ময়মনসিংহ প্রতিনিধি ॥ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে কেন্দ্র করে নগরীর চরপাড়া এলাকায় ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে নামসর্বস্ব মানহীন দেড় শতাধিক বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এসব হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চিকিৎসা সেবার মান নিয়ে বরাবরই প্রশ্ন ছিল। সোমবার (২৭ জানুয়ারি) দুপুর থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত চরপাড়ায় র্যাব-১৪ এর ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে বিভিন্ন অনিয়মের দায়ে একটির অপারেশন থিয়েটার (ওটি) সিলগালাসহ সাত প্রতিষ্ঠানকে মোট ২৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
আভিযানিক দলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আক্তারুজ্জামান জানান, অপারেশন থিয়েটার এবং ল্যাবের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের জন্য পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে ০৬ লক্ষ টাকা, প্রান্ত স্পেশালাইজড হাসপাতালকে ৬ লক্ষ টাকা, মৈত্রী হাসপাতালকে সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা, মৈত্রী ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে ৫০ হাজার টাকা, রেডিয়াম হাসপাতালকে ৩ লক্ষ টাকা, মেমোরিয়াল হাসপাতালকে ২ লক্ষ টাকা এবং লিবার্টি হাসপাতালকে সাড়ে ৪ লক্ষ টাকা সহ সর্বমোট ২৫ লক্ষ ৫০ হাজার জরিমানা করেন। একই সঙ্গে আগামী এক মাসের মধ্যে সকল অনিয়ম দূর করার জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।’
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আক্তারুজ্জামান জানান, ‘বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ঠিক না থাকা, বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য রি-এজেন্টসহ অত্যাবশ্যকীয় জিনিসপত্র নির্ধারিত তাপমাত্রায় সংরক্ষণ না করা, কয়েকজন রোগী চিকিৎসাধীন থাকলেও কর্তব্যরত কোনো চিকিৎসক না থাকা, অপারেশন থিয়েটারে মরিচাযুক্ত কাঁচি ও ব্যবহৃত উপকরণসমূহে জীবাণুমুক্ত করার জন্য কোনো অটোক্লেভ মেশিন না থাকা, মেয়াদোত্তীর্ণ সিরিঞ্জ, ব্যবহৃত পুরনো ঔষধে ময়লার আস্তর, অপরিচ্ছন্ন বিছানার চাদর ও বালিশ থাকায় এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে জরিমানা করা হয়েছে।’
র্যাব-১৪, ময়মনসিংহ এর অধিনায়ক লে. কর্ণেল মোহাম্মদ এফতেখার উদ্দিন, উপ-অধিনায়ক মেজর শিবলী সাদিকের নেতৃত্বে একটি আভিযানিক দল নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আক্তারুজ্জামান, র্যাব সদর দপ্তর, কুর্মিটোলার উপস্থিতিতে সঙ্গীয় ফোর্সসহ ময়মনসিংহ নগরীর চরপাড়া এলাকায় বিভিন্ন হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে। এসময় ময়মনসিংহ সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার তৌফিক হাসান শাওন সঙ্গে ছিলেন।
ময়মনসিংহে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন পরিষদের আহবায়ক গণকণল্যাণ পরিষদ (জিকেপি) নির্বাহী পরিচালক, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ লায়ন ড. মোঃ সিরাজুল ইসলাম বলেন রোগ নির্ণয়ে ময়মনসিংহের বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক ডায়াগনোস্টিক সেন্টারগুলোই তো রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েছে। র্যারেব অভিযানে আবারো অসহায় রোগীদের আরো উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। যেন এসব অনিয়মগুলো দেখার কেউ নেই। তিনি আরো বলেন বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর অনিয়ম দেখার জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের পৃথক একটি বিভাগ থাকলে ভালো ফলাফল পেতাম আমরা। সরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকের মতো প্রাইভেট হেলথ কেয়ার সার্ভিসের জন্যও যদি একজন করে পরিচালক থাকতেন তাহলে এতো অনিয়ম হতে পারতো না। প্রতিটি বিভাগীয় পর্যায়ে একজন উপ-পরিচালক, সহকারী পরিচালক ও বেশ কয়েকজন মেডিক্যাল অফিসার দায়িত্ব নিলে সেখানে এতো অনিয়ম হতো না।
ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে কেন্দ্র করে ময়মনসিংহের চরপাড়াসহ নগরীতে দেড় শতাধিক বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়গনস্টিক সেন্টার রয়েছে। এসব হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনেস্টিক সেন্টারের চিকিৎসাসেবার মান নিয়ে নানা অভিযোগ রয়েছে। তা ছাড়া দালালদের দৌরাত্ম্যে গ্রাম থেকে আসা রোগীরা নানাভাবে প্রতারিত হয়ে আসছেন। মাঝে মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চললেও অবাধে নিয়মবহির্ভূতভাবে হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনেস্টিক সেন্টারগুলোর রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
উল্লেখ, রোগ নির্ণয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ রিএজেন্টসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে বিগত ২০১৬ সালের ১৯ ডিসেম্বর নগরীর চরপাড়া মোড় এলাকার ল্যাবএইড হাসপাতাল, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সেফওয়ে ডায়াগনস্টিক সেন্টার, প্রান্ত প্রাইভেট হাসপাতাল, পিউর ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও দু’টি ফার্মেসিকে বিভিন্ন অনিয়ম ও প্রতারণার অভিযোগে মোট ২১ লাখ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।