শ্যামলবাংলা ডেস্ক ॥ জনপ্রিয়তায় আরও এক ধাপ এগিয়েছে বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। ২০১৮ সালের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে সরকারের প্রতি জনসমর্থন বেড়েছে ১৯ ভাগ। বাংলাদেশ সঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছে বলে মত দিয়েছেন ৭৬ ভাগ নাগরিক। আর দেশের ৮৩ ভাগ নাগরিক সরকারের কার্যক্রমকে সমর্থন করছেন। ওয়াশিংটনভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) পরিচালিত এক জরিপে ওই তথ্য উঠে এসেছে। তবে জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ১৯ ভাগ নাগরিক মনে করছেন দুর্নীতির কারণে দেশের সার্বিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
রেডস্টোন সাইন্টিফিকের তত্ত্বাবধায়নে আইআরআই ২০১৯ সালের ১ আগস্ট থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ওই জরিপ পরিচালনা করে। দেশের ৮ বিভাগের ৬৪ জেলায় ‘মাল্টি স্টেজ স্টার্টিফাইড প্রবাবিলিটি’ নমুনায়নের মাধ্যমে ব্যক্তি পর্যায়ে যোগাযোগ করে ওই পরিসংখ্যান সম্পন্ন করা হয়। তাদের সর্বশেষ জরিপ প্রকাশ করা হয়েছিল ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে।নতুন জরিপের তথ্য তুলে ধরে আইআরআই জানিয়েছে, দেশে তুমুল জনপ্রিয়তায় রয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। জরিপের তথ্যমতে, ৩৬ ভাগ নাগরিকবিরোধী দলের কার্যক্রমকে সমর্থন করছে, যা ২০১৮ সালে ছিল ৪২ ভাগ। বিরোধী দলের কার্যক্রমের প্রতি সমর্থন কমলেও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু খাতে জনসমর্থন বেড়েছে। এর মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রমকে সমর্থন করছে ৯০ ভাগ নাগরিক, বিদ্যুত ও জ্বালানি উন্নয়ন কার্যক্রমের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন ৮৬ ভাগ নাগরিক এবং যোগাযোগ কাঠামো উন্নয়নে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন ৮১ ভাগ নাগরিক।
এ ছাড়া পরিষ্কার পানি সরবরাহে ৭৭ ভাগ, সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় ৭৬ ভাগ, স্বাস্থ্য খাতে ৭৪ ভাগ এবং দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্র ৭১ ভাগ নাগরিক সরকারী কার্যক্রমকে সমর্থন জানিয়েছেন। জরিপে অধিকাংশ মানুষ নিজ এলাকার সংসদ সদস্যর প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। ৭৬ ভাগ নাগরিক মনে করেন, তার এলাকার সংসদ সদস্য ভাল কাজ করছেন।
আইআরআই জানায়, ৭৬ ভাগ নাগরিক বাংলাদেশ সঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছে বলে মত প্রকাশ করেছেন। ২০১৮ সালে ৬২ ভাগ মানুষ দেশের অগ্রযাত্রায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেও বর্তমানে তা বেড়েছে প্রায় ১৪ ভাগ। দেশ যে সকল খাতে সঠিক পথে রয়েছে বলে মনে করছেন নাগরিকেরা তার মধ্যে শিক্ষায় সাত ভাগ, জীবনমান উন্নয়নে ১০ ভাগ, যোগাযোগ কাঠামো উন্নয়নে ১১ ভাগ, অর্থনৈতিক উন্নয়নে ১৬ ভাগ এবং দেশের সার্বিক উন্নয়নে ২২ ভাগ। দেশের অধিকাংশ মানুষ সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা, নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। পরিসংখ্যান অনুসারে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে সন্তুষ্ট ৫৯ ভাগ নাগরিক যা পূর্বের জরিপে ছিল ৪৮ ভাগ। অর্থনৈতিক উন্নয়নে সন্তুষ্ট দেশের ৭৬ ভাগ নাগরিক। ৭২ ভাগ নাগরিক সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন নিরাপত্তা বিষয়ে।
৪৩ ভাগ নাগরিক মনে করছে চলতি বছর রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় আরও উন্নতি হবে। ৫৪ ভাগ নাগরিক মনে করে অর্থনৈতিকভাবে আরও উন্নতি করবে বাংলাদেশ। নিরাপত্তা বিষয়ে উন্নতি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ৪৯ ভাগ নাগরিক। শুধু দেশের নয়। ব্যক্তি পর্যায়ে উন্নয়নেও দারুণ আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অধিকাংশ নাগরিক। ৬০ ভাগ নাগরিক মনে করছেন চলতি বছরে তাদের ব্যক্তিগত অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে। গত বছর ৪৯ ভাগ নাগরিক ব্যক্তিগত অর্থনৈতিক উন্নয়নে আশাবাদী ছিলেন।
দুর্নীতিকে দেশের সবচাইতে বড় সমস্যা হিসেবে মনে করা হচ্ছে। ১৯ ভাগ নাগরিক মনে করছেন, দুর্নীতির কারণে দেশের সার্বিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। মাদকদ্রব্যের ব্যবহারকে হুমকি হিসেবে মনে করছেন ১৭ ভাগ নাগরিক। এ ছাড়াও বেকারত্ব ও নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন ১০ ভাগ ও ৭ ভাগ নাগরিক। অন্যদিকে দুর্নীতিকে সবচাইতে বড় সমস্যা হিসেবে মত প্রকাশ করলেও গত বছর সরকারি কর্মকর্তাকে ঘুষ, উপহার বা কিছু প্রদান করেছেন কিনা জানতে চাইলে ৭১ ভাগ নাগরিক জানায়, তারা কোন ঘুষ বা উপহার প্রদান করেননি।
এদিকে আয় বৈষম্যকে নাগরিক দুশ্চিন্তার আরেকটি বড় কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে। ৬১ ভাগ মানুষ মনে করেন ধনী-গরিবের বৈষম্য বাড়ছে। ২০১৮ সালের তুলনায় ওই বিষয়ে নিজেদের দুশ্চিন্তার কথা জানিয়েছিলেন ৫৮ ভাগ নাগরিক।