শ্যামলবাংলা ডেস্ক ॥ জমে উঠেছে নির্বাচনী প্রচার। দিন যতই ঘনিয়ে আসছে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা ততই ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন। প্রতিদিন ছুটছেন ভোটারদের কাছে। পাড়া-মহল্লা এখন ভোট উৎসবে জমজমাট। পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে সারা রাজধানী। মেয়র প্রার্থীরা তাদের নির্বাচনী এলাকার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে চলেছেন ভোটারদের দ্বারে। দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। বসে নেই কাউন্সিলর প্রার্থীরা। নিজ ওয়ার্ডে তারা সরগরম প্রচারে ব্যস্ত। হেঁটে ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন, আবার মাইকিং সাউন্ড রেকর্ডার ব্যবহার করে ভোটের প্রচার চালাচ্ছেন। পাড়া-মহল্লা এখন পোস্টারে ছেয়ে গেছে।
জানা যায়, গত ১০ জানুযারি থেকে নির্বাচনী প্রচার শুরু। নির্বাচনী আইন অনুযায়ী তারা ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত এই প্রচার চালাতে পারবেন। এরপর সব ধরনের প্রচার বন্ধ হয়ে যাবে। আইন অনুযায়ী নির্বাচনে ভোটগ্রহণের ৩২ ঘণ্টা আগ থেকে প্রচার চালাতে পারবেন না কোন প্রার্থী। সে অনুযায়ী আর মাত্র ১১ দিন নির্বাচনী প্রচারে মাঠে থাকবেন প্রার্থীরা। এই সুযোগকে যথোপযুক্ত কাজে লাগাতে প্রার্থীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন।
এদিকে ভোটের দিন যতই এগিয়ে আসছে ততই ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন প্রার্থীরা। বুধবার ঢাকা উত্তরে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম রাজধানীর ঢাকার ফার্মগেট এলাকা থেকে তার নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন। এ সময় তিনি ভোটারদের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, আমরা পরিকল্পিত নগরী গড়ে তুলতে চাই। নির্বাচিত হলে রাজধানী ঢাকাকে যানজট মুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হবে বলেও প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
এদিকে উত্তরে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল উত্তর বাড্ডার বেরাইদ এলাকা থেকে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন। ওইসময় তিনি বলেন, ৩০ জানুয়ারি পরীক্ষার দিন। এদিন পরীক্ষায় জয়ী হতেই হবে। এজন্য নেতাকর্মীদের মনোবল ধরে রাখার আহ্বান জানান। বলেন, যত সমস্যাই আসুক, মোকাবেলা করে জয়ী হতে হবে। উত্তরে সিপিবির মেয়র প্রার্থী ডাঃ আহাম্মদ সাজেদুল হক (রুবেল) এদিন পূরবী সিনেমা হলের সামনে থেকে শুরু করে মিরপুর সাড়ে এগারো বাসস্ট্যান্ড, কালসী, মিরপুর ১২ নম্বর, সিরামিক ফ্যাক্টরির মোড়, পল্লবী, কালাপানি এলাকায় গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করেন। এ সময় তিনি বলেন, ধনী আর গরিবের জন্য দুই ঢাকা নীতি আর চলবে না, শ্রমজীবী মানুষের নাগরিক হিস্যা বুঝে নিতে কাস্তে মার্কায় ভোট দিন।
এদিকে ঢাকা দক্ষিণের প্রার্থীরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ছুটেছেন ভোটারদের কাছে। এই সিটির আওয়ামী লীগের প্রার্থী ফজলে নূর তাপস রাজধনীর শ্যামপুর এলাকা থেকে তার নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন। এ সময় তিনি বলেন, একটা উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচনের আমেজ বিরাজ করছে। আশা করি সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনটা সম্পন্ন হবে। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক উৎসবমুখর পরিবেশ বজায় থাকবে। বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন ধানম-ি এলাকায় নির্বাচনী জনসংযোগকালে বলেন, মেয়র নির্বাচিত হলে একটি বাসযোগ্য নগরী গড়ে তোলার লক্ষ্যে যত পদক্ষেপ নেয়া দরকার প্রথমেই তা নেয়া হবে।
অপরদিকে, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হাজি সাইফুদ্দিন মিলনও নির্বাচনী প্রচারে সরব হয়ে পড়েছেন। মঙ্গলবার থেকে তিনি প্রথম নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন। বুধবারও বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনী প্রচার চালান। এদিন তিনি নিউমার্কেট কাঁচাবাজার, জিগাতলা, কলাবাগান, এলিফ্যান্ট রোড, কাঁটাবন ও উর্দু রোডে নিজের জন্য লাঙ্গল মার্কায় ভোট চেয়ে গণসংযোগ করেন। বলেন, মেয়র নির্বাচিত হলে ঢাকা শহরকে নিরাপদ ও বাসযোগ্য হিসেবে গড়ে তুলবেন। বায়ুদূষণ থেকে নগরবাসীকে মুক্ত করবেন।
আতিকের প্রচার :
অন্যদিনের মতো বুধবার উত্তরে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মোঃ আতিকুল ইসলাম নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন। ফার্মগেট আল-রাজী হাসপাতালের সামনে সংক্ষিপ্ত পথ সভায় বলেন, একটি পরিকল্পিত শহর গড়ে তুলতে চাই। ঢাকাকে যানজটমুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হবে। এখান থেকে নির্বাচনী প্রচার শুরু করে তিনি ২৩, ২৪, ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের হলিক্রস স্কুল গলি, ছাপড়া মসজিদ, তেজকুনিপাড়া, লুকাসের মোড়, রেলগেট, নাবিস্কো, বেগুনবাড়ি ও তেজগাঁও এলাকায় নির্বাচনী গণসংযোগ করেন।
সকাল ১০টা থেকে আল-রাজী হাসপাতালের সামনে পিকআপ ভ্যানে সাউন্ডবক্সে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ‘থিম সং’ বাজতে থাকে। দলীয় নেতা-কর্মীরা স্লোগান দিতে থাকেন বিরতিহীনভাবে। আর নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে আসা ফার্মগেট ও তেজগাঁও এলাকার আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মী, অভিনেতা-অভিনেত্রী, খেলোয়াড়দের পদচারণায় মুখরিত হয়ে পড়ে গোটা এলাকা। এ সময় তিনি আরও বলেন, সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সুন্দর ঢাকা শহর গড়ে তুলব। এই শহরের জলাবদ্ধতা আরেকটি চ্যালেঞ্জ। জলাবদ্ধতা নিরসনে ইতোমধ্যে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা নিরসন করতে পারব। গত নয় মাসে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। এই কঠোর অনুশীলনের পর ভবিষ্যতে তা ভালভাবে প্রয়োগ করতে পারব। ফার্মগেট-কুনিপাড়া এলাকার এই প্রচার সমাবেশে অংশ নেন অভিনেতা রিয়াজ, অভিনেত্রী বাঁধন, টেনিস তারকা জোবেরা রহমান নিলু, সাবেক মন্ত্রী তারানা হালিম, ফুটবলার কায়সার হামিদসহ আরও কয়েকজন সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব।
তাবিথের প্রচার :
বুধবার বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল উত্তর বাড্ডার বেরাইদ এলাকায় তার নির্বাচনী প্রচার চালান। উত্তর বাড্ডার পর সাঁতারকুল, মেরাদিয়া, জোয়ারসাহারা এলাকায় গণসংযোগ করেছেন। গণসংযোগে বিএনপির কয়েকশ নেতাকর্মী, সমর্থক খালেদা জিয়া ও ধানের শীর্ষের পক্ষে সেøাগান দিয়ে মিছিল করেন। তারা প্রার্থীর প্রচারপত্র বিলি করেন।
নির্বাচনী প্রচারে নেমে তাবিথ আউয়াল বলেন, আসন্ন নির্বাচনে জয়ী হতেই হবে। ৩০ জানুয়ারি একটি পরীক্ষার দিন। এই পরীক্ষায় জয়ী হতেই হবে। তিনি নেতাকর্মীদের মনোবল ধরে রাখারও আহ্বান জানিয়ে বলেন ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। মনোবল ভাঙ্গা যাবে না। যত সমস্যাই আসুক, তা মোকাবেলা করে বিজয়ী হতে হবে। এ সময় তিনি নির্বাচনী প্রচারে বাধা দেয়ার অভিযোগ করে বলেন, আগে পোস্টার ছেঁড়া হতো। এখন মাইক নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। নির্বাচনের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরিতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ১২ দিন বাকি আছে। প্রতিটি দিন যেন সবাই সুস্থভাবে প্রচার চালাতে পারেন।
তাপসের প্রচার:
বুধবার রাজধানীর কদমতলী শ্যামপুর এলাকায় নিজের নির্বাচনী জনসংযোগ করেন দক্ষিণে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস। এ সময় তিনি বলেন, ঢাকার উন্নয়নে তিনি যে রূপরেখা দিয়েছেন তা ভোটাররা সাদরে গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন, গত পাঁচদিন ঢাকাবাসীর কাছ থেকে স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া পেয়েছি। তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রচারে অংশ নিচ্ছেন এবং আমাদের অনেক ভালবাসা দিয়ে আলিঙ্গন করে নিচ্ছেন। আমি বিশ্বাস করি, ৩০ জানুয়ারি বিপুল ভোটে নৌকার বিজয় হবে। আমরা ঢাকাবাসীর প্রত্যাশা পূরণে দায়িত্ব পাওয়ার প্রথম দিন থেকে কাজ আরম্ভ করব এবং উন্নত ঢাকা গড়ে তুলব।
ওইসময় তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের সরস্বতী পূজা এবং সিটি ভোট একদিনে হওয়ায় হিন্দু ভোটারদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চারের প্রেক্ষাপটে তাদের প্রতি সহমর্মিতা জানান। বলেন, পঞ্জিকা অনুযায়ী হয়তো একটু ভুল হয়ে গেছে। তাদের প্রতি সহমর্মিতা রয়েছে। কিন্তু এখন যেহেতু নির্বাচনের তারিখ নির্ধারিত হয়েছে, সেহেতু নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে যেতে হবে। আমি আশা করি সবাই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোফাজ্জেল হোসেন চৌধুরী মায়া, সানজিদা খানম, স্বেচ্ছাসেবক লীগ দক্ষিণের সভাপতি কামরুল হাসান রিপন এসময় তাপসের সঙ্গে ছিলেন।
ইশরাকের প্রচার :
দক্ষিণে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন এদিন ধানম-িতে অবস্থিত বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে থেকে নির্বাচনী প্রচার ও গণসংযোগ শুরু করেন। বলেন, মেয়র নির্বাচিত হলে একটি বাসযোগ্য নগরী গড়ে তোলার লক্ষ্যে যত পদক্ষেপ নেয়া দরকার প্রথমেই নেয়া হবে। সরস্বতী পূজার কারণে ভোটের তারিখ পেছানোর দাবি জানিয়ে বলেন, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা উচিত। আমরা মুসলমান, আমাদের ঈদের দিন যদি ভোটগ্রহণ হতো তাহলে আমরাও চাইতাম ভোট পেছানো হোক। তাই আমি মনে করি অবশ্যই ভোট পেছানো উচিত। এদিন ইশরাকের নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, প্রকাশনা সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, যুবদল নেতা মোরতাজুল করিম, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ইশরাকের ছোট ভাই ইশফাক হোসেন প্রমুখ।
মিলনের প্রচার:
দক্ষিণে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী হাজী সাইফুদ্দিন মিলন। তিনি গত মঙ্গলবার খেকে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছেন। বুধবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ভোট প্রার্থনা করেন। বলেন, জনগণের ভোটে মেয়র নির্বাচিত হলে ঢাকা শহরকে নিরাপদ ও বাসযোগ্য হিসেবে গড়ে তুলব। বায়ুদূষণ থেকে নগরবাসীকে মুক্ত করব। পাশাপাশি মা-বোনরা যাতে নিরাপদে চলাফেরা করতে পারে তা নিশ্চিত করা হবে। বুধবার নিউমার্কেট কাঁচাবাজার, জিগাতলা, কলাবাগান, এলিফ্যান্ট রোড, কাঁটাবন ও উর্দু রোডে নিজের জন্য লাঙ্গল মার্কায় ভোট চেয়ে গণসংযোগকালে ভোটারদের মাঝে তিনি এসব কথা বলেন। গণসংযোগকালে তিনি ৩টি পথসভায়ও করেন।