাটা রয়েছে কিন্তু তার মাঝে একটা গাঢ় মায়া রয়েছে।যা আমাকে আকড়ে ধরেছে।এই মায়াটা আমার প্রয়োজন ছিল আর হিজলের আবদার ছিলো এই ভালোবাসার।
৫ বছর আগেও বসন্ত ছিল,এই কয়েক বছরে অনেক বসন্ত গিয়েছে কিন্তু তখন আবৃতি হতো-“বসন্ত নয়, আমার দরজায় প্রথম কড়া নেড়েছিলো অবহেলা
ভেবেছিলাম, অনেকগুলো বর্ষা শেষে শরতের উষ্ণতা মিশে এলো বুঝি বসন্ত!
দরজা খুলে দেখি আমাকে ভালোবেসে এসেছে অবহেলা”।
কিন্তু আমাদের বসন্তের গল্পটা ভিন্ন।আসল গল্পটা হয়তো অন্যরকম হতে পারতো কিন্তু সময়ের কাছে বন্দী জীবন।জীবন বদলায় না, মানুষ বদলায় না,বদলে যায় সময়।একটা সঠিক সময়ের অপেক্ষার জন্য এক গুচ্ছ ভুল এসে জড়ো হয়!হয়তো হিজলকে যদি আগের সময়ে ফিরিয়ে নিয়ে যাই সে হয়তো আগের ভুলটাই আবার করবে আর এটাই জীবন,যা কিছুটা অনুভূতির আর বাকিটা উপলব্ধির বেড়াজালে পরাজিত বিজয়ী পথ!
থাকুক না ওর জীবনে একটা পাতা অসমাপ্ত! এটা আমি না হয় এড়িয়ে গেলাম।আমি জানতেও চাই না।কারণ সবটুকু জানা হয়ে গেলে মোহ হয়তো যদি কেটে যায়,যদি জানার আগ্রহ শেষ হয়ে যায়।আমি আজীবন চাই এই মোহটা বেচে থাকুক!
>>>সমাপ্ত<<<
